সুনীরা মাধানি। পাকিস্তানে জন্ম হলেও পরিবার-সহ আমেরিকায় চলে এসেছিলেন শৈশবেই। এক সময় ১৪৫ কোটি টাকা পাওয়ার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছিলেন তিনি। এখন ৮২০০ কোটি টাকা সম্পত্তির মালকিন সুনীরা।
রোজগারের উদ্দেশ্যে সুনীরার বাবা-মা তাঁদের দুই সন্তানকে নিয়ে পাকিস্তানের করাচির বাড়ি ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান।
আমেরিকাতেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন সুনীরা এবং তাঁর ভাই। অনলাইন মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে সুনীরার আগ্রহ ছিল।
সুনীরা ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে পড়াশোনা শেষ করেন। তার পর আটলান্টার একটি পেমেন্ট প্রসেসর তৈরির সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
সুনীরার বাবা-মা আমেরিকায় এসে প্রথমে ছোট মুদিখানার দোকান খোলেন। তার পর আমেরিকায় একটি কাফে খোলেন তাঁরা। কিন্তু যে ব্যবসাতেই তাঁরা হাত দিয়েছেন, সেই ব্যবসাই মুখ থুবড়ে পড়ে।
পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম কী ভাবে কাজ করে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল সুনীরার। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে আর্থিক লেনদেনের জন্য পেমেন্ট টার্মিনাল বিক্রি করেছিলেন তিনি।
টার্মিনাল বিক্রি করার পর থেকেই সুনীরা নিজের ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতনের কাছে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান। কিন্তু ঊর্ধ্বতনের তরফে কোনও ইতিবাচক জবাব মেলে না।
আর্থিক সাহায্যের জন্য আমেরিকার ১২টি ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুনীরা। কিন্তু তারাও ফিরিয়ে দেন সুনীরাকে। সকলে ভেবেছিলেন যে, এক জন মহিলা হয়ে ব্যবসা সামলাতে পারবেন না তিনি। তাই কেউ তাঁকে টাকা দিতে চাইছিলেন না।
সুনীরা এবং তাঁর ভাই সাল রহমতুল্লাহ এক দিন নৈশভোজের সময় সম্পূর্ণ ঘটনাটি তাঁদের বাড়িতে জানান। ভাইবোন ভেবেছিলেন যে, তাঁদের বাবা-মা ব্যবসা শুরুর কথা শুনলে আপত্তি জানাবেন। কিন্তু আদতে তার বিপরীত ঘটনা ঘটল। তাঁদের বাড়ির লোকই সুনীরাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন।
পরিবারের সঞ্চিত পুঁজি থেকে নিজেদের ব্যবসা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে শুরু করলেন সুনীরা এবং সাল। ছ’মাস টানা তাঁরা নিজেদের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের উপর কাজ করেছিলেন। অবশেষে ২০১৪ সাল নাগাদ নিজস্ব সংস্থা গড়ে তোলেন তাঁরা।
সুনীরা এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছিলেন যেখানে মাসিক লেনদেনের উপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। তাঁদের প্ল্যাটফর্মে আকর্ষণীয় ছাড় থাকার কারণে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
ব্যবসা শুরু করার আট বছরের মধ্যে ১৯ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা করেন সুনীরা। ব্যবসার ক্ষেত্র আরও বাড়ানোর জন্য ওরল্যান্ডোর প্রথম সারির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করেন সুনীরা।
সুনীরার পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের পরিকল্পনা নিয়ে যখন তিনি ওরলান্ডোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে শুরু করেন, তখন তাঁর সংস্থা কিনে নিতে চান তাঁরা। কিন্তু তাঁদের প্রস্তাবে রাজি হননি সুনীরা।
আর্থিক সমস্যায় থাকলেও ১৪৫ কোটি টাকার প্রস্তাব গ্রহণ করেননি সুনীরা। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে, তাঁর পরিকল্পনা শুনে লাভের আশা দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাই এত টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে চাইছিলেন।
সুনীরা এবং তাঁর ভাই এমন সময়ও দেখেছিলেন যখন তাঁদের কাছে মাত্র চার মাসের অর্থ বাকি ছিল। তখন ব্যাঙ্ক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুনীরা। সেই টাকা দিয়ে আবার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন তাঁরা।
ব্যবসা চালানোর পাশাপাশি সাত পাকে বাঁধা পড়েন সুনীরা। দুই কন্যাসন্তানও রয়েছে তাঁর।
নিজস্ব একটি পডকাস্ট চ্যানেল খুলেছেন সুনীরা। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এই সংস্থার তরফে মহিলা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা উপায় ভাগ করে নেওয়া হয়।
সুনীরা তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে অধিকাংশ সময় অনুপ্রেরণামূলক বার্তা পোস্ট করে থাকেন। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ৮৬ হাজার।