ছোট পর্দা অথবা বড় পর্দা নয়, একটি মিউজ়িক ভিডিয়োতে অভিনয় করেই রাতারাতি সাফল্য পান ১৯ বছরের তরুণী। কেরিয়ারের প্রথম ছবি সলমন খান এবং অক্ষয় কুমারের মতো তারকার সঙ্গে। কিন্তু কঠিন রোগের প্রভাব পড়ে অভিনয় জীবনে। আলোর রোশনাই থেকে সরে গিয়ে এখন কী করেন ‘কাঁটা লগা’ গার্ল শেফালি জরিওয়ালা?
সত্তরের দশকে মুক্তি পাওয়া ধর্মেন্দ্র-আশা পারেখ অভিনীত ‘সমাধি’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকর ‘কাঁটা লগা’ গানটি গেয়েছিলেন। এই গানটি নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই রিমেক গানের ভিডিয়োয় প্রথম দেখা যায় শেফালিকে।
‘কাঁটা লগা’ রিমেক গানটির ভিডিয়ো মুক্তি পেতেই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শেফালি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯ বছর। কেরিয়ারের প্রথম কাজ। নিজের নামের চেয়ে ‘কাঁটা লগা’ গার্ল হিসাবেই বেশি পরিচিত হয়ে যান তিনি।
রাতারাতি চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠেন শেফালি। মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় থেকে এক লাফে তিনি পৌঁছে যান বড় পর্দায়। ২০০৪ সালে ডেভিড ধওয়ানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মুঝসে শাদি করোগি’। সলমন খান, অক্ষয় কুমার এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস অভিনীত এই ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেন শেফালি।
সলমন, অক্ষয় এবং প্রিয়ঙ্কার মতো তারকার সঙ্গে কেরিয়ারের প্রথম ছবি। কিন্তু তার পর আর বড় পর্দায় দেখা গেল না শেফালিকে। কঠিন রোগে ভুগছিলেন বলে তার প্রভাব পড়ে অভিনেত্রীর কেরিয়ারেও।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে শেফালি জানিয়েছিলেন যে, ১৫ বছর বয়স থেকে মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। পড়াশোনা নিয়ে বাড়তি চাপের কারণেই নাকি মৃগীতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেছিলেন, “প্রায় এক দশক এই রোগ বয়ে নিয়ে চলা একটা চ্যালেঞ্জ। ঘন ঘন মেজাজ বদল, উদ্বেগজনিত সমস্যা আমার স্কুলজীবন এবং সামাজিক মেলামেশার উপর প্রভাব ফেলেছিল। সমস্ত আশা ফুরিয়ে গিয়েছিল। আত্মবিশ্বাসও খুব কমে গিয়েছিল।”
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হত শেফালিকে। অভিনেত্রীর মন্তব্য, “যখন-তখন যে কোনও জায়গায় মৃগী রোগ আমার মাথায় চেপে বসত। বিশেষ করে ‘কাঁটা লগা’র পর যখন আমি মঞ্চে পারফর্ম করতাম, বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ঘুরতে হত, তখনও এই রোগ আমাকে চেপে ধরত।”
ধীরে ধীরে মৃগী রোগ থেকে মুক্তি পান শেফালি। তিনি বলেছিলেন, “চিকিৎসকদের সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। মানসিক ভাবে আমি শক্তিশালী হয়েছি, শারীরিক ভাবেও ফিট হয়েছি।” এখন আর মৃগী রোগে আক্রান্ত নন তিনি। তবে এই রোগের কারণেই মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন অভিনেত্রী।
১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর গুজরাতের আমদাবাদে জন্ম শেফালির। বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর গুজরাতের একটি কলেজে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন তিনি।
কলেজে পড়াকালীন ‘কাঁটা লগা’ গানের ভিডিয়োয় অভিনয়ের প্রস্তাব পান শেফালি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি নিজেকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে চেয়েছিলেন। মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করার জন্য উৎসাহী ছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু বাবা-মা রাজি ছিলেন না।
সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি যেন পড়াশোনা শেষ করে তার পর অভিনয়ে নামি। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসাবে আমাকে সাত হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছিল। আমি এই সুযোগ ছাড়তে চাইনি। প্রথমে মাকে রাজি করাই। তার পর মায়ের সঙ্গে বাবার কাছে যাই। আমি আর মা দু’জনে মিলে বাবাকে রাজি করিয়েছিলাম।’’
‘কাঁটা লগা’র ভিডিয়োটি মুক্তি পাওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান শেফালি। সেই প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভিডিয়ো মুক্তি পাওয়ার পর যেন এক নিমেষে সব বদলে গেল। আমার মনে হত আমি যেন রূপকথায় বাঁচছি।’’
২০০২ সালে ‘কভি আর কভি পার’ নামে আরও একটি রিমেক গানের ভিডিয়োয় অভিনয় করেন শেফালি। দু’বছর পর ২০০৪ সালে আরও একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় দেখা যায় অভিনেত্রীকে।
২০০৪ সালে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান শেফালি। ‘মুঝসে শাদি করোগি’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তার পর আর কোনও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেননি শেফালি। ২০১১ সালে ‘হুদুগারু’ নামের কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
সঙ্গীত পরিচালক হরমিত সিংহের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শেফালি। ২০০৪ সালে হরমিতের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।
২০০৯ সালে হরমিতের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শেফালির। অভিনেত্রীর দাবি, তাঁর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন হরমিত। থানায় হরমিতের বিরুদ্ধে নাকি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে ‘বুগি উগি’ রিয়্যালিটি শোয়ে দেখা যায় শেফালিকে। কানাঘুষো শোনা যায়, বিচ্ছেদের পর হিন্দি ধারাবাহিকের অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু সেই সম্পর্কেও ইতি টানেন দুই তারকা।
এর পর টেলিভিশনের খ্যাতনামী তারকা পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান শেফালি। ২০১২ সালে নাচের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে জুটি বেঁধে অংশগ্রহণ করেন দুই তারকা।
দীর্ঘকালীন সম্পর্কে থাকার পর ২০১৪ সালে পরাগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন শেফালি। বিয়ের এক বছরের মধ্যে আবার জুটি বেঁধে নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তারকা-দম্পতিকে।
২০১৬ সালে বোনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্যবসা শুরু করেন শেফালি। দুবাইয়ে দুই বোন মিলে একটি কোচিং সংস্থা খোলেন।
২০১৯ সালে সম্প্রচারিত ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন শেফালি। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছনোর আগেই শো থেকে বেরিয়ে যান অভিনেত্রী।
২০১৮ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বেবি কাম না’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় শেফালিকে। এই সিরিজ়ে অভিনয় করেন শ্রেয়স তালপাড়ে এবং চাঙ্কি পান্ডের মতো বলি অভিনেতারা।
২০১৯ সালে আবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় শেফালিকে। ‘বু সব কি ফাটেগি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেন তিনি। তুষার কপূর, মল্লিকা শেরাওয়াত এবং কৃষ্ণ অভিষেককে এই সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায়।
এক বছরের ব্যবধানে পর পর দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে শেফালিকে অভিনয় করতে দেখা গেলেও প্রচারে আসেননি অভিনেত্রী। ২০১৯ সালের পর পাঁচ বছর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে ছিলেন তিনি।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, চলতি বছরে ছোট পর্দায় আত্মপ্রকাশ করবেন শেফালি। ‘শয়তানি রসমে’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যাবে।
অভিনয় থেকে দূরে সরে গেলেও সমাজমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন শেফালি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ৩২ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।