১৭ বছর বয়স থেকে অভিনয় শুরু। ঋষি কপূর, অমিতাভ বচ্চন, ভিকি কৌশল, রণবীর সিংহ এবং আমির খানের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু বিশেষ কারণে অক্ষয় কুমার এবং শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বলিপাড়া থেকে হঠাৎ নিজেকে সরিয়েও ফেলেন রুখসার রহমান।
উত্তরপ্রদেশের রামপুরে জন্ম রুখসারের। সেখানেই বাবা-মা, ভাই এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। রুখসারের বাবা আইএএস আধিকারিক ছিলেন।
রামপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করতেন রুখসার। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। বলি পরিচালক সাওনকুমার তকের নজরে পড়েন তিনি। তিনি সলমন খানের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন রুখসারকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, শুধু সলমনের সঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাবই নয়, রুখসারের সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তি করতে চান সাওন। চুক্তি অনুযায়ী তিন বছর সাওনের পরিচালনার ছবিগুলিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন তিনি। কিন্তু এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন রুখসার।
১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সনম বেওয়াফা’ ছবিতে সলমনের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ হারান রুখসার। তবে তার এক বছরের মাথায় বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
১৯৯২ সালে প্রেক্ষাগৃহে ‘ইয়াদ রাখেগি দুনিয়া’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায়। এই ছবিতে আদিত্য পাঞ্চোলির বিপরীতে অভিনয় করেন রুখসার। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর। নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তিনি।
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ইনতেহা প্যার কি’ ছবিতে ঋষি কপূরের বিপরীতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রুখসার। একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি।
অক্ষয় কুমারের ‘সৌগন্ধ’, শাহরুখ খানের ‘বাজিগর’ এবং অনিল কপূরের ‘১৯৪২: অ্যা লভ স্টোরি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান রুখসার। কিন্তু তিনটি ছবির প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেন তিনি। এমনকি বলিপাড়া থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, রুখসারের বাবা-মা চেয়েছিলেন যে, তাঁদের কন্যা পড়াশোনা শেষ করে অভিনয়জগতে প্রবেশ করুক। অভিনয়ের জন্য মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক তা চাননি রুখসারের বাবা-মা। বাবা-মায়ের কথা শুনে অভিনয় থেকে সরে যান রুখসার।
লখনউয়ে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে পোশাক পরিকল্পক হিসাবে কাজ শুরু করেন রুখসার। আসাদ আহমেদ নামে এক জনকে বিয়ে করেন তিনি। এক কন্যাসন্তানের জন্মও দেন অভিনেত্রী। কিন্তু কয়েক বছর পর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় রুখসারের।
২০০৪ সালে পারিবারিক অনুষ্ঠানে বলিপাড়ার ছবিনির্মাতা ফারুক কবিরের সঙ্গে আলাপ হয় রুখসারের। প্রথম আলাপে বন্ধুত্ব, সেখান থেকে প্রেম। ছ’বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১০ সালে ফারুককে বিয়ে করেন তিনি। ১৩ বছর সংসারের পর ২০২৩ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় অভিনেত্রীর।
বর্তমানে কন্যা আয়েশা আহমেদের সঙ্গে থাকেন রুখসার। মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয় শুরু করেন আয়েশা। ইউটিউবের নানা রকম সিরিজ়ে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রুখসারের কন্যা।
অভিনয়জগৎ থেকে ১৩ বছরের বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরে যান রুখসার। ২০০৫ সালে রামগোপাল বর্মার ‘ডি’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। এই ছবিতে বলি অভিনেতা রণদীপ হুডার বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রুখসার।
২০০৫ সালে রামগোপাল বর্মার পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘সরকার’। অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, কেকে মেনন এবং ক্যাটরিনা কইফের মতো তারকাদের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন রুখসার।
‘গড তুস্সি গ্রেট হো’, ‘দ্য স্টোনম্যান মার্ডারস’, ‘নক আউট’, ‘আল্লা কে বন্দে’, ‘শয়তান’, ‘ভেজা ফ্রাই ২’, ‘পিকে’, ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এবং ‘৮৩’-এর মতো হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় রুখসারকে।
২০১৭ সালে ‘টেক অফ’ নামের একটি মালয়ালম ছবিতেও অভিনয় করেন রুখসার। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
কোভিড অতিমারির সময় ‘গন গেম’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেন রুখসার। নিজের বাড়ি থেকেই এই সিরিজ়ের শুটিং করেছিলেন তিনি।
২০২৩ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দ্য নাইট ম্যানেজার’ সিরিজ়ে অনিল কপূর, আদিত্য রায় কপূর এবং শোভিতা ধুলিপালার সঙ্গে অভিনয় করেন রুখসার।
২০০৯ সাল থেকে ছোট পর্দায় অভিনয় করতে শুরু করেন রুখসার। ‘কুছ তো লোক কহেঙ্গে’, ‘বাল বীর’, ‘তুমহারি পাখি’, ‘অউর প্যার হো গয়া’, ‘দিয়া অউর বাতি হম’ এবং ‘হক সে’ নামের ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রুখসারকে।
২০২২ সালে বিদ্যুৎ জামওয়ালের সঙ্গে ‘খুদা হাফিজ় ২’ ছবিতে বড় পর্দায় শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রুখসারকে। সমাজমাধ্যমে বেশ সক্রিয় তিনি। ইনস্টাগ্রামের পাতায় ইতিমধ্যেই রুখসারের অনুগামীর সংখ্যা চার লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।