২০১৮-র ১১ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে মারা যান ভারতের সেনা অফিসার দীপক নেনওয়াল। স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন থমকে গিয়েছিল জ্যোতির কাছে।
তিন বছর পর সেই জ্যোতিই মৃত স্বামীকে গর্বিত করে তুললেন চেন্নাইয়ের অফিসারস ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করে বেরিয়ে।
তিন বছর আগে ওই ঘটনা যখন ঘটেছিল ঘটনাস্থলেই দীপকের মৃত্যু হয়নি। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা শরীর নিয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলেন অন্যান্যরা। পরের ৪০টি দিন শয্যাশায়ী অবস্থাতেই চিকিৎসা চলেছিল তাঁর।
তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী জ্যোতি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিলেন। দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি কী করবেন, কী ভাবে তাঁদের একা বড় করে তুলবেন, এই চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর শরীরও ক্রমে ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল।
জ্যোতির কোনও উপার্জন ছিল না। এক দিন মায়ের পরামর্শে এবং সন্তানদের স্বার্থে শোক ভুলে স্বনির্ভর হওয়ার মনস্থির করে ফেললেন। স্বামীর মতো সেনা অফিসার হওয়ার তোরজোড় শুরু করে দিলেন তিনি। সেনা অফিসার হয়ে স্বামীর মৃত্যুর বদলা নিতে চান তিনি।
কী ভাবে প্রস্তুতি নেবেন তার কোনও ধারণা ছিল না জ্যোতির। কিন্তু তাঁর আগ্রহ দেখে পরিচিত দুই সেনা অফিসার তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন। তাঁকে সমস্ত দিক থেকে সাহায্য করেন তাঁরা।
সশস্ত্র সেনা অফিসার হিসাবে নিজেকে দেখতে চাইছিলেন জ্যোতি। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেন তিনি।
ইচ্ছা থাকলে কী না হয়! জ্যোতির ইচ্ছাশক্তিই তাঁকে সেই কঠিন পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়। খুব সফল ভাবে ১১ মাস প্রশিক্ষণের কঠিন সময়ও কাটিয়ে ফেলেছেন তিনি।
চেন্নাইয়ে তাঁর প্রশিক্ষণ হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শেষে লেফটেন্যান্ট হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি।
ন’বছরের মেয়ে লাবণ্য এবং সাত বছরের ছেলে রেয়াংশের কাছে গর্বের কারণ জ্যোতি। বাবার জন্য তাদের যতটা গর্ব ছিল, সেনার পোশাক পরা কাউকে দেখলেই যতটা সম্ভ্রম জেগে উঠত তাদের ছোট হৃদয়ে, এখন ঠিক তেমনটাই হয় মাকে দেখে।