নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন বলি অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। প্রথম ছবির মাধ্যমেই বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেন অভিনেত্রী। কিন্তু কেরিয়ারের ঝুলিতে হিট ছবির তুলনায় ফ্লপ ছবির সংখ্যাই বেশি যুক্ত করেন মনীষা। ধীরে ধীরে বলিপাড়া থেকে হারিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
হিন্দি ভাষার পাশাপাশি তামিল, নেপালি এবং ইংরেজি ভাষার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে মনীষাকে। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। তাই অভিনয় শিখতে নেপাল থেকে ভারতে চলে আসেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় পা রাখলেও মনীষা তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন নেপালি ছবির মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফেরি ভেতৌলা’ ছবির হাত ধরে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি।
বলিপাড়ার প্রথম সারির ছবিনির্মাতা সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘সওদাগর’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ১৯৯১ সালে। এই ছবিতে দিলীপ কুমার, রাজ কুমার, মুকেশ খন্নার মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান মনীষা।
‘সওদাগর’ মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। মনীষার কেরিয়ারের প্রথম ছবিটিই হিট হয়। তার পর বলিউডের অধিকাংশ ছবিনির্মাতা অভিনেত্রী হিসাবে মনীষাকে পছন্দ করতে শুরু করেন।
একটি ছবিতে অভিনয় করেই বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মনীষা। একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘সওদাগর’ ছবিটি মুক্তির দু’বছরের মধ্যে পর পর ছ’টি ছবিতে অভিনয় করেন মনীষা। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না অভিনেত্রীর। প্রথম ছবি হিট করার পর আর কোনও ছবিই বাণিজ্যিক দিক দিয়ে সফল হচ্ছিল না।
১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘১৯৪২: অ্যা লভ স্টোরি’ এবং ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বম্বে’ ছবিদু’টি হিট হওয়ার পর বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেত্রী হিসাবে নাম লিখিয়ে ফেলেন মনীষা।
তার পর কেরিয়ারের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে মনীষার। ‘অগ্নি সাক্ষী’, ‘ইন্ডিয়ান’, ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’, ‘কচ্চে ধাগে’, ‘এক ছোটিসি লভ স্টোরি’, ‘কোম্পানি’, ‘মন’, ‘দিল সে’, ‘লজ্জা’র মতো মনীষার একাধিক ছবি হিট হয়।
কিন্তু ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ১১টি ছবি ফ্লপ হয় মনীষার। ২০০৩ সালের পর থেকে কয়েকটি কম বাজেটের ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ২০০৪ সালে ফিল্মমেকিং নিয়ে পড়াশোনা করতে আমেরিকায় যান তিনি।
পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসার পর বলিপাড়ায় নিজের পুরনো জায়গায় ফিরতে ব্যর্থ হন মনীষা। একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও বক্স অফিসে সেই ছবিগুলি ব্যবসা করতে পারেননি।
২০১০ সালে নেপালের ব্যবসায়ী সম্রাট দহালকে বিয়ে করেন মনীষা। দু’বছর পর ২০১২ সালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন দু’জনে। ওই বছরই ক্যানসার ধরা পড়ে অভিনেত্রীর।
ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে সরে যান মনীষা। পাঁচ বছর পর ‘ডিয়ার মায়া’ ছবিতে অভিনয় করে ২০১৭ সালে আবার বলিপাড়ায় ফিরে আসেন তিনি।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ ওয়েব সিরিজ় এবং ‘সঞ্জু’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় মনীষাকে। চলতি বছরে ‘শেহজাদা’ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, প্রথম ছবি হিট হওয়ার পর একের পর এক ফ্লপ ছবিতে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ সে অর্থে পাননি মনীষা। এখনও পর্যন্ত অভিনেত্রী তাঁর কেরিয়ারে ৫০টি এমন ছবিতে অভিনয় করেছেন, যেগুলি ফ্লপ করেছে।
বলিপাড়ার প্রথম সারির ছবিনির্মাতা সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘হীরামান্ডি’ ওয়েব সিরিজ়ে মনীষাকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। মনীষার পাশাপাশি এই সিরিজ়ে অভিনয় করবেন আদিত্য রাও হায়দারি, রিচা চড্ডা, সঞ্জীদা শেখ, সোনাক্ষী সিন্হার মতো বলি অভিনেত্রীরা। তবে এই ওয়েব সিরিজ়টি কবে মুক্তি পাবে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও ঘোষণা করা হয়নি।