‘চাঁদনি বার’, ‘পেজ ৩’, ‘কর্পোরেট’, ‘ফ্যাশন’, ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’র মতো ছবি পরিচালনা করে বলিপাড়ার প্রথম সারির ছবিনির্মাতাদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন মধুর ভান্ডরকর। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এক মডেল ধর্ষণের অভিযোগ আনলে তা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন পরিচালক।
২০০৪ সালে মুম্বইয়ের এক মডেল প্রীতি জৈন দাবি করেন যে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মধুর তাঁকে একাধিক বার যৌন হেনস্থা করেছেন।
প্রীতির অভিযোগ, হিন্দি ছবিতে কাজ জুটিয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মডেলকে ধর্ষণ করতেন মধুর। শুধু তাই নয়, প্রীতির দাবি, মধুর তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
২০০৪ সালের জুলাই মাসে প্রীতি দাবি করেন যে, মধুর যে তাঁর সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। তাঁর কাছে প্রমাণও রয়েছে বলে দাবি করেন প্রীতি। কিন্তু পরে ঘটনাপ্রবাহ ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে।
প্রীতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা শুরু হয়। অভিযোগ, প্রীতি নাকি মধুরকে খুনের উদ্দেশ্যেমুম্বইয়ের অন্ধকারজগতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গ্যাংস্টার অরুণ গাওলির দলের লোক ছিলেন নরেশ পরদেশি। সেই নরেশকে নাকি মধুরকে খুনের সুপারি দিয়েছিলেন প্রীতি।
অভিযোগ, অগ্রিম হিসাবে ৭৫ হাজার টাকা নরেশকে দিয়েছিলেন প্রীতি। কিন্তু মধুরকে হত্যার পরিকল্পনা সফল না হলে সেই টাকা ফেরত চান প্রীতি।
টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বার বার নরেশকে জোর করতে থাকেন প্রীতি। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অরুণের দলের এক সদস্য থানায় গিয়ে মুম্বই পুলিশের কাছে প্রীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রীতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রীতিকে তিন বছর হাজতবাসের সাজা দেয় আদালত।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, প্রীতির সঙ্গে নাম জড়ানোর পর মধুরের কেরিয়ারে প্রভাব পড়ে। যে ধরনের ছবি পরিচালনা করে তিনি হাত পাকিয়েছিলেন সে ধরনের ছবি আর তৈরি করতে পারছিলেন না তিনি। মধুরের কেরিয়ারের রেখচিত্র ক্রমে নিম্নমুখী হতে শুরু করে।
শুধু তা-ই নয়, বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, বচ্চন পরিবারের সঙ্গে মধুরের সম্পর্ক ভাল নয় বলেও বলিউডে নিজের কেরিয়ার গড়তে ব্যর্থ হন পরিচালক।
২০১২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হিরোইন’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন করিনা কপূর খান এবং অর্জুন রামপাল। তবে এই ছবির নায়িকা হিসাবে মধুরের প্রথম পছন্দ ছিলেন বচ্চন পরিবারের পুত্রবধূ ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন।
‘হিরোইন’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান ঐশ্বর্যা। কিন্তু শুটিং শুরুর ঠিক আগে মধুর জানতে পারেন যে ঐশ্বর্যা অন্তঃসত্ত্বা। সে কথা পরিচালকের কাছে নাকি গোপন করেন অভিনেত্রী।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ‘হিরোইন’ ছবির শুটিং করা ঐশ্বর্যার পক্ষে সহজ হবে না ভেবে ঐশ্বর্যাকে ছবি থেকে বাদ দেন মধুর। পরে করিনাকে প্রস্তাব দিলে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন অভিনেত্রী।
‘হিরোইন’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তা দর্শকের প্রশংসা কুড়োয়। পেশাগত দিক দিয়ে ‘হিরোইন’ ছবিটি মধুরের জীবনে সাফল্য এনে দিলেও বলিপাড়ার একাংশের অনুমান ঐশ্বর্যাকে ছবি থেকে বাদ দিয়ে বচ্চন পরিবারের রোষে পড়েন মধুর।
‘হিরোইন’-এর পর ‘ক্যালেন্ডার গার্লস’, ‘ইন্দু সরকার’-এর মতো হিন্দি ছবি পরিচালনা করেন মধুর। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি।
২০২১ সালে ‘অভিযাত্রিক’ নামের একটি বাংলা ছবির সহ-প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হন মধুর। তার পর বড় পর্দা ছেড়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন পরিচালক।
২০২২ সালে মধুরের পরিচালনায় ‘ইন্ডিয়া লকডাউন’ এবং ‘বাবলি বাউন্সার’ নামে দু’টি ছবি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায়।
চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সার্কিট’ নামে একটি মরাঠি ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে দেখা যায় মধুরকে। তবে মধুরের কেরিয়ারের গ্রাফ যে গতিতে উপরের দিকে উঠছিল, প্রীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়া এবং বচ্চন পরিবারের রোষে পড়ার কারণে সে গতিতেই নীচের দিকে নেমেছে বলে বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি।