অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ক’জন আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন! যাঁরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন, তাঁরাই তো ‘বাজিগর’। উত্তরাখণ্ডের তৃপ্তি ভট্ট তেমনই একটি স্বপ্নের পিছনে দৌড়েছিলেন। কোনও বাধাই মানেননি। আর তাতেই সফল হয়েছেন।
আইপিএস অফিসার হতে চেয়েছিলেন তৃপ্তি। পছন্দের সেই পেশা বেছে নিতে একের পর এক আকর্ষণীয় চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে দু’বার ভাবেননি তিনি। তবে এ জন্য তাঁকে আফসোস করতে হয়নি। বরং সেই সব চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন বলেই না লক্ষ্যপূরণ করলেন!
উত্তরাখণ্ডের আলমোরার বাসিন্দা তৃপ্তি। পড়াশোনার পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। তাই পড়াশোনার প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল তাঁর।
৪ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। প্রথমে বীরশেবা স্কুল, পরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন তিনি।
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশের পর পন্তনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক করেন। প্রথম থেকেই মনস্থির করেছিলেন আইপিএস অফিসার হবেন।
তবে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি একই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষাতেও অংশ নিতে থাকেন। তাতে সাফল্যও আসে।
শোনা যায়, ৬টি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তৃপ্তি। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোতেও চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু কোনও চাকরিই তিনি করেননি। কারণ তিনি আইপিএস হতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে অবলীলায় একের পর এক সরকারি চাকরির প্রস্তাব ফেরান তৃপ্তি।
শুধু সরকারি নয়, একাধিক নামী বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকেও চাকরির প্রস্তাব পান তৃপ্তি। কিন্তু কোনও আকর্ষণীয় চাকরির প্রস্তাবই তাঁর মন বদলাতে পারেনি।
সেই সময় দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম। এক বার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল তৃপ্তির। তাঁকে হাতে লেখা একটি চিঠি দিয়েছিলেন কালাম।
ওই চিঠিতে অনুপ্রেরণামূলক নানা কথা লেখা ছিল। কালামের সেই চিঠি তৃপ্তিকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
আইপিএস হওয়ার জন্য ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তৃপ্তি। প্রথম বার এই পরীক্ষায় বসেই সফল হন তিনি।
২০১৩ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ১৬৫ র্যাঙ্ক করেন তৃপ্তি। আর তার পরই নিজের স্বপ্নপূরণ করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলাতেও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তৃপ্তি। জাতীয় স্তরে ১৬ এবং ১৪ কিমি ম্যারাথনে স্বর্ণপদক পেয়েছেন তিনি।
এতেই শেষ নয়, তাইকোন্ডো এবং ক্যারাটেতেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনি। তৃপ্তির এই সাফল্যের কাহিনি অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকলে যে তা পূরণ হয়, তা-ই করে দেখিয়েছেন তৃপ্তি।