অভিনয়ে নামার স্বপ্ন ছিল না কোনও দিনই। পরিবারের অর্থাভাবের কারণে রোজগার করার তাড়া ছিল অভিনেতার। বিজ্ঞাপন সংস্থা থেকে কাজ করার শুরু। তার পর ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের জগতে পরিচিতি বাড়িয়ে বর্তমানে হিন্দি ফিল্মজগতের অ্যাকশন ঘরানার জনপ্রিয় অভিনেতা জন আব্রাহম।
১৯৭২ সালে ১৭ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম জনের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। অর্থাভাবে দিন কাটাত তাঁর পরিবার।
জনের বাবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বন্ধুর সঙ্গেই হাত মিলিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন অভিনেতার বাবা। কিন্তু সেই ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেননি কোনও দিন। উল্টে ক্ষতি হয়েছিল লক্ষ লক্ষ টাকার।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ব্যবসায় জনের বাবাকে ঠকিয়ে তিন লক্ষ টাকার প্রতারণা করেন তাঁর বন্ধু। ব্যবসায় লোকসানের প্রভাব পড়ে তাঁদের সংসারে। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নিজের শৈশবের কথা বলেছিলেন জন।
জন বলেছিলেন, ‘‘আমাদের জীবনে এমন দিনও এসেছিল যখন দিনের শেষে পাতে আদৌ কোনও খাবার পড়বে কিনা তা নিয়েও চিন্তা করতে হত। আমার বাবা এক দিন নিজেকে সামলাতে না পেরে আমার সামনেই ভেঙে পড়েছিলেন। সেই সময়ও আমায় কিছু কথা বলেছিলেন যা আমি আজও মনে রেখেছি।’’
জন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন আমি যেন কোনও দিন চুরি না করি। কারও কাছে টাকাপয়সা ধার না নিই। এমনকি কাউকে যেন টাকা ধারও না দিই।’’
জন যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন তখন থেকেই অর্থাভাবের সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ের কলেজ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পর ১৯৯৯ সালে সেখানকার এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি শুরু করেন জন।
চাকরি ছেড়ে মডেলিং শুরু করেন জন। মডেলিংজগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। সিঙ্গাপুর, হং কং, লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কে গিয়েও মডেলিং করেন তিনি।
জন এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা যখন অর্থাভাবের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন তখন আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে এক দিন আমি স্রেফ আমার মুখ দেখিয়ে রোজগার করব।’’
মডেলিংয়ে জনপ্রিয় হওয়ার পর অভিনয়জগতে পা রাখেন তিনি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সঞ্জয় দত্তের মতো দেখতে এক নবাগত অভিনেতার সন্ধানে ছিলেন বলি পরিচালক মহেশ ভট্ট। জনের সঙ্গে সঞ্জয়ের মিল খুঁজে পাওয়ায় তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন মহেশ।
২০০৩ সালে ‘জিসম’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন জন। বিপাশা বসুর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। বক্স অফিসে হিট হয় জনের কেরিয়ারের প্রথম ছবি।
প্রথম ছবি হিট হলেও পরবর্তী ছবিগুলি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি জনের। ২০০৪ সালে ‘ধুম’ ছবিটি মুক্তি পেলে হিন্দি ফিল্মজগতে জনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
কখনও রোম্যান্টিক ছবিতে কখনও বা কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেন জন। ধীরে ধীরে অ্যাকশন ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ২০০৬ সালে হলিউডের একটি ছবিতেও অভিনয়ের সুযোগ পান জন। কিন্তু তিনি হিন্দি ফিল্মজগৎ ছেড়ে যেতে চাননি। তাই সেই ছবির প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
‘মুম্বই সাগা’, ‘সত্যমেব জয়তে ২’, ‘অ্যাটাক’, ‘এক ভিলেন রিটার্নস’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন জন। এই ছবিগুলি বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
২০২৩ সালে শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে অন্য দিকে মোড় নেয় জনের কেরিয়ার। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার কাজেও হাত লাগিয়েছেন তিনি।