সারা দিন নম্বর সংক্রান্ত তথ্য, স্প্রেডশিট নিয়ে কারবার। কিন্তু বিনোদনজগতেই মন পড়ে থাকত কৃতি বর্মা। ‘এমটিভি রোডিজ় এক্সট্রিম’এবং ‘বিগ বস্’-এ গিয়ে যিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, সেই কৃতির নামই উঠেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অভিযোগের খাতায়। ২৬৩ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের মামলায় নাম জড়িয়েছে কৃতির।
১৯৯৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জন্ম কৃতির। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে দিল্লিতেই থাকতেন কৃতি। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ছোট থেকেই সরকারি আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কৃতি।
আয়কর বিভাগে কাজ করার ইচ্ছা ছিল কৃতির। স্থির করে ফেলেছিলেন যে ওই দফতরেই চাকরি করবেন তিনি। লক্ষ্য স্থির করে মন দিয়ে পড়াশোনার সময়ও বাড়িয়ে দেন কৃতি। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।
আয়কর বিভাগে চাকরি পান কৃতি। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে আঁকেন তিনি। কিন্তু বাস্তব জীবনে মনে হয় স্বপ্নরঙের স্বাদ পুরোদস্তুর আত্মস্থ করতে পারছিলেন না কৃতি। তার মন ধীরে ধীরে বিনোদনজগতের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।
২০১৭ সালে দিল্লি ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে যান কৃতি। অভিনয় শিখবেন বলে স্থির করেন তিনি। রিয়্যালিটি শো থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দিয়ে বেড়াতেন কৃতি। ২০১৮ সালে ‘এমটিভি রোডিজ়’ রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পান তিনি।
রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়কর বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন কৃতি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে কৃতি বলেছিলেন, ‘‘চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত খুব কঠিন ছিল। আয়কর বিভাগে চাকরি করা আমার স্বপ্ন ছিল। তা পিছনে ফেলে এমন এক দিকে যাত্রাশুরু করছি যা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।’’
২০১৮ সালে ‘এমটিভি রোডিজ়’ রিয়্যালিটি শোয়ের পাশাপাশি একই বছর ‘বিগ বস্’-এর দ্বাদশ পর্বে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন কৃতি। এর মাধ্যমে বিনোদনজগতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
হঠাৎ ‘বিগ বস্’-এ কেন অংশগ্রহণ করেছিলেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে কৃতি জানান, বলি অভিনেতা সলমন খানের অন্ধ ভক্ত তিনি। ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সলমন। সে কারণেই ‘বিগ বস্’-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পারফর্মও করেন কৃতি। ইতিমধ্যেই দেড়শোটি জায়গায় নাচের পারফর্ম্যান্স করেন তিনি। এমনকি বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের সঙ্গেও মঞ্চে পারফর্মও করেন কৃতি।
মিকা সিংহ, বাদশা, হানি সিংহ, নেহা কক্করের মতো সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে মঞ্চে পারফর্ম করেন কৃতি। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও নজর কাড়েন তিনি।
চলতি বছরে জ়িম্বাবয়েতে টি১০ ক্রিকেট লিগে পারফর্ম করেন কৃতি। ১১০টি দেশে এই অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল।
বেশ কয়েক মাস ধরেই ইডির নজরে ছিলেন কৃতি। ২৬৩ কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের মামলায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর। এ বার টিডিএস কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি।
ইডি যে চার্জশিট পেশ করেছে তাতে মোট ১৪ জনের নাম রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন আয়কর পরিদর্শক তানাজি মণ্ডল অধিকারী। কৃতি এবং তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক ভূষণ পাটিলের নাম রয়েছে অভিযোগের খাতায়।
অভিযোগ, ২৬৩ কোটি টাকা তছরুপের মূল চক্রী নাকি আয়কর পরিদর্শক তানাজি। কৃতি নিজের ঊর্ধ্বতনের লগইনের অধিকার অপব্যবহার করে তছরুপের টাকা পাঠান ভূষণের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
কৃতি তছরুপের টাকা ব্যবহার করে গুরুগ্রামে এক কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি কিনেছিলেন বলে অভিযোগ। পরে সেই সম্পত্তি তিনি এক কোটি ১৮ লক্ষ টাকায় বিক্রিও করেন। সেই টাকা কৃতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। অভিযোগ, এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন কৃতি। সম্পূর্ণ বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।
বিভিন্ন মিউজ়িক ভিডিয়োতে অভিনয় করতে দেখা যায় কৃতিকে। সমাজমাধ্যমে বেশ সক্রিয় তিনি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ১৯ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।