প্রায় দু’দশক ধরে অভিনয় করছেন, কিন্তু কেরিয়ারের ঝুলিতে কোনও হিট ছবি নেই। তবে নায়িকার হাত ধরে কঙ্গনা রানাউত এবং মল্লিকা শেরাওয়াতের মতো বলি অভিনেত্রীরা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কানাঘুষো শোনা যায়, পরিচালকের সঙ্গে পরকীয়ার কারণেই নাকি ১৩ বছরের সাংসারিক জীবনে ইতি টানতে হয় অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা সিংহকে।
১৯৭৬ সালের ৩০ অগস্ট রাজস্থানের জোধপুরে জন্ম চিত্রাঙ্গদার। বাবা-মা, ভাই এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কলেজে পড়াকালীন বিমানসেবিকা হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। তিন বার সেই চাকরির জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি নায়িকার।
কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর মডেলিংজগতে পা রাখেন চিত্রাঙ্গদা। নামকরা বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে অভিনয়ও করেন তিনি। একাধিক মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ের সুযোগ পান চিত্রাঙ্গদা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় চিত্রাঙ্গদার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান বলি পরিচালক সুধীর মিশ্র। নিজের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন চিত্রাঙ্গদাকে।
২০০৫ সালে সুধীরের পরিচালনায় ‘হাজ়ারোঁ খোয়াইশে অ্যায়সি’ নামের ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন চিত্রাঙ্গদা। একই বছর সুধীরের প্রযোজনায় ‘কাল: ইয়েস্টারডে অ্যান্ড টুমরো’ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু বক্স অফিসে বিশেষ ব্যবসা করতে পারেনি ছবিটি।
২০০৫ সালের পর তিন বছর বড় পর্দা থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন চিত্রাঙ্গদা। ২০০৮ সালে ‘সরি ভাই!’ ছবির মাধ্যমে আবার ফিরে আসেন নায়িকা। ‘ইয়ে শালি জ়িন্দেগি’, ‘দেশি বয়েজ়’, ‘ইনকার’, ‘আই, মি অওর ম্যায়’, ‘সাহেব, বিবি অওর গ্যাংস্টার ৩’, ‘বাজ়ার’, ‘গ্যাসলাইট’, ‘বব বিশ্বাস’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘গব্বর ইজ় ব্যাক’ ছবির একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করে প্রশংসা পান চিত্রাঙ্গদা। ‘জোকার’, ‘ঘুমকেতু’, ‘খেল খেল মে’-র মতো ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০১ সালে জ্যোতি রণধাওয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় চিত্রাঙ্গদার। গল্ফ খেলে উপার্জন করেন জ্যোতি। চিত্রাঙ্গদা এবং জ্যোতির বাবা একে অপরকে চিনতেন। সেই সূত্রেই পরিচয় হয় দু’জনের।
জ্যোতির সঙ্গে চিত্রাঙ্গদার সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে পরিণত হয়। পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০০১ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। ২০০৮ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন চিত্রাঙ্গদা।
কিন্তু জ্যোতির সঙ্গে চিত্রাঙ্গদার সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১৫ সালে আইনি বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের। কানাঘুষো শোনা যায়, এক বলি পরিচালকের সঙ্গে নাকি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন চিত্রাঙ্গদা। সে কারণেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় নায়িকার।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, কেরিয়ারের গোড়া থেকেই নাকি সুধীরের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় চিত্রাঙ্গদার। পেশাদারি সম্পর্ক থেকে তাঁদের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ক্রিশ ৩’ ছবিতে হৃতিক রোশনের বিপরীতে অভিনয় করার প্রস্তাব পান চিত্রাঙ্গদা। কিন্তু সেই সময় সুধীরের একটি ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নায়িকা। তাই ‘ক্রিশ ৩’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয় তাঁকে। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় কঙ্গনা রানাউতকে।
চিত্রাঙ্গদার ছেড়ে দেওয়া ছবিতে আগেও অভিনয়ের সুযোগ পান কঙ্গনা। অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘গ্যাংস্টার’। এই ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান কঙ্গনা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘গ্যাংস্টার’ ছবির নায়িকা হিসাবে প্রথমে চিত্রাঙ্গদাকে পছন্দ করা হয়। কিন্তু চিত্রাঙ্গদা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে কঙ্গনার কাছে যান ছবিনির্মাতারা।
২০১১ সালে ‘তনু ওয়েড্স মনু’ ছবিতে আর মাধবনের বিপরীতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়োন কঙ্গনা। কিন্তু কঙ্গনা নয়, ছবিনির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন চিত্রাঙ্গদা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ‘তনু ওয়েড্স মনু’ ছবিটি ভাল ব্যবসা করবে না, এমনটাই চিত্রাঙ্গদার কাছে দাবি করেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। তাই নিজের কেরিয়ারের কথা চিন্তা করেই সেই ছবির প্রস্তাবে নাকি রাজি হননি অভিনেত্রী।
কেরিয়ারের লাভের কথা চিন্তা করে আরও এক বার লোকসান করেন চিত্রাঙ্গদা। বলিপাড়ায় গুঞ্জন, ‘মার্ডার’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু তা-ও ফিরিয়ে দেন চিত্রাঙ্গদা। পরে সেই ছবিতে অভিনয় করে কেরিয়ার গড়ে ওঠে বলি অভিনেত্রী মল্লিকা শেরওয়াতের।