ইন্ড্রাস্ট্রিতে জনপ্রিয় মহিলা নেতিবাচক (নেগেটিভ) চরিত্র হাতেগোনা কয়েকটি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একতা কপূরের ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ ধারাবাহিকের কমলিকা বসু। কমলিকার চরিত্র আজও দর্শক মনে রয়ে গিয়েছে। পর্দায় কমলিকা সব সময়ই পরিকল্পনা করতেন অন্যের জীবনের শান্তি ছিনিয়ে নেওয়ায়। কমলিকার বাস্তব জীবন কিন্তু ছিল যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক। খুব কষ্টে উপার্জন করে সংসার চালিয়েছিলেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় নিজের সন্তানদের মানুষ করতে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।
তিনি ঊর্বশী ঢোলাকিয়া। গাঢ় লিপস্টিক, কপালে কুমকুম আর বাহারি শাড়িতে সেজে যখনই পর্দায় আসতেন তিনি, ভেসে উঠত সুর— ‘ক-ম-লি-কা’! ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’র কমলিকা চরিত্রের হাত ধরেই নজরে পড়েছিলেন তিনি।
খুব ছোট বয়স থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে ইচ্ছেডানায় ভর করে উড়তে শুরু করেছিলেন ঊর্বশী। প্রথমে একটি নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে টেলিভিশনে দেখা যায় তাঁকে। তারপর দূরদর্শনের ধারাবাহিক ‘শ্রীকান্ত’-এ শিশু শিল্পী হিসাবে অভিনয়।
আর একটু বড় হতে সুযোগ পেয়ে যান দূরদর্শনেরই অন্য একটি ধারাবাহিকে। নাম ‘দেখ ভাই দেখ’। তারপর একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় এবং পড়াশোনা— দুটোই সমান্তরাল ভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টা কঠিন ছিল কিন্তু ঊর্বশী তখনও জানতেন না তাঁর জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করে রয়েছে।
১৯৯৩ সালে ‘দেখ ভাই দেখ’ ধারাবাহিকে অভিনয় করার সময় থেকেই এক ব্যক্তির প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিলেন তিনি। বাড়ির অমতে ১৬ বছর বয়সে তাঁকে বিয়ে করে নেন ঊর্বশী। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর উপর যে মানসিক নির্যাতন চলত, তা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারতেন না তিনি। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে ঊর্বশী যমজ সন্তানের জন্ম দেন।
আর তার এক বছরের মধ্যেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঊর্বশী তখন মাত্র ১৮ বছরের কিশোরী। এই বয়সে সন্তানরা পুরোদস্তুর মা-বাবার উপর নির্ভরশীল থাকে সাধারণত। অথচ ঊর্বশীর ঘাড়েই তখন দুই সন্তানের দায়িত্ব।
স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মা-বাবার কাছেই থাকতে চলে যান তিনি। তাঁর বাবাও তখন কাজ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় একা বাবার উপর সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকা সম্ভব ছিল না তাঁর। বাধ্য হয়েই দুই দুধের শিশুকে ফেলে ফের কাজ খুঁজতে শুরু করেন।
ধীরে ধীরে নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করেছেন তিনি। নিজের দুই ছেলের সমস্ত খরচ একা মা হয়ে বহন করেছেন। আর্থিক অনটনেও ভুগতে হয়েছে অনেক সময় তাঁকে। সে সব দিন কঠোর পরিশ্রম করে সামলেছেন একা। আর সামাজিক কটূক্তি তো ছিলই। কখনও প্রতিবাদ করেছেন, কখনও চুপ থেকে নিজের কাজ দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।
ঊর্বশীর বয়স এখন ৪৩। ৩৩ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। এখনও সক্রিয় ভাবে কাজ করে চলেছেন। মাত্র আঠেরো বছর বয়স থেকেই ঊর্বশী একা মানুষ করেছেন দুই ছেলে সাগর আর ক্ষিতীশকে। এত অল্প বয়স থেকে একা সন্তান মানুষ করা বেশ কঠিন কাজ বলে মনে হলেও তা নিয়ে ভাবতে চান না অভিনেত্রী। তাঁর মতে, ‘পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপরে। কঠিন ভাবলে কঠিন। কিন্তু আমার পাশে সব সময়ে পরিবার ছিল। মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী সকলে। তাই কাজটা কঠিন বলে ভাবতেই চাইনি।’
ঊর্বশীর দুই ছেলেও অভিনেতা হতে চান। দুই ছেলের কাছে ঊর্বশী একজন প্রকৃত যোদ্ধা। ছেলেরা চান মা এ বার নিজের জীবন নিয়ে ভাবুন। মা নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিন। তবে এখনও সে সব নিয়ে ভাবার সময় পাননি তিনি। ছেলেদের পাশে থাকাতেই তাঁর ভাল থাকা।