প্রায় দুই দশক ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত। কৌতুকে মাখা চরিত্র বড় পর্দায় নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলায় সিদ্ধহস্ত তিনি। বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতিও গড়ে তুলেছেন তিনি। সইফ আলি খান, সলমন খান, অভিষেক বচ্চন, অজয় দেবগন, আর মাধবন, ইরফান খানের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে বলিপাড়ার কমেডি ঘরানার খ্যাতনামী অভিনেতাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন দীপক ডোবরিয়াল।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, স্রেফ খাবারের লোভে নাকি অডিশন দিতে গিয়েছিলেন দীপক। বিশাল ভরদ্বাজের ছবি ‘ওমকারা’র জন্য অডিশন নিচ্ছিলেন ছবিনির্মাতারা। সেই খবর দীপককে তাঁর বন্ধু দেন। কিন্তু অডিশন দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না দীপকের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দীপককে খাবারের লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু। সেই টানেই অডিশন দিতে যান দীপক। চাউমিন খাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে ‘ওমকারা’ ছবির জন্য অডিশন দেন তিনি। অডিশনে পাশ করেন দীপক।
১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ডের সাতপৌলি গ্রামে জন্ম দীপকের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে শৈশব কাটান তিনি। তাঁর বাবা সরকারি কর্মচারী ছিলেন।
দীপকের যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তাঁর বাবার বদলির চাকরি কারণে সপরিবারে দিল্লি চলে যান তাঁরা। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন দীপক।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার চেয়ে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল দীপকের। স্কুলে থাকাকালীনই নাটকে অভিনয় করেন তিনি। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার পর একটি নাটকের দলে যুক্ত হন তিনি।
দীপকের বাবা চাইতেন না যে তাঁর পুত্র অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ে তুলুক। অভিনয়জগতে কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করতেন দীপকের বাবা। তাই তিনি চাইতেন দীপক কোনও কলেজে ভর্তি হোক অথবা কোনও চাকরি করুক।
দীপকের জ্যাঠামশাই চাকরি সূত্রে বছরের ছ’মাস আন্টার্কটিকায় থাকতেন। ভারতে ফিরে আসার পর তিনি জানতে পারেন যে, দীপক অভিনয়ে নামতে চান। দীপকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন তিনি। এমনকি দীপকের বাবাকে রাজিও করিয়ে ফেলেন।
বাবার অনুমতি নিয়ে দিল্লির কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেখানকার নাটকের দলে যুক্ত হন দীপক। পরে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার জন্য দিল্লি থেকে মুম্বই চলে যান তিনি।
মুম্বই যাওয়ার পর অন্য একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন দীপক। সেই দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর নাটকের জগতে পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তিনি। ছ’বছর পর সেই দল ছেড়ে বেরিয়ে যান। তার পর অন্য একটি নাটকের দলের সঙ্গে জুড়ে যান দীপক।
নাটকে অভিনয় করার সূত্রে বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান দীপক। ২০০২ সালে ‘দিল হ্যায় তুমহারা’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি। তার চার বছর পর ২০০৬ সালে ‘ওমকারা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
‘শৌর্য’, ‘ডাঁয়ে ইয়া বাঁয়ে’, ‘গুলাল’, ‘দিল্লি ৬’, ‘মকবুল’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান দীপক। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তনু ওয়েড্স মনু’ নামের কমেডি ড্রামা ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান তিনি।
‘তনু ওয়েড্স মনু’ ছবিতে দীপকের অভিনয় দর্শকের এতটাই প্রশংসা কুড়োয় যে ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির সিক্যুয়েল ‘তনু ওয়েড্স মনু রিটার্নস’-এও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
এর পর ‘দবং ২’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’, ‘লখনউ সেন্ট্রাল’, ‘লাল কাপ্তান’, ‘আংরেজি মিডিয়াম’, ‘ভোলা’, ‘গুড লাক জেরি’, ‘ভেড়িয়া’র মতো হিন্দি ছবিতে ছবিতে অভিনয় করেন দীপক। ‘সাস বহু অউর ফ্লেমিঙ্গো’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০০৯ সালে লারা ভল্লার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন দীপক। তাঁর স্ত্রী পেশায় সহকারী পরিচালক। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে মুম্বইয়ে থাকেন তিনি।
দীপকের অনুরাগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ৮৮ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।