শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল ছবির প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। পরিচালনা থেকে শুরু করে অভিনয়, ছোট পর্দায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অবিনাশ সচদেও। কিন্তু তিনি জীবনে এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যে একে একে গাড়ি, বাড়ি-সহ নিজের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল অভিনেতাকে।
আর্থিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনও সুখের ছিল না অবিনাশের। বার বার সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু কোনও সম্পর্কই পরিণতি পায়নি। বার বার বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন তিনি। বর্তমানে সলমন খান সঞ্চালিত ‘বিগ বস্ ওটিটি ২’ রিয়্যালিটি শোয়ের প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছেন এই টেলি অভিনেতা।
১৯৮৬ সালের ২২ অগস্ট মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম অবিনাশের। মুম্বইয়ে জন্ম হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা গুজরাতের বরোদায়। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অবিনাশ।
মুম্বইয়ে গিয়ে প্রযোজনার কাজকর্ম শিখবেন বলে স্থির করেন অবিনাশ। ২০০৪ সাল থেকে টানা এক বছর বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।
অবিনাশের বয়স যখন সবেমাত্র ১৮ বছর, তখন তিনি মুম্বইয়ে গিয়ে ‘হাতিম’ নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকের সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করা শুরু করেন।
২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রক অন’ ছবিতে ফারহান আখতারকে প্রযোজনার কাজে সাহায্য করেছিলেন অবিনাশ। ছোট পর্দার বহু বিজ্ঞাপনেও কেরিয়ারের শুরুতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
বড় পর্দা এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করার মধ্যেই ছোট পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান অবিনাশ। ২০০৬ সালে ‘করম অপনা অপনা’ ধারাবাহিকে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কেরিয়ারের শুরুতে হিন্দি ধারাবাহিক ‘খোয়াইশ’ এবং ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’-এ খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন অবিনাশ। তবে ছোট পর্দায় তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ‘ছোটি বহু’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে। তাঁর চরিত্রটি দর্শকের মনে ধরে। এমনকি এই ধারাবাহিকের হাত ধরে তাঁর জীবনে অন্য অধ্যায়ও শুরু হয়।
২০০৮ সাল থেকে ছোট পর্দায় ‘ছোটি বহু’ ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হয়। এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা এতই বৃদ্ধি পায় যে টানা চার বছর এটি সম্প্রচারিত হয়। এই ধারাবাহিকে অবিনাশের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন রুবিনা দিলাইক। পেশার খাতিরে মেলামেশা করতে গিয়ে রুবিনাকে ভালবেসে ফেলেন অবিনাশ।
রুবিনা এবং অবিনাশ সম্পর্কেও আসেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কও কোনও পরিণতি পায়নি। ২০১২ সালে দুই তারকা তাঁদের সম্পর্কে ইতি টানেন। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে অন্য অভিনেত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন অবিনাশ। কিন্তু বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন অভিনেতা।
নাচের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অবিনাশ জানান, রুবিনা এবং তাঁর সম্পর্ক অতিরিক্ত অধিকারবোধ থাকার কারণে ভেঙে গিয়েছে। অবিনাশ বলেন, ‘‘আমি এবং রুবিনা আমাদের জীবনের কোনও কিছু নিয়েই নিরাপদ বোধ করতাম না। কেউই একে অপরকে নিজেদের মতো বাঁচতে দিইনি।’’
রুবিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ‘ইস প্যার কো কেয়া নাম দুঁ? এক বার ফির’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান অবিনাশ। টেলি অভিনেতা বরুণ সোবতি আগে যে চরিত্রে অভিনয় করতেন সেই চরিত্রেই দেখা গিয়েছিল অবিনাশকে। এই কারণে দর্শকের রোশে পড়েছিলেন অবিনাশ।
এক সাক্ষাৎকারে অবিনাশ জানান, তাঁকে বরুণের পরিবর্তে দর্শক মেনে নিতে পারছিলেন না। সমাজমাধ্যমেও তাঁকে আক্রমণ করা হচ্ছিল বলে দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু অবিনাশ নীরব ছিলেন। অভিনেতা বলেন, ‘‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কাজের মাধ্যমে জবাব দেব। যে সব দর্শক প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁরাই পরে আমার অভিনয় পছন্দ করেছিলেন।’’
‘ইস প্যার কো কেয়া নাম দুঁ? এক বার ফির’ ধারাবাহিকে অবিনাশের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন শাল্মলী দেসাই। পেশার খাতিরে শাল্মলীর সঙ্গে আলাপ হয় অবিনাশের। সেই আলাপ পরে প্রেমে গড়ায়। ২০১৫ সালে শাল্মলীর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেতা।
কিন্তু শাল্মলী এবং অবিনাশের সংসার সুখের ছিল না। বিয়ের দু’বছরের মাথায় ২০১৭ সালে দু’জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। খেলা সংক্রান্ত একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করেন অবিনাশ।
ইউটিউব মাধ্যমে নিজস্ব একটি চ্যানেলও খোলেন অবিনাশ। সেই চ্যানেলে ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিডিয়ো আপলোড করতেন অভিনেতা। ‘কবুল হ্যায়’, ‘বালিকা বধূ— লমহে প্যার কে’, ‘আয়ুষ্মান ভব’, ‘ম্যায় ভি অর্ধাঙ্গিনী’ ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অবিনাশকে।
২০১৯ সালে পলক পুরসওয়ানির সঙ্গে নাচের একটি রিয়্যালিটি শোয়ে যুগ্ম ভাবে অংশগ্রহণ করেন অবিনাশ। তাঁদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। টানা সাড়ে চার বছর সম্পর্কে ছিলেন দু’জন।
কিন্তু পলক এবং অবিনাশের সম্পর্কও টেকেনি। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বোঝাপড়ার অভাব থাকায় দু’জনের সম্পর্ক ভেঙে যায় বলে দাবি করেন পলক। পলক বলেন, ‘‘পেশাগত জীবনের সব রকম সমস্যা ও বুঝত। অনেক সময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে ও। কিন্তু প্রেমিক হিসাবে, সঙ্গী হিসাবে আমি ওর অভাব বোধ করতাম। দু’জন এই সম্পর্ক বাঁচানোর অনেক সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু কিছু জিনিস আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছে।’’
অবিনাশ এক সাক্ষাৎকারে জানান, অতিমারির সময় তাঁর হাতে দু’টি ছবির কাজ ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি সহায় না থাকায় ছবি দু’টির কাজ গোড়াতেই বন্ধ হয়ে যায়। উপরি রোজগারের জন্য একটি রেস্তরাঁ খোলেন অবিনাশ। কিন্তু অর্থাভাবে ডুবে যান তিনি।
দেড় বছর রেস্তরাঁ কোনও রকম ভাবে খোলা রাখলেও আর খরচ চালাতে পারেননি অবিনাশ। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘খরচ চালানোর জন্য একে একে আমি গাড়ি, বাড়ি-সহ নিজের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলাম আর আমার কাছে কিছুই ছিল না। ভাড়াবাড়িতে থাকতাম।’’
বর্তমানে সলমনের ‘বিগ বস্ ওটিটি ২’ রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশ নিয়েছেন অবিনাশ। এই শোয়ে তাঁর সহ-প্রতিযোগী হিসাবে রয়েছেন পলক।
চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ধনুশ অভিনীত ‘ভাথি’ নামের একটি দক্ষিণী ছবিতে হিন্দি সংলাপে ‘ডাবিং’-এর কাজ করেছেন অবিনাশ। অভিনেতার অনুরাগী সংখ্যা নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রামে অবিনাশের অনুরাগীর সংখ্যা দু’লক্ষের গণ্ডি ছুঁইছুঁই।