একেই বলিপাড়ার প্রথম সারির তারকার কন্যা। তার উপর উপার্জনের নিরিখে নব্বইয়ের দশকে শীর্ষ স্থানে ছিলেন অভিনেত্রী। একের পর এক হিট ছবিতে ভরেছেন কেরিয়ারের ঝুলি। কিন্তু যে কেরিয়ার গড়তে পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছিল, সেই কেরিয়ারের চূড়ায় পৌঁছে অভিনয়জগৎ থেকে সরে যান অভিনেত্রী।
কপূর পরিবারকে বলিপাড়ার অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেই পরিবারের কন্যা করিশ্মা কপূর নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু অভিনয়ে নামার জন্য পরিবারের সকল সদস্যের মতের বিরুদ্ধে যেতে হয়েছিল করিশ্মাকে।
বলি অভিনেতা রণধীর কপূরের কন্যা করিশ্মা। রাজ কপূর সম্পর্কে করিশ্মার ঠাকুরদা। পৃথ্বীরাজ কপূর, রাজ কপূর, শম্মি কপূর, রণধীর কপূর, ঋষি কপূরের মতো বলিউডের তাবড় তাবড় অভিনেতারা সকলেই কপূর পরিবারের সদস্য। কিন্তু সেই পরিবারের কন্যা বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করবেন শুনে আপত্তি জানান সকলে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে করিশ্মা জানান, কপূর পরিবারের কন্যা হলেও কেউ চাইতেন না যে, তিনি পেশা হিসাবে অভিনয়কে বেছে নিন। এই কথা জানিয়েছিলেন করিশ্মার বোন করিনা কপূর খানও।
সিমি গাড়েওয়ালকে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে করিনা বলেন, ‘‘রাজ কপূরের পরিবারে জন্মালেও বলিউডে প্রবেশ করা করিশ্মার ক্ষেত্রে খুব একটা সহজ ছিল না।’’
করিনা বলেন, ‘‘করিশ্মা যে অভিনয় করবেন, সে সিদ্ধান্ত সকলকে জানানোর পর কেউই তাঁর সঙ্গে সহমত হতে পারেননি। সকলেই আপত্তি জানান।’’ শত মতবিরোধ সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন লক্ষ্য করে এগিয়ে যান করিশ্মা।
কানাঘুষো শোনা যায়, কপূর পরিবারের সদস্যরা চাইতেন না তাঁদের পরিবারের কোনও মহিলা সদস্য অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হোক। এটাই নাকি তাঁদের পরিবারের প্রথা ছিল। করিশ্মা তার বিরোধিতা করে নিজের স্বপ্নপূরণকে গুরুত্ব দেন।
করিশ্মা একা নন, তাঁর বোন করিনাও পরিবারের চলতি প্রথা না মেনে অভিনয়ে নামেন। বর্তমানে করিশ্মা অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও করিনাকে এখনও অভিনয় করতে দেখা যায়।
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ৪৩ বছরে পা ফেললেন করিনা। ওই দিনই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি। করিনার জন্মদিনে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ‘জানে জান’ ছবিটি। বাঙালি পরিচালক সুজয় ঘোষ পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় করিনাকে।
১৯৯১ সালে ‘প্রেম কয়েদি’ নামে একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এই ছবিতে অভিনয় করে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন করিশ্মা। ছবিটি বক্স অফিসে মাঝারি মানের ব্যবসা করে।
কেরিয়ারের শুরুর দিকে পর পর ছবি ব্যর্থ হচ্ছিল করিশ্মার। কিন্তু ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জিগর’ এবং ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আনাড়ি’ ছবিটি অভিনেত্রীর কেরিয়ারে সাফল্যের প্রথম মাইলফলক গড়ে তোলে।
করিশ্মা তাঁর কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ পেলেও তার স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। আবার অভিনেত্রীর পেশাগত জীবনের রেখচিত্র নিম্নগামী হতে শুরু করে। তাঁর ছবিগুলি ব্যবসার দিক দিয়ে ভাল ফল করতে ব্যর্থ হয়।
বলিপাড়ার খ্যাতনামী ছবিনির্মাতা ডেভিড ধওয়ানের সঙ্গে কাজ শুরুর পর করিশ্মার জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। ডেভিড পরিচালিত একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।
নব্বইয়ের দশকে উপার্জনের ভিত্তিতে বলিপাড়ার অভিনেত্রীদের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছন করিশ্মা। কিন্তু কেরিয়ারে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে অভিনয় থেকে হঠাৎ নিজেকে সরিয়ে নেন অভিনেত্রী।
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, সঞ্জয় কপূরের সঙ্গে বিয়ে এবং বিচ্ছেদ অভিনেত্রীর কেরিয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। তাই নাকি তিনি নিজেকে অভিনয় থেকে সরিয়ে নেন।
২০২০ সালে একতা কপূরের ‘মেন্টালহুড’ ওয়েব সিরিজ়ে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় করিশ্মাকে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সম্প্রতি ‘ব্রাউন’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়েও দেখা যাবে তাঁকে। বলি পরিচালক হোমি আদাজানিয়ার ‘মার্ডার মুবারক’ ছবিতেও অভিনয় করার কথা রয়েছে কপূর-কন্যার।