এক দিকে তিনি অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার এবং ববি দেওলের মতো বলিপাড়ার একাধিক তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে বলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়, ১৯ বছরের বিবাহিত সম্পর্ক নাকি ভেঙে ফেলতে চলেছেন অভিনেত্রী-পরিচালক দিব্যা খোসলা কুমার।
টি-সিরিজ়ের কর্ণধার ভূষণকুমারকে বিয়ে করে রাতারাতি ইন্ডাস্ট্রির নজরে চলে আসেন দিব্যা। কম বয়সেই তিনি বিয়ে করেন ভূষণকে। বিয়ের পর তিনি হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির খ্যাতনামী প্রযোজনা সংস্থার মালিক। ভূষণকুমারের সঙ্গে প্রায় দুই দশকের বিবাহিত জীবন দিব্যার। হঠাৎ বলিপাড়ায় তাঁদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন কেন শোনা যাচ্ছে?
১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম দিব্যার। বাবা-মায়ের সঙ্গে দিল্লিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তিনি। তাঁর বাবা দিল্লিতে একটি ছাপাখানার মালিক ছিলেন।
শৈশব থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল দিব্যার। স্কুল এবং কলেজে থাকাকালীন প্রায় সমস্ত পরীক্ষায় ভাল ফল করতেন তিনি। দিল্লিতে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে বাণিজ্য নিয়ে কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
কিন্তু অভিনয়ে নামতে চান বলে কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বইয়ে চলে যান দিব্যা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে দিব্যা জানিয়েছিলেন যে, ছোটবেলায় তেমন সিনেমা দেখার সুযোগ পাননি তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি সিনেমা তেমন দেখিনি। সারা দিন পড়াশোনা করতাম। সিনেমা দেখার জন্য মা উৎসাহও দিত না। একসঙ্গে খুবই কম ছবি দেখেছিলাম আমরা।’’
১৮ বছর বয়সে বিজ্ঞাপনের জন্য ফোটোশুট করেন দিব্যা। দু’বছর পর মুম্বই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন বলে পরিশ্রম করাও শুরু করেন তিনি।
মুম্বইয়ে যাওয়ার পর লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতেন দিব্যা। মেসে ভাড়া থাকতেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, এক বছরের মধ্যে সাত সাতটি মেস পরিবর্তন করেছিলেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে বহু মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা যায় দিব্যাকে। কেরিয়ারের প্রথম মিউজ়িক ভিডিয়োয় বলি অভিনেতা সলমন খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ফাল্গুনী পাঠক, অভিজিৎ ভট্টাচার্য এবং কুণাল গাঞ্জাওয়ালের মতো সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে মিউজ়িক ভিডিয়োয় কাজ করেন তিনি।
২০০৪ সালে তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন দিব্যা। এই ছবিতে দক্ষিণী অভিনেতা উদয় কিরণের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় দিব্যাকে।
২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অব তুমহারে হাওয়ালে ওয়াতান সাথিয়ো’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন দিব্যা। অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার এবং ববি দেওলের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এই ছবিতে অক্ষয়ের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
তবে ‘অব তুমহারে হাওয়ালে ওয়াতন সাথিয়ো’ ছবিতে অভিনয় করে বিশেষ লাভ হয়নি দিব্যার। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই ছবি। পেশাগত জীবনে এই ছবি কোনও প্রভাব না ফেললেও দিব্যার ব্যক্তিগত জীবনে এই ছবির প্রভাব অনেকটাই।
‘অব তুমহারে হাওয়ালে ওয়াতন সাথিয়ো’ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে ভূষণকুমারের সঙ্গে আলাপ হয় দিব্যার। এই ছবির সঙ্গীত নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভূষণকুমারের সংস্থা। প্রথম আলাপেই একে অপরকে ভাল লেগে যায় দিব্যা এবং ভূষণকুমারের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, প্রথম আলাপেই নিজেদের ফোন নম্বর আদানপ্রদান করেন ভূষণকুমার এবং দিব্যা। দু’জনের সম্পর্কও ধীর লয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি জানায় দিব্যার পরিবার। পরে ভূষণকুমার তাঁর বোনের বিয়ে উপলক্ষে দিব্যার পরিবারকে নিমন্ত্রণ জানান। ভূষণকুমার এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে মেশার পর বিয়েতে মত দেয় দিব্যার পরিবার। ২০০৫ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, প্রথম ছবি ফ্লপ হওয়ার পর আর কোনও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পাননি দিব্যা। বিয়ের পর অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে ধীরে ধীরে প্রযোজনায় পা রাখেন তিনি।
মুম্বইয়ে সিনেমাটোগ্রাফি এবং এডিটিংয়ের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন দিব্যা। টি সিরিজ়ের তরফে মিউজ়িক ভিডিয়ো পরিচালনা করা শুরু করেন তিনি।
মিউজ়িক ভিডিয়ো পরিচালনার পর বড় পর্দায় ছবি পরিচালনার কাজে হাত দেন দিব্যা। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইয়ারিয়া’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পরিচালনায় কাজে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ছবিটি বক্স অফিসে সফলও হয়। এই ছবির পাঁচটি নাচের দৃশ্য কোরিয়োগ্রাফও করেন দিব্যা।
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সনম রে’ নামের রোম্যান্টিক ঘরানার ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দিব্যা। তা ছাড়া টি সিরিজ়ের একাধিক হিন্দি ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন দিব্যা।
দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৭ সালে আবার অভিনয় শুরু করেন দিব্যা। ‘বুলবুল’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সত্যমেব জয়তে ২’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান দিব্যা। এই ছবিতে বলি অভিনেতা জন আব্রাহমের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।
২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইয়ারিয়া ২’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় দিব্যাকে। সমাজমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় তিনি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ৬৭ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। ইনস্টাগ্রামে দিব্যা খোসলা কুমার নামেই অ্যাকাউন্ট ছিল তাঁর। হঠাৎ নাম থেকে স্বামীর পদবি সরিয়ে ফেলতে দেখা গেল তাঁকে।
শুধুমাত্র স্বামীর পদবিই নাম থেকে মুছে ফেলেননি দিব্যা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, টি সিরিজ়কেও ইনস্টাগ্রাম থেকে ‘আনফলো’ করে দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনা নজরে পড়ে নেটাগরিকদের। তা হলে এ কি বিচ্ছেদের ইঙ্গিত?
বলিপাড়ায় যখন ভূষণকুমার এবং দিব্যার বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে তখন টি-সিরিজ়ের তরফে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণে নামের পাশ থেকে কুমার পদবি সরিয়েছেন দিব্যা।
জ্যোতিষ মেনেই নাকি দিব্যা তাঁর নামের সঙ্গে আর কুমার পদবি ব্যবহার করবেন না। এটা সম্পূর্ণ দিব্যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কুমার বাদ দিয়ে দিব্যা নামের পরে একটা ‘এস’ লিখবেন বলে প্রযোজনা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের কোনও সম্পর্ক নেই। দিব্যার একান্ত ব্যক্তিগত এই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা না করার অনুরোধ করেছে প্রযোজনা সংস্থা। যদিও এই বিষয়ে এখনও মুখ খোলেননি দিব্যা বা ভূষণ কেউই।
এই মুহূর্তে বলিউডের প্রতিষ্ঠিত প্রযোজক ভূষণকুমার। ২০২২ সালের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ভূষণকুমারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে স্বামী ভূষণকুমার এবং ছেলে রুহানকে নিয়ে সংসারে ব্যস্ত দিব্যা।