ছোটবেলা থেকে অর্থাভাবের সম্মুখীন হয়েছেন। সংসার চালানোর জন্য কখনও চা বিক্রি করেছেন, কখনও বা টিউশন পড়িয়েছেন। হাজারো বাধা পেরিয়েও যে স্বপ্ন বুনেছিলেন তা পূরণ করতে পিছপা হননি। তিন বারের প্রচেষ্টায় কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস আধিকারিক হন হিমাংশু গুপ্ত।
উত্তরাখণ্ডের উধমসিংহ জেলার সিতারগঞ্জে জন্ম হিমাংশুর। পরে পরিবারের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বরেলি চলে যান তিনি। শৈশব থেকেই অর্থের অভাবের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। হিমাংশুর বাবা পেশায় দিনমজুর ছিলেন। পরে তিনি রাস্তার ধারে একটি চায়ের দোকান খোলেন। সেই দোকানেই বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করে রোজগার করতেন হিমাংশু। বর্তমানে একটি বড় দোকানের মালিক হিমাংশুর বাবা।
হিমাংশু যে স্কুলে পড়তেন সেখান থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ছিল ৩৫ কিলোমিটার। যাতায়াতের জন্য টাকা খরচ করার সামর্থ্যও ছিল না তাঁর।
স্কুলের গণ্ডি পার করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লি চলে যান তিনি। দিল্লির একটি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন হিমাংশু। কলেজে পড়াকালীন সংসারের খরচ সামলানোর জন্য টিউশন পড়াতেন হিমাংশু। এমনকি অর্থের বিনিময়ে ব্লগ লেখালেখিও করতেন।
স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর দিল্লি থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরিবেশবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে স্বর্ণপদক পান হিমাংশু।
কলেজের পড়াশোনার পর চাকরির সুযোগ পান হিমাংশু। অর্থের প্রয়োজনে সেই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু মনের গোপনে বুনে তোলা স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপেও পা রাখেন হিমাংশু।
দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা ইউপিএসসি পাশ করে আইএএস আধিকারিক হতে চেয়েছিলেন হিমাংশু। চাকরির পাশাপাশি ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত সময় বার করে উঠতে না পারায় সেই চাকরি ছেড়ে দেন হিমাংশু।
ইউপিএসসির প্রস্তুতির জন্য কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হননি হিমাংশু। অর্থাভাবের কারণে নিজেই প্রস্তুতি নেন তিনি। এমনকি সংসারের খরচ চালানোর জন্য একটি সরকারি কলেজে গবেষণা সংক্রান্ত কাজও শুরু করেন তিনি।
প্রথম বারে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেও মনের মতো পদে চাকরি পাননি হিমাংশু। ২০১৮ সালে পরীক্ষা দেওয়ার পর ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ট্র্যাফিক সার্ভিস’ দফতরে কাজ পেয়েছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে আবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন হিমাংশু। সেই বছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইপিএস আধিকারিক পদে চাকরি পান তিনি। সারা দেশে তাঁর র্যাঙ্ক ছিল ৩০৯।
আইপিএস আধিকারিক হলেও হিমাংশু নিজেকে আইএএস পদে দেখতে চেয়েছিলেন। ২০২০ সালে আবার পরীক্ষায় বসেন তিনি। ১৩৯ র্যাঙ্ক করার পর শেষ পর্যন্ত আইএএস পদে চাকরি পান তিনি।
ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টে তালা ঝোলানো থাকলেও সেখানে হিমাংশুর অনুগামীর সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২৭ হাজারের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।