স্কুলে পড়ার সময় থেকেই নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা এবং সফটব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা জাপানের মাসাইয়সি সন ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা।
সেই লক্ষ্যে এগিয়েই আজ তিনি প্রায় ২৩৫০ কোটি ডলারের মালিক। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি পেটিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয়শেখর শর্মা।
ফোর্বস-এর তালিকা অনুযায়ী ২০১৭ সালে তিনি দেশের কনিষ্ঠতম শত কোটিপতি ছিলেন। তখনই তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ডলারের। ২০২০ সালে ওই সংস্থার মতে, তিনি দেশের ৬২তম ধনী ব্যক্তি।
সম্প্রতি অর্থ জোগাড়ের জন্য পেটিএমের মূল সংস্থা ওয়ান৯৭ কমিউনিকেশন্স প্রথম বার বাজারে শেয়ার ছাড়ে। এক একটি শেয়ারের দাম রাখা হয় প্রায় ২১৫০ টাকা। ভারতের বৃহত্তম আইপিও এটি, প্রায় ১৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। সংস্থার ওই শেয়ার কিনতে প্রয়োজনের তুলনায় ১.৮৯ গুণ আবেদন জমা পড়ে। যা দেখে চোখে জল চলে এসেছিল বিজয়ের।
তাঁর সংস্থার শেয়ার কিনতে গ্রাহকদের উৎসাহ দেখে ফের এক বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে বিজয় শেখরের সংগ্রাম। একটু একটু করে এই সংস্থা দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালের ৭ জুন উত্তরপ্রদেশের ছোট শহর আলিগড়ে জন্ম বিজয়ের। তাঁর বাবা সুলম প্রকাশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মা আশা শর্মা গৃহবধূ। নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারেই জন্ম বিজয়ের। চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন তিনি।
আলিগড়ের কাছেই হরদুয়াগঞ্জ নামে একটি এলাকা রয়েছে। সেখানের এক হিন্দিভাষী স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পরে দিল্লি টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ইংরেজি গান শুনে এবং হিন্দি থেকে ইংরেজির ভাষা পরিবর্তনের বই পড়ে ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন বলে জানান তিনি।
১৯৯৭ সালে কলেজে পড়ার সময় ইন্ডিয়াসাইট.নেট নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছিলেন বিজয়। এর দু’বছর পর ওয়েবসাইটটি ১০ লক্ষ ডলারে বেচে দেন তিনি।
২০০০ সালে তিনি ওয়ান৯৭ কমিউনিকেশনস নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছিলেন। যার মাধ্যমে মোবাইলে খবর, ক্রিকেটের স্কোর, নানা ধরনের রিংটোন, জোকস, পরীক্ষার ফলাফল মোবাইলেই দেখতে পারতেন গ্রাহকরা।
পরবর্তীকালে এই সংস্থা থেকেই পেটিএম চালু করেন তিনি। ২০১০ সালে অনলাইন লেনদেন অ্যাপ পেটিএম বাজারে আনেন। বর্তমানে ৪০ কোটি লোক লেনদেনের জন্য পেটিএম ব্যবহার করে থাকেন। প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে।
ছেলের পেটিএম যখন বাজারে আসে মা-বাবা ঠিকমতো বুঝতেই পারতেন না তাঁদের ছেলে আসলে করতে কী চাইছেন। অনলাইন লেনদেনের সঙ্গে তখনও সে ভাবে পরিচিত হয়নি দেশ। পরে এক হিন্দি সংবাদপত্রে খবর পড়ে মা আশা জানতে পেরেছিলেন ছেলে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক। বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। সত্যি যাচাই করতে ছেলেকেই প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। সে দিন থেকেই ছেলেকে নিয়ে গর্বিত তাঁরা।