পেশায় ট্রাকচালক। কাজের সূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে কিনে ফেলেন একটি স্মার্টফোন। সেই ফোনের মাধ্যমেই বাড়তি উপার্জন শুরু। সেই উপার্জনের সূত্রেই বাড়ি কিনে ফেলেন রাজেশ রাওয়ানি। বর্তমানে তারকাদের চেয়ে কোনও অংশে তাঁর খ্যাতি কম নয়।
ঝাড়খণ্ডের জামতারায় জন্ম রাজেশের। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তিনি। কোনও মতে সংসার চলত তিন জনের। বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে রাজেশের উপর।
কী ভাবে সংসারের খরচ চালাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না রাজেশ। শেষমেশ বাবার এক বন্ধুর সাহায্যে ট্রাক চালানোর কাজে নেমে পড়েন তিনি। ট্রাক চালিয়ে রোজগার করেই মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি।
বিয়ের পর সংসারের পরিধিও বেড়ে যায় রাজেশের। মা, স্ত্রী এবং তিন সন্তান রয়েছে তাঁর। সংসারের খরচ সামলে সাধ্যমতো টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি।
সঞ্চয় থেকে নিজের জন্য একটি স্মার্টফোন কেনেন রাজেশ। ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে তাঁর। সেই ফোনেই নিত্যজীবনের ঘটনা ভিডিয়ো করতে শুরু করেন তিনি।
ট্রাক চালিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, রাস্তার কী ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন তা সবই ভিডিয়োর মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখতে শুরু করেন রাজেশ। হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ইউটিউব মাধ্যমে নিজস্ব চ্যানেল খুলে সেখান থেকে সেই ভিডিয়োগুলি পোস্ট করবেন।
রাজেশ চাইতেন, তাঁর জীবনের সঙ্গে আরও অনেকে পরিচিত হন। রাজেশ যখন ট্রাক চালান তখন তাঁর সঙ্গে থাকেন তাঁর পুত্র। রাজেশের পুত্রই ইউটিউবে সেই ভিডিয়োগুলি পোস্ট করতে শুরু করেন।
রাজেশ তাঁর ভিডিয়োয় বলেছিলেন, ‘‘ট্রাকচালকের পেশায় কেউ আসতে চান না তার অন্যতম কারণ হল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায় না।’’ তিনি নিজেও বাড়িতে যাওয়ার সময় পান না।
খাওয়াদাওয়ার প্রতি আগ্রহ রয়েছে রাজেশের। রান্না করতেও ভালবাসেন তিনি। তাই ট্রাকের ভিতরেই নিজের মতো করে রান্নাঘর তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। ট্রাকের ভিতরেই রান্না করেন, সেখানেই খাওয়াদাওয়া করেন রাজেশ এবং তাঁর পুত্র।
এখনও পর্যন্ত ইউটিউবে ৮০০-র বেশি ভিডিয়ো আপলোড করেছেন রাজেশ। লক্ষ লক্ষ নেটব্যবহারকারী তাঁর ভিডিয়ো দেখেন। ইউটিউবে তাঁর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৬ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
ইউটিউব ছাড়া ইনস্টাগ্রামের পাতায়ও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন রাজেশ। ইউটিউব থেকে তিনি যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তা রাজেশের অনুরাগী মহলের আয়তন দেখলেই বোঝা যায়। ইনস্টাগ্রামে রাজেশের অনুগামীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছুঁইছুঁই।
মহিন্দ্রা গোষ্ঠীর অধিকর্তা আনন্দ মহিন্দ্রা তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে রাজেশের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। পোস্ট করার পাশাপাশি আনন্দ লিখেছেন, ‘‘আপনার পেশা যতই সাধারণ হোক না কেন, আপনার যতই বয়স বেড়ে যাক না কেন— নতুন প্রযুক্তিকে আপন করতে এবং নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে কোনও কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। রাজেশ সেটাই প্রমাণ করেছেন। ২৫ বছর ধরে ট্রাক চালাচ্ছেন রাজেশ। পাশাপাশি ভ্লগ বানিয়েও উপার্জন করেন।’’
রাজেশ যে টাকা জমিয়ে বাড়ি কিনেছেন সে কথাও আনন্দ তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে রাজেশ সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পরিবার পাশে না থাকলে এত কিছু সম্ভব হত না। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আনন্দ মহিন্দ্রার মতো এত ব্যস্ত মানুষ আমার ভিডিয়ো দেখেন। কোনও উৎসবের সময় আমি বাড়ি যেতে পারি না। সাত জনের পরিবার আমার। অনেক কঠিন সময় পার করেছি আমরা।’’ কয়েক মাসের মধ্যেই পরিবার-সহ নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করবেন রাজেশ।