চাকরির দেওয়ার নাম করে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছে ভারতীয় তরুণদের। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে মুখ খুললেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। কী বললেন তিনি?
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কয়েক জন ভারতীয়কে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, এই বিষয়ে তারা অবহিত।
ওই ভারতীয়দের মুক্তির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে।
তাতে অভিযোগ করা হয়, বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়েছে।
তাঁদের এখন ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। চাকরি দেওয়ার নাম করে ‘প্রতারণা’ করা হয়েছে। এই নিয়ে শুক্রবার একটি বিবৃতি দিল বিদেশ মন্ত্রক।
তাদের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আমরা অবহিত রয়েছি যে, রুশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নিয়োগপত্রে সই করেছেন কয়েক জন ভারতীয়। ওই ব্যক্তিদের ছাড়ানোর জন্য ভারতীয় দূতাবাস নিয়মিত রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমরা সকল ভারতীয়কে সতর্ক এবং এই সংঘাত থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করছি।’’
বৃহস্পতিবার সুফিয়ান নামে এক ভারতীয়ের পরিবারকে পাঠানো ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি পরিবারকে অনুরোধ করেন, দ্রুত যেন তাঁদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সুফিয়ান হায়দরাবাদের বাসিন্দা। এর পরে সুফিয়ানের পরিবার এবং এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি কেন্দ্রীয় সরকারকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানান।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে এই নিয়ে সরকারি ভাবে চিঠিও দেন সাংসদ ওয়েইসি। তিনি চিঠিতে জানান, ইউক্রেনে ন’জন ভারতীয় আটকে রয়েছেন।
তাঁরা আহত, বিপদে রয়েছেন। ফিরে আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্র যাতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে, সেই আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
সুফিয়ান নিজের বাড়িতে একটি ভিডিয়ো পাঠিয়ে বলেন, ‘‘দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা হাই-টেক জালিয়াতির শিকার।’
ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সুফিয়ান সেনার উর্দি পরে রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, জোর করে রাশিয়ার হয়ে তাঁদের যুদ্ধ করতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁদের রাশিয়া পাঠানো হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেনার নিরাপত্তা সহায়ক হিসাবে কাজ করবেন তাঁরা।
যদিও তা হয়নি বলে অভিযোগ। আরও তিন যুবকের কথা প্রকাশিত হয়েছিল সুফিয়ানের কথায়, যাঁরা কর্নাটকের কালবুর্গির বাসিন্দা।
চাকরির ‘এজেন্ট’-এর সঙ্গে দুবাইয়ে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল চার জনের। সেখানে তাঁদের মোটা বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
২০২৩ সালের নভেম্বরে তাঁরা দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসেন। এর পর ডিসেম্বরে তাঁদের রাশিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
চেন্নাই থেকে রাশিয়ার বিমান ধরেন তাঁরা। ভিজিটরস’ ভিসায় পাঠানো হয় তাঁদের। ওই চার জন দুবাইয়ে কাজ করতেন।
সেখানে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতন পেতেন মাসে। চাকরির ‘এজেন্ট’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাশিয়ায় কাজে গিয়ে মাসে দু’লক্ষ টাকা পাবেন তাঁরা।
চার জনের পরিবারের অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সেই ‘এজেন্ট’।
শেষে দেখা গিয়েছে, রাশিয়ায় কাজ দেওয়ার নামে ভাড়াটে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের। বিষয়টি যে তাদের জানা রয়েছে, শুক্রবার তা জানিয়ে দিল কেন্দ্র। জানানো হয়েছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।