বর্তমানে বলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় শীর্ষে নাম রয়েছে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের রেখচিত্র মসৃণ ছিল না। কেরিয়ারের গোড়ার দিকে তেমন উপার্জন ছিল না পঙ্কজের। স্ত্রীর উপার্জনের উপরেই নির্ভর করতে হত পঙ্কজকে। আট বছর ধরে সংসারের খরচ টেনেছেন পঙ্কজের জীবনসঙ্গী মৃদুলা ত্রিপাঠী।
স্কুলজীবন থেকেই মৃদুলাকে চিনতেন পঙ্কজ। সহপাঠী নন, পঙ্কজের আত্মীয়া ছিলেন মৃদুলা। দিদির বিয়েতে মৃদুলার সঙ্গে আলাপ হয় পঙ্কজের।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে পঙ্কজ জানিয়েছিলেন যে, ১৯৯৩ সালে পঙ্কজের দিদির বিয়ে হয়েছিল। মৃদুলার দাদার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন পঙ্কজের দিদি। তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দু’জনেই।
মৃদুলার সঙ্গে প্রথম আলাপের সময়ে পঙ্কজ একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। মৃদুলা তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রথম আলাপ হয় তাঁদের। তার পর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম।
দীর্ঘ ১২ বছর সম্পর্কে ছিলেন পঙ্কজ এবং মৃদুলা। স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করে স্কুলে শিক্ষকতা করতে শুরু করেন মৃদুলা। অন্য দিকে পঙ্কজ চেয়েছিলেন অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে।
কেরিয়ারের পাশাপাশি সংসারজীবনেও থিতু হতে চেয়েছিলেন পঙ্কজ এবং মৃদুলা। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকার কারণে তাঁদের বিয়েতে পরিবারের মত পাওয়া তত সহজ ছিল না।
পঙ্কজ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে মৃদুলার সম্পর্কের কথা জানার পর প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে দু’জনের পরিবারই বিয়েতে সম্মতি দেয়।
২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে মৃদুলার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন পঙ্কজ। একই বছর মৃদুলাকে নিয়ে মুম্বই চলে যান অভিনেতা। মুম্বইয়ে যাওয়ার পর অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চাইলেও দোরে দোরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল পঙ্কজকে।
পুরনো সাক্ষাৎকারে পঙ্কজ জানিয়েছিলেন, ২০০৪ সালে মুম্বই যাওয়ার পরেও আট বছর প্রায় বেকারই ছিলেন তিনি। ‘ওমকারা’, ‘বান্টি অওর বাবলি’, ‘অপহরণ’, ‘অগ্নিপথ’, ‘চিল্লর পার্টি’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেলেও ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়েরই সুযোগ পেতেন তিনি।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গ্যাঙ্গস অফ ওয়াসেপুর’ ছবিতে অভিনয় করে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন পঙ্কজ। কিন্তু তাঁর আগে স্ত্রীর উপার্জনেই সংসার চলত।
পঙ্কজ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি আট বছর কিছুই করতে পারিনি। এ দিক-ও দিক ঘুরে বেড়াতাম কাজের জন্য। কিন্তু মৃদুলা কখনও আমায় বাধা দেয়নি। আমি নিজের মতো সময় নিয়ে কেরিয়ার গড়েছি।’’
পঙ্কজ জানিয়েছিলেন, তাঁর সংসারের খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য ছিল না। মৃদুলা স্কুলে পড়িয়ে প্রতি মাসে যা রোজগার করতেন তা দিয়েই সংসার চলত।
পঙ্কজের দাবি, মৃদুলা আট বছর বিনা বাক্যব্যয়ে পঙ্কজের জীবনে শক্ত খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘‘মৃদুলা আমার সঙ্গে ছিল বলেই আমায় রাতে স্টেশনে সময় কাটাতে হয়নি।’’