তাঁকে বলা হয় ‘মাদক সম্রাট’। আন্তর্জাতিক মাদকচক্রে তাঁর রমরমা ছিল। শুধু মাদক কারবারই নয়। একের পর এক হত্যাকাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। নিজের হাতেই নাকি প্রায় ৩ হাজার জনকে খুন করেছেন। বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছেন। তিনি জোয়াকিন গুজ়ম্যান। তাঁকে অবশ্য সকলে চেনেন ‘এল চ্যাপো’ নামেই।
১৯৫৭ সালের ৪ এপ্রিল মেক্সিকোর সিনালোয়ায় এক গরিব পরিবারে জন্ম এল চ্যাপোর।
আর ৪-৫ জন সাধারণ শিশুর মতো শৈশব কাটেনি। ছোট থেকেই বাবার হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। বাবার হাত ধরেই পা রাখেন মাদক দুনিয়ায়।
সেই শুরু। তার পর ধীরে ধীরে মাদক কারবারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যান এল চ্যাপো। ধীরে ধীরে মাদক কারবারের ‘কিংপিন’ হয়ে ওঠেন তিনি।
নিজের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন এল চ্যাপো। যার নাম ‘সিনালোয়া কার্টেল’। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের সিন্ডিকেট। মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই সংগঠন।
১৯৯৩ সালে প্রথম বার এল চ্যাপোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গুয়াতেমালা থেকে পাকড়াও করা হয়েছিল। পরে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা হয় মেক্সিকোয়।
সে বার মাদক পাচার এবং খুনের অভিযোগে এল চ্যাপোকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজার নির্দেশ দেয় আদালত।
কারাগারে থাকার সময়ই মাঝপথে পালান এল চ্যাপো। কারারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে বশ করেন। ২০০১ সালে কারাগার থেকে পালান তিনি। এর পর তাঁকে পলাতক হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
২০১৪ সালে এল চ্যাপোকে আবার গ্রেফতার করা হয়। সে বার তাঁকে মেক্সিকো থেকে পাকড়াও করা হয়। ২০১৫ সালে সাজা ঘোষণার আগে আবার পালান তিনি।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এল চ্যাপোকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এক বছর বাদে আমেরিকায় তাঁকে প্রত্যর্পণ করা হয় তাঁকে।
২০১৯ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয় এল চ্যাপোকে।
তবে গ্রেফতারের পর এল চ্যাপোর জবাববন্দি শুনে শিউরে উঠেছিলেন তদন্তকারীরা। তিনি জানিয়েছিলেন, নিজে হাতে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মানুষকে খুন করেছিলেন।
আমেরিকা এবং মেক্সিকোর তদন্তকারীদের ধারণা, ৭০ হাজার মানুষকে খুনের নেপথ্যে হাত রয়েছে চ্যাপোর সংগঠনের।
২০০৮ সালে এল চ্যাপোর পুত্র এল চ্যাপিটোকে হত্যা করা হয়েছিল। শোনা যায়, যার বদলা নিতে কমপক্ষে ৪০০ জনকে খুন করেন এল চ্যাপো। নিহতদের মধ্যে ছিলেন কমপক্ষে ২০ জন তদন্তকারী।
এল চ্যাপোর ব্যক্তিজীবনও নানা খাতে বয়েছে। ৪ বার বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাঁর সন্তানের সংখ্যা কমপক্ষে ১১। তবে বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সি এই কুখ্যাত মাদক মাফিয়া কারাবন্দি।