স্বপ্ন দেখেছিলেন ইউপিএসসি দিয়ে আইএএস আধিকারিক হওয়ার। রোজগারের জন্য হোটেলেও কাজ করেছেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে অভিনয়ে নামেন সাক্ষী তানওয়ার। বর্তমানে ছোট পর্দার প্রথম সারির অভিনেত্রী তিনি। বলি অভিনেতা আমির খানের বিপরীতে অভিনয় করে বলিপাড়াতেও নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি।
১৯৭৩ সালের ১২ জানুয়ারি রাজস্থানের অলওয়ারে জন্ম সাক্ষীর। বাবা-মা এবং দাদা-দিদির সঙ্গে থাকতেন তিনি। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে দেশের নানা জায়গার স্কুলে পড়েছেন সাক্ষী। দিল্লির কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন তিনি।
কলেজে থাকাকালীন নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাক্ষী। ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে আইএএস আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের জন্য বিলাসবহুল হোটেলে কাজ করতেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সাক্ষী জানিয়েছিলেন, তাঁর জীবনে প্রথম বেতন ছিল ৯০০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনেছিলেন। পরিবারের বাকি সদস্যদেরও উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
শুধু হোটেলেই নয়, দিল্লিতে জামাকাপড় বিক্রির দোকানেও কাজ করেছিলেন সাক্ষী। ‘অলবেলা সুর মেলা’ নামে গানের রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালনার জন্য অডিশন দেন তিনি। পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন সাক্ষী।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও অডিশনে পাশ করে যান সাক্ষী। ১৯৯৮ সালে সম্প্রচারিত ‘অলবেলা সুর মেলা’ রিয়্যালিটি শোয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে তাঁর।
হিন্দি ধারাবাহিক জগতে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান সাক্ষী। ২০০০ সাল থেকে সম্প্রচারিত ‘কহানি ঘর ঘর কি’ ধারাবাহিকে পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমনে জায়গা করে নেন তিনি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত হয়।
‘কুটুম্ব’, ‘দেবী’, ‘জস্সি জ্যায়সি কোয়ি নহি’, ‘কহানি হমারে মহাভারত কি’, ‘এক থি নায়িকা’ নামের একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন সাক্ষী। ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’ ধারাবাহিকে টেলি অভিনেতা রাম কপূরের সঙ্গে সাক্ষীর জুটি দর্শকের মনে ধরে।
এমনকি রামের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন সাক্ষী। ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’ ধারাবাহিকে রামের সঙ্গে ১৭ মিনিট দীর্ঘ ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেন সাক্ষী। পারিবারিক ঘরানার ধারাবাহিকে এই ধরনের দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য কটাক্ষের শিকার হন সাক্ষী। ধারাবাহিকের নির্মাতা একতা কপূর পরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন ওই দৃশ্যের জন্য।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, এক শিল্পপতিকে নাকি গোপনে বিয়ে করেছেন সাক্ষী। কিন্তু পরে জানা যায় এ সবই রটনা। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে এক কন্যাসন্তান দত্তক নেন তিনি। এখনও পর্যন্ত কাউকে বিয়ে করেননি অভিনেত্রী।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, হিন্দি ধারাবাহিকে প্রতিটি পর্বে অভিনয় করতে ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেন সাক্ষী।
২০০৬ সালে ‘ও রে মনভা’ নামের একটি হিন্দি ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন সাক্ষী। কিন্তু অভিনেত্রীর কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
তার পর ‘সি কোম্পানি’, ‘কফি হাউস’, ‘আতঙ্কবাদী আঙ্কল’ এবং ‘বাওয়ারা মন’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সাক্ষীকে। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারেনি। ২০১৫ সালে মরাঠি ভাষার একটি ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
ছোট পর্দার সফল অভিনেত্রী হলেও বড় পর্দায় নিজের পরিচিতি গড়ার পথ সহজ ছিল না সাক্ষীর। ২০১৬ সালে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় অভিনেত্রীর।
নীতেশ তিওয়ারির পরিচালনায় ‘দঙ্গল’ ছবিতে আমির খানের বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান সাক্ষী। এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। ২০১৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। মুক্তির পর বিশ্বজোড়া বক্স অফিসে দু’হাজার কোটি টাকার ক্লাবে নাম লেখায় এই ছবি।
‘দঙ্গল’-এ অভিনয়ের পর একের পর এক ছবিতে কাজের প্রস্তাব পেতে থাকেন সাক্ষী। ২০২১ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডায়াল ১০০’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী এবং নীনা গুপ্তের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি।
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ ছবিতে অক্ষয় কুমারের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান সাক্ষী। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সানি দেওলের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করলেও সেই ছবি নাকি এখনও মুক্তি পায়নি।
ধারাবাহিক এবং বড় পর্দার পাশাপাশি একাধিক রিয়্যালিটি শো এবং ক্রাইম ঘরানার শো সঞ্চালনা করেছেন সাক্ষী। ‘করলে তু ভি মহব্বত’, ‘দ্য ফাইনাল কল’, ‘মিশন ওভার মার্স’, ‘মাই: অ্যা মাদার্স রেজ’ নামের একাধিক ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সাক্ষীকে।