ছোট থেকে চাষবাসের কাজ দেখেই বড় হওয়া। মাটির কাছাকাছি থাকলেও তরুণীর চোখে ছিল হাজারো রঙিন স্বপ্ন। কোনও এক দিন তিনিও আকাশে উড়বেন এই স্বপ্ন ক্রমাগত বুনে যেতেন। সেই স্বপ্ন পূরণও হল। এ বার সত্যিই বিদেশে পাড়ি দেওয়ার সুযোগ পেলেন কৃষক-কন্যা।
২২ বছরের বিদুষী রাম্যা আর। তামিলনাড়ুর সালেমের সক্করাচেত্তিপত্তি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। রাম্যার বাবা-মা দু’জনেই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত।
রাম্যা যে গ্রামে থাকতেন সেখানকার অধিকাংশ মেয়েরাই উচ্চশিক্ষিত নন। স্নাতক স্তরের গণ্ডিও পার করেছেন হাতেগোনা কয়েক জন। তবে নারীশিক্ষার গুরুত্ব বুঝতেন রাম্যা। তাই তামিলনাড়ুর গ্রামের অদৃশ্য বেড়াজালে বেশি দিন থাকতে পারেননি তিনি।
স্কুল থেকে পাস করার পর সাহিত্য নিয়ে তামিলনাড়ুর নামাক্কালের একটি কলেজে ভর্তি হন রাম্যা। তার পাশাপাশি মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট নিয়েও পড়েন তিনি।
রাম্যা বুঝতে পারেন যে, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে তাঁর। তাই খোঁজ খবর নেওয়ার পর তিনি এমবিএ-র জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাম্যা জানান যে, অঙ্ক তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল বটে, কিন্তু সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য সুবিধাই হয়েছে। নিয়ম করে উপন্যাস পড়তেন তিনি।
রাম্যা বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আখ এবং হলুদের চাষ করে সংসার চালায়। পড়াশোনার চালানোর জন্য টাকা জোগাড় করতে মুশকিলেই পড়ত ওরা। তাই আমি শিক্ষাঋণ নিয়ে নিই। কয়েক বছর পর যে আমি ঋণ শোধ করে দিতে পারব, সেই ভরসা নিজের উপর ছিল।’’
তামিলনাড়ু থেকে ওড়িশায় এমবিএ পড়তে যান তিনি। সেখানে পড়াশোনা শেষ করতে না করতেই বিদেশ যাওয়ায় সুযোগ পেয়ে যান।
সিঙ্গাপুরের একটি আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য সংস্থার তরফে চাকরির সুযোগ পান রাম্যা। শুধু তাই নয়, তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্যাকেজের চাকরি পান তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বর্তমানে রাম্যার বার্ষিক উপার্জন ৬৪.১৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টাকারও বেশি আয় রাম্যার।
মে মাসেই নাইজেরিয়া পাড়ি দেন রাম্যা। তরুণী জানান, তাঁর পরিবারে তিনিই প্রথম মেয়ে যে স্নাতক স্তরের গণ্ডি পার করেছেন।
রাম্যা বলেন, ‘‘আমার গ্রামের কোনও মেয়েই পড়াশোনা করার জন্য গ্রামের বাইরে পা রাখেনি। আমার যাত্রা দেখে যদি এক জনও পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তাতেই আমার স্বপ্ন সার্থক।’’