২০২২ সাল বাংলাদেশবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো বছর। গত জুন মাসেই উদ্বোধন করা হয়েছিল ও পার বাংলার গর্বের পদ্মা সেতুর। সাত মাসের মধ্যে এ বার ছুটবে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রো। আগামী ২৮ ডিসেম্বর সে দেশে প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়গুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ২৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মেট্রো রেল পরিষেবার উদ্বোধন করবেন হাসিনা।
ঢাকার উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিমি পর্যন্ত মেট্রোর রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। তবে আপাতত উদ্বোধন করা হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের। যা দৈর্ঘ্যে ১১.৭৩ কিমি।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে মোট ৯টি মেট্রো স্টেশন রয়েছে। এগুলি হল উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মীরপুর ১১, মীরপুর ১০, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলপথে রয়েছে ৭টি স্টেশন। এগুলি হল, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।
মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা আগামী বছরের শেষ দিকে চালু করার কথা রয়েছে। এর পরও মেট্রো পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হবে কমলাপুর পর্যন্ত। এ জন্য আরও ১.৬ কিমি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিষেবা শুরু হতে পারে ২০২৫ সালে।
বাংলাদেশ মেট্রোয় ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ১০০ কিমি। প্রথম দিকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে এই সময় কমানো হবে ১৬-১৭ মিনিটে।
মেট্রো রেল পরিষেবায় শুরুর দিকে ট্রেনের সংখ্যা কম থাকবে। সকাল ও বিকালে কিছু সময়ের জন্য চালানো হবে মেট্রো। প্রথমে ৫টি মেট্রো চালানো হবে।
উদ্বোধনের দু’তিন মাসের মধ্যে সমস্ত যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো হবে। পরের দিকে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
মেট্রো পরিষেবার প্রথম দিকে সব স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে না। উত্তরা উত্তর থেকে মেট্রো ছাড়ার পর তা থামবে পল্লবী স্টেশনে। এর পর থামবে আগারগাঁও স্টেশনে। পরিষেবা শুরুর কয়েক দিন পর সব স্টেশনে মেট্রো দাঁড়বে।
বাংলাদেশ মেট্রোয় সর্বনিম্ন ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা।
প্রথম পর্যায়ে মেট্রো চলবে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোর ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা মধ্য ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে পল্লবী ও মীরপুর ১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা। মীরপুর ১০ ও কাজিপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৫০ টাকা।
প্রতিটি মেট্রো স্টেশনে থাকছে লিফ্ট ও চলমান সিঁড়ি। তিন তলা স্টেশন ভবনে দ্বিতীয় তলায় থাকবে প্রশাসনিক ভবন। সেখানে টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে। তিন তলায় থাকবে প্ল্যাটফর্ম।
জাপানের প্রযুক্তিকৌশলী ও বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় সেজে উঠছে ঢাকা মেট্রো। মেট্রো রেল পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে নোঙর করে একটি জাহাজ। ওই জাহাজে করেই জাপান থেকে পাঠানোর মেট্রোর কোচ ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আনা হয়েছে।
আপাতত ঢাকা মেট্রো চালানোর দায়িত্বে থাকছেন জাপানের চালকরাই। তাঁরা মেট্রো রেল চালানোর বিষয়ে বাংলাদেশের চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছেন। এই প্রশিক্ষণ শেষ হলেই সে দেশের চালকদের নিয়ন্ত্রণে গড়াতে শুরু করবে মেট্রোর চাকা।
ঢাকা মেট্রো রেলের পরিচালক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে। প্রতিটি স্টেশনে থাকা মেশিনেও কার্ড রিচার্জ করা যাবে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি বা লিফ্টের একেবারে কাছেই নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখতে পারবেন যাত্রীরা। ঢাকা মেট্রোর ৪টি স্টেশনে বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যার নাম ‘স্টেশন প্লাজা’।
২০১২ সালে বাংলাদেশে মেট্রো রেল প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রো রেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আপাতত আর কয়েক দিন বাদেই প্রথম ধাপে ও পার বাংলায় দৌড়বে মেট্রো। নতুন বছরের মুখে নতুন উপহার বাংলাদেশবাসীর জন্য।