আশির দশকে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন ধর্মেন্দ্রের পুত্র সানি দেওল। ১৯৮৩ সালে প্রথম ছবি মুক্তি পায় সানির। তার পর এক বছরের ব্যবধান। একটি মাত্র হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের পর ছাঁদনাতলায় বসে পড়েন সানি। পূজা দেওলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেতা। তার পর শুরু হয় কেরিয়ারে উত্তরণ।
বাবার পদাঙ্কই অনুসরণ করছেন সানির পুত্র কর্ণ দেওল। অভিনয় জগতে পদার্পণ করেছেন চার বছর আগে। কিন্তু অভিনয় করেছেন মাত্র একটি ছবিতে। আর তার পর ঠিক বাবার মতোই প্রথম ছবি মুক্তির পর ছাঁদনাতলায় বসার আয়োজন করছেন কর্ণ।
‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ’ সংলাপ যাঁর মুখে জনপ্রিয় হয়েছে, সেই অভিনেতাই আজ তাঁর পুত্রের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করছেন। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, আসন্ন জুন মাসেই বিয়ে করে ফেলবেন তারকা-সন্তান।
তবে, দেওল পরিবারের আদরের পুত্র কর্ণ তাঁর বিয়ে নিয়ে মাতামাতি চান না। বলিপাড়া সূত্রে খবর, পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বলিউডের হাতেগোনা কয়েক জন তারকা উপস্থিত থাকবেন সেই অনুষ্ঠানে।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, মুম্বইয়ের বান্দ্রার একটি বিলাসবহুল হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। কর্ণের বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে হইচই পড়ে গিয়েছে। পাত্রীর নাম কী? কী-ই বা তাঁর আসল পরিচয়? বলিউডের কোনও নবাগতা অভিনেত্রী নন তো? এ সব প্রশ্ন নিয়েই উত্তাল নেটব্যবহারকারীরা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ধর্মেন্দ্র এবং প্রকাশ কউরের বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপনের দিনেই নাকি বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেছিলেন কর্ণ। জন্মদিনের পার্টিতেও নাকি জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে দেখা যায় কর্ণকে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দৃশা রায়ের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন কর্ণ। গ্ল্যামার জগতের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ নেই তাঁর। তবে, পারিবারিক সূত্রে নাকি ফিল্মপাড়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন দৃশা।
ছবি নির্মাতা বিমল রায়ের প্রপৌত্রী হন দৃশা। ‘দেবদাস’, ‘দো বিঘা জমিন’, ‘পরিণীতা’র মতো ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিমল। তবে, অভিনয় জগৎ থেকে দূরেই রয়েছেন দৃশা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, দুবাইয়ে একটি ট্রাভেল সংস্থার ম্যানেজার পদে কাজ করেন দৃশা। তবে এ নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন বলিপাড়ার একাংশ।
কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, দৃশার আসল নাম দৃশা আচার্য। কর্ণের ছোটবেলার বান্ধবী তিনি। তাঁকেই মন দিয়ে ফেলেছেন কর্ণ।
কর্ণ তাঁর জীবনসঙ্গিনী এবং ব্যক্তিগত জীবন গোপন এবং পাপারাৎজিদের ক্যামেরার আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। এমনকি, বিয়ের সঠিক তারিখও প্রিয়জনেরা ছাড়া আর কেউ জানেন না।
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর দেওল পরিবারে জন্ম কর্ণের। মুম্বইয়ে জুহুর একটি স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পরেই দেওল পরিবারের প্রযোজনা সংস্থার কাজে যুক্ত হন তিনি।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা ২’ ছবির সহ-পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন কর্ণ। ২০১৯ সালে সানি দেওল পরিচালিত ‘পল পল দিল কে পাস’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন কর্ণ।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটিতেও কাজ করেছেন কর্ণ। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভেল্লে’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কর্ণের সঙ্গে অভয় দেওল এবং অন্যা সিংহ এই ছবিতে কাজ করেছেন।
খুব শীঘ্রই ‘আপনে ২’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে কর্ণকে। কিন্তু তার আগে বিয়ে সেরে ফেলতে চান তারকা সন্তান। তবে একটি ছবিতে অভিনয় করেই নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি করে ফেলেছেন কর্ণ। ইনস্টাগ্রামে অভিনেতার অনুরাগী সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে কর্ণ জানিয়েছিলেন, তিনি সানির পুত্র বলে তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। স্কুলে পড়াকালীন নাকি এই কারণে মারধরও করা হত তাঁকে।
কর্ণ বলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি স্পোর্টসে নাম দিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছেলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। হঠাৎ আমাকে উপরের দিকে তুলে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলেছিল ওরা। মারপিট করছি না দেখে ওরা সবাই মিলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল। আমি আদতেও সানি দেওলের পুত্র কি না, সে প্রশ্নও করছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সে দিন।’’
পরিচয় নিয়ে বার বার স্কুলে হেনস্থা করা হলেও কোনও শিক্ষক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বলে দাবি করেন কর্ণ। স্কুলের আরও একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এক বার অ্যাসাইনমেন্টে ভাল ফল করতে পারিনি বলে ক্লাসের মাঝখানে এক শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, আমি শুধুমাত্র বাবার চেক লিখতে পারি। তা ছাড়া আর কিছু পারি না।’’
তবে কর্ণ সব সময় তাঁর মাকে পাশে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মা আমার সব সময়ের সঙ্গী। খারাপ সময়ে মা আমায় সামলায়।’’
কর্ণ বলেন, ‘‘স্কুলের মঞ্চেই প্রমাণ করে দিই যে আমি সানি দেওলের পুত্র। আমার পারফরম্যান্স দেখে সকলে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আমার খুব আনন্দ হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন আমি সব রকম বাঁধন ভেঙে ফেলেছি। আমি মুক্ত।’’