মদ প্রস্তুতকারক সংস্থার হাত ধরে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। ২২ বছর বয়সেই একটি নামী লিকার সংস্থার ডিরেক্টর। প্রথম ভারতীয় হিসাবে ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে উত্তরণ ঘটেছিল তাঁর। তার পর কখনওই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। লিকার দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তাঁর। তিনি ভিট্টল মাল্য।
সুরা ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভ করেছিলেন ভিট্টল। এই ব্যবসায় এককালে তিনিই ছিলেন ‘রাজা’। তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। পলাতক ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যের বাবা তিনি।
১৯২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম ভিট্টলের। দক্ষিণ ভারতের ম্যাঙ্গালুরুতে থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা বাঁতওয়াল গণপতি মাল্য ছিলেন সেনা আধিকারিক।
সেই সূত্রেই দেহরাদূনে দ্য দুন স্কুলে শুরু হয়েছিল ভিট্টলের পড়াশোনা। ছাত্র হিসাবে বরাবরই মেধাবী ছিলেন ভিট্টল। স্কুলজীবনে একাধিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি।
ভিট্টলের কলকাতা-যোগও রয়েছে। স্কুলজীবন শেষের পর কলকাতার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজে (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন তিনি।
সেই সময় কর্মসূত্রে ভিট্টলের বাবা কলকাতায় ছিলেন। সে কারণেই কলকাতায় কলেজ জীবন শুরু হয় ভিট্টলের।
কলেজের পাঠ শেষের পর দু’বছর বিদেশে ছিলেন ভিট্টল। ইউরোপ ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই তাঁর বিদেশ সফর। ওই সময় স্প্যানিশ শিখেছিলেন তিনি।
সাল ১৯৪৬-৪৭। একটি নামী মদ প্রস্তুতকারক সংস্থার শেয়ার অধিগ্রহণ শুরু করেন ভিট্টল। ১৯৪৭ সালে ওই সংস্থার প্রথম ভারতীয় ডিরেক্টর হন তিনি। তখন তাঁর বয়স ২২। সেই শুরু সাফল্যের।
ডিরেক্টর হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৫১ সালে আরও একটি সংস্থা অধিগ্রহণ করেন ভিট্টল।
১৯৫২ সালে বেঙ্গালুরুতে চলে যান ভিট্টল। সেই সময় ছোট ছোট মদ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে অধিগ্রহণ করতে থাকেন তিনি। কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, বিহারে নতুন সংস্থা তৈরি করা হয়।
ষাটের দশকের শুরুতে কলকাতায় ফেরেন এই লিকার ব্যারন। সেই সময় বেশ কয়েকটি সংস্থা অধিগ্রহণ করে ফেলেছেন তিনি।
শুধুমাত্র লিকার ব্যবস্যায় নিজেকে বেঁধে রাখেননি ভিট্টল। একটি নামী চকোলেট প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং একটি রং প্রস্তুতকারক সংস্থারও চেয়ারম্যান ছিলেন এই ব্যবসায়ী।
১৯৮১ সালে ১০টি লিকার সংস্থা, সাতটি প্রক্রিয়াজাত খাবারের সংস্থা-সহ বেশ কিছু সংস্থা তাঁর হাতে ছিল।
তিন বার বিয়ে করেন ভিট্টল। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ললিতা রামাইয়া। তাঁদের এক সন্তান রয়েছে। তাঁর নাম বিজয় মাল্য। বাবার দেখানো পথেই চলেছেন বিজয়। তিনিও লিকার ব্যারন। বর্তমানে পলাতক এই ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি।
১৯৮৩ সালের ১৩ অক্টোবর মুম্বইয়ে মৃত্যু হয় ভিট্টলের। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হয় এক অধ্যায়ের।