Bangladesh Liberation War

বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫২ বছর: ধর্ষণ, নৃশংসতার বিরল সাক্ষী ছিল সে দিনের পূর্ব পাকিস্তান!

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয়। তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী চক্রের চাপে সেনাশাসক ইয়াহিয়া খান সরকার গড়তে দেননি মুজিবর রহমানকে।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৩০
Share:
০১ ১৫

৫২তম বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকালে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করলেন। সম্মান জানায় বাংলাদেশ স্থলসেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনা। ভারত এবং বাংলাদেশ, দুই দেশের কাছেই ১৬ ডিসেম্বর তারিখটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও তাদের সহযোগী ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেছিল পাক সেনা।

০২ ১৫

বাংলাদেশে এই দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ২৬ মার্চ সে দেশের স্বাধীনতা দিবস হলেও, ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে কার্যত মুক্ত হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। পরে নাম হয় বাংলাদেশ।

Advertisement
০৩ ১৫

স্বাধীন হওয়ার আগে দীর্ঘ এবং প্রায় অসম লড়াই লড়তে হয়েছিল সে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে। প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। তৎকালীন পাক-প্রশাসন স্বীকার না করলেও, এই যুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষকে যেমন খুন করা হয়েছে, তেমনই পরিকল্পিত ভাবে নিশানা করা হয়েছিল মেয়েদের।

০৪ ১৫

১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে হয়। তাতে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল শেখ মুজিবর রহমানের আওয়ামি লিগ। জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপিপি পেয়েছিল ৮৬টি আসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী চক্রের চাপে সেনাশাসক ইয়াহিয়া খান সরকার গড়তে দেননি মুজিবকে।

০৫ ১৫

ভাষা আন্দোলন নিয়ে আগেই উত্তপ্ত হয়ে থাকা পূর্ব পাকিস্তানে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিল এই ঘটনা। ঢাকা-সহ নানা শহরে, গ্রামাঞ্চলে প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণের রাশ ক্রমশ কঠিন করতে থাকেন পাকিস্তানের শাসকরাও। ইসলামাবাদের শাসকদের ধর্মীয় মৌলবাদ ও জাতিবিদ্বেষের সঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সংঘাত শুরু হয়। শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানকে মুক্ত করার লড়াই— মুক্তিযুদ্ধ।

০৬ ১৫

বাংলা ভাষা এবং কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে ভাল চোখে দেখতেন না তৎকালীন পাক শাসকরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ফিরদৌসি প্রিয়ভাসিনি। তিনি এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের সেনা আধিকারিকরা তাঁকে গালাগাল দিয়ে বলেছিলেন, “তোমরা বাঙালি, তোমরা মেয়ে হয়েও গান, নাচ করো। আসলে তোমরা যৌনকর্মী।”

০৭ ১৫

মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাক সেনার এক ভয়াবহ পর্ব ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এই সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আগে এদের (পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক) পাকিস্তানপ্রেমী করতে হবে।” পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকরা ‘পাকিস্তানপ্রেমী নয়’ বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।

০৮ ১৫

পাকিস্তানের এক শীর্ষ সেনা আধিকারিকের মন্তব্য নিয়েও সে সময় বিতর্ক চরমে ওঠে। তাঁর কুখ্যাত উক্তি ছিল, “আমরা চলে যাব, কিন্তু আমাদের প্রতিনিধিরা রয়ে যাবে।” রাতে যখন তল্লাশি চলত গ্রামে গ্রামে, তখন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদেরই খোঁজা হত এমন নয়, বহু সাধারণ মেয়েকে সেনাশিবিরে তুলে নিয়ে যাওয়া হত।

০৯ ১৫

সে সময় ‘টাইম’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাশাপাশি ৫৬৩ জন নাবালিকাকেও অপহরণ করে পাকিস্তানের সেনা এবং রাজাকার বাহিনী।

১০ ১৫

অত্যাচারিত নারীদের একাংশ পরবর্তী কালে মুখ খোলেন। তাঁরা জানান, শুধু ধর্ষণ নয়, ধর্ষণে বাধা দিলে গুলি করে খুনও করা হত। শেখ মুজিবর রহমান এই সব নির্যাতিতাদের ‘বীরাঙ্গনা’ অভিধায় ভূষিত করেছিলেন।

১১ ১৫

‘টাইম’ পত্রিকার প্রতিবেদন বলছে, পাকিস্তানের সব সেনা আধিকারিকও এই ‘অমানবিকতা’ মেনে নিতে পারেননি। জেনারেল ইয়াকুব খান এবং ইক্রাম সেহগাল এই ‘অত্যাচার’ বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

১২ ১৫

সতেরো বছর তদন্ত চালানোর পর ২০০৮ সালে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত ১,৫৯৭ নামের তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১০ সালে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

১৩ ১৫

মানবিকতার যুক্তিতে মুক্তিযুদ্ধের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারতের সেনা। পাকিস্তান এ বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে তাদের আপত্তি জানায়। ভারতও তার পাল্টা যুক্তি হাজির করেছিল।

১৪ ১৫

পাকিস্তানের আপত্তি এবং আমেরিকার চোখরাঙানি সত্ত্বেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বশক্তি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

১৫ ১৫

১৯৭১-এর জুন মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ধরনের সাহায্য দিতে শুরু করে ভারতীয় সেনা। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় ৩ ডিসেম্বর থেকে। ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে পশ্চিমের আগ্রাসনের পতন ঘটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement