রোজগার শুরু করেছিলেন জীবন বিমার এজেন্ট হিসাবে। কিন্তু স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করার। জমানো টাকা খরচ করে ব্যবসা শুরুও করেন। কিন্তু প্রথমে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। রাতারাতি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে ভারতের প্রবীণতম ধনকুবেরের তালিকায় শীর্ষে নাম লিখিয়েছেন লক্ষ্মণদাস মিত্তল।
সূত্রের খবর, লক্ষ্মণদাসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি টাকা। সম্পত্তির নিরিখে তাঁর নাম সারা ভারতে ধনীদের তালিকায় ৮২ নম্বরে থাকলেও তিনি ভারতীয় ধনকুবেরদের মধ্যে প্রবীণতম।
৯৩ বছর বয়সেও প্রতি দিন অফিসে যান লক্ষ্মণদাস। ট্র্যাক্টর প্রস্তুতকারী সংস্থা রয়েছে তাঁর। কিন্তু কেরিয়ারের প্রথমে জীবন বিমা সংস্থার এজেন্ট ছিলেন তিনি।
১৯৩১ সালে পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে জন্ম লক্ষ্মণদাসের। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ইংরেজি এবং উর্দু ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য স্বর্ণপদকও পান লক্ষ্মণদাস।
কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৫৫ সালে চাকরি শুরু করেন লক্ষ্মণদাস। জীবন বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করেন তিনি। কিন্তু চোখে স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করার।
কর্মরত থাকাকালীন মাসিক বেতনের অধিকাংশই সঞ্চয় করতেন লক্ষ্মণদাস। পরে সঞ্চয়ের টাকা খরচ করে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
হোশিয়ারপুরের স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে গম পেষাইয়ের যন্ত্র তৈরি করতে শুরু করেন লক্ষ্মণদাস। তার পর ১৯৭০ সালে সেগুলি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তবে সেই ব্যবসা থেকে লক্ষ্মীলাভ করেননি তিনি। বরং সমস্ত সঞ্চয় হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যান।
স্বপ্নভঙ্গ হয় লক্ষ্মণদাসের। প্রথম ব্যবসা থেকে সরে গিয়ে আবার চাকরি করে টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন লক্ষ্মণদাস। কিন্তু স্বপ্ন বিসর্জন দেননি। যে পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন তা দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
অবসর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাক্টর প্রস্তুতকারী সংস্থা খোলেন লক্ষ্মণদাস। শেয়ারদর অনুযায়ী, সারা ভারতে ট্র্যাক্টর প্রস্তুতকারী সংস্থা হিসাবে তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে লক্ষ্মণদাসের সংস্থা।
বর্তমানে লক্ষ্মণদাসের বয়স ৯৩ বছর। এখনও নিয়মিত দফতরে যান তিনি। ব্যবসার কাজ এখনও সামলে চলেছেন তিনি।
সূত্রের খবর, লক্ষ্মণদাসের দুই পুত্র এবং নাতিও তাঁর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সারা বিশ্বে মোট ১২০টি দেশে ব্যবসা প্রসারিত করেছেন তিনি।
যে স্বপ্নপূরণের জন্য দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলেন লক্ষ্মণদাস, সেই স্বপ্নই তাঁকে ধনকুবেরে পরিণত করেছে। ৯৩ বছর বয়সে ২৩ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক হয়ে নজির গড়েছেন তিনি।