বিমান দুর্ঘটনায় একজন যাত্রী বেঁচে গিয়েছিলেন। কপাল জোরেই সম্ভবত। কারণ তাঁর ঠিক সামনের আসনে বসা বিমানচালক এবং সহ-চালকের শরীর ঝলসে গিয়েছিল আগুনে।
সারা শরীরে জখম নিয়ে ওই যাত্রীও জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তবে ২৪ ঘণ্টা পর তাঁর জ্ঞান ফেরে বিমানের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
৩৬ বছর বয়সের পাভেল ক্রিভোশ্যাপকিন পেশায় রুপোর খনির শ্রমিক। ছোট একটি বিমান নিয়ে তিনি পাহাড়ের প্রত্যন্ত একটি রুপোর খনিতে যাচ্ছিলেন শ্রমিকদের খাবারদাবার পৌঁছে দিতে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এএন-২ বিমানের তিনিই ছিলেন একমাত্র যাত্রী।
এএন-২ বিমানটি ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই যোগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল র্যাডার থেকে। খারাপ আবহাওয়া এবং কুয়াশায় পথ ভুলে সেটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে। ভেঙে পড়ে সাইবেরিয়ার গভীর জঙ্গলে।
গত ২০ জুন ঘটনাটি ঘটে রাশিয়ার শীতলতম এলাকা সাইবেরিয়ার ইয়াকুটিয়া এলাকায়। শুক্রবার, ২০২২ সালের ১ জুলাই, বিমান দুর্ঘটনার দশ দিন পর তাঁকে ওই জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা।
যদিও জখম শরীর, পাঁজরের বেশ কয়েকটি ভাঙা হাড় এবং শরীরের অন্য আঘাত নিয়ে পাভেল ওই জঙ্গলে কী ভাবে ১০ দিন বেঁচে রইলেন, তা ভেবে অবাকই হয়েছেন তাঁর উদ্ধারকারীরা।
উদ্ধারকারীদের বিস্মিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। সাইবেরিয়ার ওই জঙ্গল নাকি, নেকড়েবাঘ আর কালো ভল্লুকের আস্তানা। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, এদের হাত থেকে যদি কোনও মতে বেঁচেও থাকেন পাভেল, তবে দশ দিন জল আর খাবার ছাড়া থাকলেন কী ভাবে?
হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পাভেল। আর তিনি যা বলেছেন, তা দিয়ে একটি গল্প লিখে ফেলা যায়।
পাভেল বলেছেন, তাঁর জ্ঞান যখন ফেরে তখন চারপাশে শুধু ধোঁয়া দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। ভাঙা প্লেনের ভিতরেই ছিল তাঁর শরীরটা। বিমানের কিছু অংশে তখনও আগুন জ্বলছিল।
বিমান থেকে বাইরে বেরতে দরজার তালা ভাঙতে হয়েছিল পাভেলকে। বাইরে বেরিয়েও তিন ঘণ্টা ওই ভাঙা বিমানের পাশেই বসে থাকেন তিনি। তার পর কাছে একটি নদীর পাড়ে নেমে আসেন। আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটান।
সকালে সেই নদীর ধারেই একটি পায়ে চলা রাস্তা নজরে পড়ে পাভেলের। পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন। এই ধরনের রাস্তা চিনতেন পাভেল। হরিণ চরাতে এসে রাখালদের পায়ে হাঁটা পথেই এমন রাস্তা তৈরি হয়। পাভেল আন্দাজ করেন, রাস্তা থাকলে আশ্রয়ও থাকবে। যে খানে হরিণ চরানোর ফাঁকে রাখালেরা বিশ্রাম নেন।
একটু খোঁজাখুঁজির পর একটি কুঁড়েঘরও চোখে পড়ে। পরবর্তী দশ দিনের জন্য ওই কুঁড়েটিই হয়ে ওঠে পাভেলের আশ্রয়। পাভেল জানিয়েছেন, ছোট্ট কুঁড়ে ঘরের ভিতরে ছিল ন্যুডলের অনেক প্যাকেট। দশ দিনে যখনই খিদে পেয়েছে ওই ন্যুডল খেয়ে পেট ভরিয়েছেন পাভেল।
পাভেল জানিয়েছেন সারা শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর খাবার ইচ্ছে একেবারেই ছিল না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এমন প্রচণ্ড খিদে চাগাড় দিত যে, তিনি না খেয়ে থাকতে পারতেন না।
তবে শরীর যত দুর্বলই হোক প্রত্যেকদিন নিজেকে ওই কুঁড়ে ঘর থেকে টেনে বের করতেন পাভেল একটি ছেঁড়া কাপড়কে পতাকা বানিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতেন। যদি কেউ উদ্ধার করতে আসে, তবে তাঁকে দেখতে পাবে।
অবশেষে দশ দিনের অপেক্ষা শেষ হয় ১ জুলাই। বিমানটির খোঁজে তল্লাশির পরিধি বাড়িয়েছিলেন তল্লাশকারীরা। সেই অভিযানেই পাভেলকে উদ্ধার করাহয়। আপাতত তিনি হাসপাতালে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।