নব্বইয়ের দশকে ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায় অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বাঙালি অভিনেতা বাবলু মুখোপাধ্যায়। কেরিয়ারে ১০০টির বেশি ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে বলিপাড়া থেকে উধাও হয়ে গেলেন বাবলু। এখন কী করছেন তিনি?
বাঙালি অভিনেতা কেষ্ট মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র বাবলু। কলকাতায় জন্ম হলেও বাবলুর যখন মাত্র ছ’মাস বয়স তখন পরিবার-সহ মুম্বই চলে যান কেষ্ট। সেখানে স্ত্রী এবং দুই পুত্রসন্তান নিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি।
নিজে জনপ্রিয় অভিনেতা হলেও তাঁর দুই পুত্র কখনও অভিনয়ে নামুক, তা চাইতেন না কেষ্ট। তিনি চাইতেন তাঁর বড় ছেলে পাইলট এবং ছোট ছেলে চিকিৎসক হন। কিন্তু পরিস্থিতি বাবলুকে অভিনয়ের দিকেই ঠেলে দেয়।
বাবলুর যখন ১৬ বছর বয়স তখন মারা যান কেষ্ট। বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে সংসার সামলানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে বাবলুর উপর। কী ভাবে রোজগার করবেন তা ভেবে উঠতে পারতেন না তিনি। এমন সময় তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলি পরিচালক অনিল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পরিচালিত একটি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন বাবলুকে।
১৯৮৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কৌন ক্যায়সে’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন মিঠুন চক্রবর্তী এবং অনিতা রাজ। ছবিতে অভিনেত্রীর ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় বাবলুকে।
পরিচালক কেতন মেহতাও অভিনয়ের প্রস্তাব দেন বাবলুকে। ‘হিরো হীরালাল’ নামের ছবিতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
বড় পর্দায় অভিনয় করার পর ছোট পর্দায়ও অভিনয়ের সুযোগ পান বাবলু। ১৯৮৫ সালে সম্প্রচারিত ‘ছোটি বড়ি বাতে’ হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বাবলু। একের পর এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন তিনি।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, একসঙ্গে নাকি চারটি ধারাবাহিকের শুটিং করতেন বাবলু। ‘বিক্রম অওর বেতাল’, ‘জবান সামালকে’ এবং ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেন বাবলু।
শাহরুখ খান, আমির খান এবং অজয় দেবগনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন বাবলু। অধিকাংশ হিন্দি ছবিতে অভিনেতার বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
‘খিলাফ’, ‘লভ’, ‘নরসিংহ’, ‘ইসি কা নাম জিন্দেগি’, ‘দিল আশনা হ্যায়’, ‘আই লভ ইউ’, ‘ঘর আয়া মেরা পরদেশি’, ‘তেজস্বিনী’, ‘হলচল’-এর মতো অসংখ্য হিন্দি ছবি কেরিয়ারের ঝুলিতে পুরতে থাকেন বাবলু।
বাবলু যখন তাঁর কেরিয়ারের মধ্যগগনে, তখন যেন ভাগ্যে বাজ ভেঙে পড়ে। হঠাৎ পিঠে ব্যথায় ভুগতে শুরু করেন বাবলু। ক্লান্ত থাকার জন্য ব্যথা হচ্ছে ভেবে তা এড়িয়েও যান তিনি। কিন্তু পরে তা বড় আকার ধারণ করে। চার-পাঁচ পা হাঁটলেই সারা শরীর যন্ত্রণায় কাবু হয়ে যাচ্ছিল।
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কাজ করা বাবলুর পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে প়ড়ে। একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও অসুস্থতার কারণে তা খারিজ করে দেন বাবলু। বহু দিন এমন চলতে থাকায় এক সময় কাজের প্রস্তাব পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বাবলুর তুতোভাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। একাধিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর পর ধমনিতে ব্লকেজ ধরা পড়ে অভিনেতার। ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে কোমর থেকে পায়ের দিকে অক্সিজেন এবং রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছিল। রোগ ধরা পড়ার পর অস্ত্রোপচার করানো হয় বাবলুর। ন’বছর চিকিৎসা চলার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর আর বলিউডে ফিরতে পারেননি বাবলু। দীর্ঘ সময় অভিনয়জগৎ থেকে দূরে থাকার ফলে সকলের সঙ্গে যোগাযোগে টান পড়ে তাঁর। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও ভাঙন ধরে বাবলুর।
১৯৯২ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বাবলু। স্ত্রী, এক কন্যাসন্তান এবং যমজ পুত্রসন্তান নিয়ে মুম্বইয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু তাঁর সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বাবলুর সন্তানেরা নিজেদের কেরিয়ার এবং সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে যান। বাবলুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। বলিপাড়া থেকে ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া বাবলু বর্তমানে মুম্বইয়ে একাই থাকেন।