আধুনিকতার যুগে মানুষ আর হাতে নগদ রাখে কই। ডিজিটাল দুনিয়ায় নগদের ব্যবহার অনেকটাই কমেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের প্রবণতা। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কৌতূহল রয়েছে বিশ্বে। তবে সেই সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি বলতেই যাঁর নাম প্রথমে আসে, তিনি হলেন রুজা ইগনাতোভা। বর্তমানে তিনি পলাতক। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর।
রুজা ‘নিখোঁজ ক্রিপ্টোকুইন’ নামে বিশ্বে পরিচিত। ৩৭ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তাঁর। তাঁকে খুঁজতে রেড কর্নার নোটিসও জারি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখন বিশ্বের কোন কোনায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন, তা জানেন না গোয়েন্দারা।
ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি শুরু হয় ২০১৪ সালে। রুজা একটি কোম্পানি তৈরি করেন। নাম দেন ‘ওয়ানকয়েন’। এই কোম্পানির কাজ ছিল বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।
অনেকের কাছেই ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট নয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এমনই এক অর্থনৈতিক লেনদেনের বিনিময় মাধ্যম, যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল। একে ভার্চুয়াল মুদ্রাও বলা হয়। বাস্তবে এই মুদ্রার কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ডিজিটালি লেনদেন হয়ে থাকে।
ভারতের মতো অনেক দেশেই ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ নয়। কেন্দ্রীয় সরকারে কোনও নিয়মের আওতায় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি পড়ে না। ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধাজনক দিকগুলি হল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বাজারে খুব সহজেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে লেনদেন করা সম্ভব।
বিটকয়েন হল প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি। ২০০৮ সালে প্রথম এই ক্রিপ্টোকারেন্সি শুরু হয়। সাতোনি নাকামোতে নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবেশ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি।
কিন্তু এই ক্রিপ্টোকারেন্সি কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। রুজার ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসার পরই সেই প্রশ্ন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। খুব কম সময়ের মধ্যেই বিটকয়েনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে ওয়ান কয়েন।
কিন্তু ২০১৭ সালে ছবিটা পাল্টে যায়। সে বছরের অক্টোবরে আচমকা ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান রুজা। তত দিনে বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল। সকলেই বুঝে গিয়েছিলেন, রুজা তাঁদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।
রুজাকে শেষ দেখা গিয়েছিল বুলগেরিয়ার বিমানবন্দরে। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরেই টনক নড়ে আমেরিকান প্রশাসনের। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু তার পর থেকে রুজার কোনও খোঁজ নেই।
এফবিআইয়ের ৫২৯ জনের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ১১ জন মহিলা রয়েছেন। তার মধ্যেই রয়েছে রুজার নাম। শুধু তা-ই নয়, প্রথম ১০ জন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর মধ্যে তিনি এক জন।
রুজা আদতে জার্মানির বাসিন্দা। জন্ম বুলগেরিয়ায় । বাবা ইঞ্জিনিয়ার, মা শিক্ষিকা। রুজা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোপীয় আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তার পর সোফিয়াতে এক কোম্পানির পরামর্শদাতা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এফবিআই সূত্রে খবর, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সোফিয়া থেকে এথেন্সের উদ্দেশে বিমান ধরেন। কিন্তু তার পর সেখান থেকে তিনি কোথায় গেলেন, তা এখনও অজানা। তাঁর অন্তর্ধান রহস্য ভেদ করতে তৎপর গোয়েন্দারা।
জার্মানি পাসপোর্ট ব্যবহার করে রুজা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে থাকতে পারেন। গোয়েন্দাদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বুলগেরিয়া, জার্মানি, রাশিয়া, গ্রিস ইত্যাদি দেশে ঘুরে বেড়ান তিনি। তবে তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই।
রুজা মূলত আমেরিকার বিনিয়োগকারীদের ওয়ান কয়েনে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। পাশাপাশি, বিশ্বের অন্য বিনিয়োগকারীদেরও টানতেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন এখন অনেকেই।