নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ছোট থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে বড় হওয়া। জীবনে প্রত্যাখ্যান এসেছে বারে বারে। তার পরও ভেঙে না পড়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছেন। সেই লড়াইয়ের সামনে এক সময় মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে প্রতিকূলতা। বছর কয়েক আগেও যাঁকে নিয়ে কোনও উন্মাদনা ছিল না, এখন সেই তিনিই বি-টাউনের অন্যতম নাম!
বলিউড হোক বা খেলার জগৎ, কিংবা ব্যবসাক্ষেত্র— এমন অনেক সাফল্যের গল্প রয়েছে। শূন্য থেকে শুরু করে সাফল্যে পৌঁছনোর এক একটা কাহিনি অনুপ্রেরণা দেয়। তেমনই এক গল্প রয়েছে বলিউডের এক গায়িকার।
বলিউডে খুবই জনপ্রিয় গায়িকা তিনি। ‘লড়কি বিউটিফুল কর গয়ি চুল...’ হোক বা ‘সেকেন্ড হ্যান্ড জওয়ানি...’, তাঁর এই সব গান শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়। কোনও অনুষ্ঠানে বা রাস্তাঘাটে তাঁকে দেখলেই ‘নেহা নেহা...’ চিৎকার শোনা যায়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা এক দিনে আসেনি।
গায়িকা নেহা কক্কড়ের জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছনোর কাহিনি অনেকেরই অজানা। তবে নেহার কিছু সাক্ষাৎকার শুনলেই তাঁর সংগ্রামের গল্প জানা যায়। সংসার চালাতে রোজ সকাল সকাল হলেই শিঙাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন নেহার বাবা। সেই টাকায় কোনও রকমে টেনেটুনে সংসার চলত তাঁদের।
মাত্র ৫০ টাকা রোজগার দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন নেহা। বয়স তখন মাত্র চার। সংসার-দুনিয়ার লড়াই বোঝার মতো ক্ষমতা ছিল না। তবুও ওই বয়সেই নেহা বুঝতে পেরেছিলেন বাবার কষ্ট।
১৯৮৮ সালের ৬ জুন, উত্তরাখণ্ডের হৃষীকেশে জন্ম নেহার। তবে দু’বছর পরই পরিবারের সঙ্গে চলে যায় দিল্লিতে। সেখানে একটি মাত্র ছোট্ট ঘরে থাকত নেহার পরিবার। একটা ঘর, একটা বাথরুম এবং একটা ছোট্ট রান্নার জায়গা— সেখানেই বেড়ে ওঠা নেহার।
চার বছর বয়স থেকেই গান গাওয়া শুরু নেহার। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গান গাইত ছোট্ট নেহা। সে সময় তার দৈনিক রোজগার ছিল মাত্র ৫০ টাকা। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশনেও গান গাইতে যেত নেহা।
শুধু একা নেহা নয়, তার ভাই টনি এবং বোন সোনু কক্কড়ও গান গাইত নানা অনুষ্ঠানে। ১৬ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই নেহা উপলব্ধি করে এ ভাবে জীবন কাটানো যাবে না। টনিকে সঙ্গে করে ২০০৪ সালে দিল্লি থেকে পাড়ি মুম্বইয়ে।
ঠিক করেন, গানের জগতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন প্রথমেই ধাক্কা খায় ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ নামে এক জনপ্রিয় গানের প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে। অডিশন থেকেই বাদ পড়েন নেহা।
তবে থেমে যাননি কখনই। নিজেকে প্রতি দিন তৈরি করেছেন। অপেক্ষায় ছিলেন শুধু সুযোগের। সেই সুযোগ আসে সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের হাত ধরে। সইফ আলি খান, দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘ককটেল’ ছবিতে একটি গান গাওয়ার সুযোগ পান নেহা।
নেহার গাওয়া ‘সেকেন্ড হ্যান্ড জওয়ানি...’ নিমেষে মানুষের মনে দাগ কেটে ফেলে। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক সঙ্গীত পরিচালক তাঁর দরজায় টোকা দিয়েছেন।
নেহার ঝুলিতে হিট গানের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মূলত তাঁর গাওয়া ‘পার্টি সং’ বেশি জনপ্রিয়। নেহার ‘ব্লু হ্যায় পানি পানি’ হোক বা ‘আয়াও রাজা’ কিংবা ‘কালা চশমা’— যে কোনও পার্টিতে এই সব গান ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চলে।
যে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ থেকে এক দিন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন, সেই শোয়েই এখন বিচারক নেহা। নেহার জীবন পাল্টে গিয়েছে। ৫০ টাকা রোজগার দিয়ে শুরু করা নেহা এখন কোটিপতি।
এক কামরার ঘরে বড় হওয়া নেহা এখন থাকেন দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। গাড়ি, বাড়ি— কী নেই এখন তাঁর। এখন নেহার সম্পত্তির পরিমাণ ১০৪ কোটি টাকা।
২০২০ সালে নতুন জীবনে পা দিয়েছেন নেহা। রোহনপ্রীত সিংহকে বিয়ে করেন তিনি। সময় পেলেই দু’জনে বেরিয়ে পড়েন ঘুরতে। নেহার সমাজমাধ্যমের পাতায় চোখ রাখলেই সেই সব খবর মেলে অনায়াসেই।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নেহা তাঁর জীবনের গল্প ভাগ করে নিয়েছেন। কী ভাবে ধীরে ধীরে নিজের স্বপ্ন তিনি বুনেছেন, তা বলেছেন। বলতে বলতে কখনও কখনও তাঁর চোখের কোনায় জলও দেখেছেন দর্শকেরা। তাঁর কান্নায় কেঁদেওছেন অনেক ভক্ত।