গাড়ির পিছনে মালপত্র রাখার জায়গায় নাকি প্রেমিকার ফোটোশুট করতেন। তবে ‘আবদার’ ছিল, ফোটোশুটের সময় প্রেমিকার পরনে থাকবে শুধুমাত্র অন্তর্বাস। এবং অবশ্যই হাত-পা বাঁধা।
দু’বার সে ‘আবদার’ মেটালেও পেশায় যৌনকর্মী ওই তরুণীকে প্রেমিকের হাতেই নাকি খুন হতে হয়েছিল। তবে ওই তরুণীর পাশাপাশি আরও এক যৌনকর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে ইংল্যান্ডের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে।
সোমবার জোড়া খুনের মামলার শুনানিতে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ শোনা গিয়েছে অভিযুক্ত মার্ক ব্রাউনের বিরুদ্ধে। যদিও জোড়া খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মার্ক।
ইস্ট সাসেক্স কাউন্টির সেন্ট লিয়োনার্ড-অন-সি শহরের বাসিন্দা মার্ক নাকি তাঁর প্রেমিকা লিয়া অয়্যারকে খুন করেছেন। তার আগে লিয়ার প্রায় নগ্ন ফোটোশুটের জন্য তাঁকে নাকি ৩ হাজার পাউন্ডও দিয়েছিলেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা। অভিযোগ, মার্কের দ্বিতীয় ‘শিকার’ লিয়া।
সোমবার ব্রিটেনের হোভ ক্রাউন কোর্টে জোড়া খুনের মামলায় অভিযুক্ত মার্কের বিরুদ্ধে শুনানিতে জুরিদের কাছে সাক্ষী দিয়েছেন লিয়ার বান্ধবী তারা কেসি।
তারার দাবি, ৪১ বছরের মার্কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন লিয়া। যদিও দীর্ঘ দিনের এক বান্ধবীর সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন মার্ক। ওই সম্পর্ক থেকে তাঁদের ১টি সন্তানও ছিল।
আদালতে তারা জানিয়েছেন, তাঁর বান্ধবীকে গাড়ির বুটে (যেখানে মালপত্র রাখা হয়) ঢুকিয়ে ফোটো তুলতেন মার্ক। সে সময় তাঁকে অন্তর্বাস পরিয়ে হাত-পা বেঁধে দিতেন মার্ক। উত্তেজক ভঙ্গিমায় লিয়াকে ‘পোজ়’ও দিতে হত।
মার্কের কাণ্ডকারখানায় নাকি ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন ৩ সন্তানের মা লিয়া (৩৩)। শুনানিতে তারা বলেছেন, ‘‘ওই ফার্মের নিজের গাড়ির বুটে অথবা অন্য কোনও গাড়িতে ফোটোশুট চলত। উত্তেজক অন্তর্বাসে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ‘পোজ়’ দিতে হত লিয়াকে।’’
তারার দাবি, ‘‘ফোটোশুটের সময় লিয়ার হাত-পা বেঁধে ফেলতেন মার্ক। আমার মনে হয়, এক বার ফোটোশুটের জন্য লিয়াকে ৩ হাজার পাউন্ডও দেন তিনি।’’
মার্কের মতোই ইস্ট সাসেক্সে থাকতেন লিয়া। তবে ইস্ট সাসেক্সের হেস্টিংসের বাসিন্দা লিয়ার নিজের বাড়ি ছিল না। একটি গোলাবাড়িতে জাহাজের কন্টেনারের ভিতর দিন কাটত তাঁর। গত মে মাস থেকে নাকি তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, ফোটোশুটে রাজি না হওয়ায় লিয়াকে খুন করেছেন মার্ক। ঠিক যে ভাবে অ্যালেক্স মর্গ্যান নামে ৩৪ বছরের এক যৌনকর্মীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পুলিশি তদন্তে দাবি, ফোটোশুটের জন্য লিটল ব্রিজ় ফার্ম নামে একটি ভাড়া করা জায়গায় লিয়াকে নিয়ে যেতেন পেশায় নির্মাণ ব্যবসায়ী মার্ক। ওই জায়গাতেই নাকি অ্যালেক্সকে খুনের অভিযোগ উঠেছে মার্কের বিরুদ্ধে।
পুলিশের দাবি, লিটল ব্রিজ় ফার্মে অ্যালেক্সকে খুন করার পর সেখানকার একটি তেলের ড্রামে তাঁর দেহ পুড়িয়ে ফেলেন মার্ক।
ওই তেলের ড্রাম থেকে বেশ কয়েকটি দাঁত এবং হাড়গোড় উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। ফরেন্সিক পরীক্ষায় জানা যায়, সেগুলি ৩৪ বছরের অ্যালেক্সের।
লিয়া বা অ্যালেক্সের মতো যৌনকর্মীর সঙ্গে মার্কের আলাপপরিচয় নাকি গড়ে উঠেছিল সমাজমাধ্যমে। একটি ‘এসকর্ট’ সাইটেই নাকি দু’জনের সন্ধান পান মার্ক।
আদালতে দাঁড়িয়ে তারার দাবি, দু’বার লিয়ার ফোটোশুট করেছিলেন মার্ক। তবে শেষ বার তাঁর হাত-পা বেঁধে দেওয়ার পর মুখে কাপড়ের টুকরোও গুঁজে দেন। কারণ, আগের ফোটোশুটে নাকি সন্তুষ্ট ছিলেন না মার্ক।
এই মামলায় বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। নিজের দাবিপূরণ না হওয়ার জন্যই কি প্রেমিকাকে খুন করেন মার্ক? কেনই বা প্রেমিকার অর্ধনগ্ন ছবি তুলতেন তিনি? অ্যালেক্সকেই বা কেন খুন করছেন? এ সবেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।