আমাজনের গহীন অরণ্যে আদিবাসী জনজাতির এক বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দিনটি ছিল ২৩ অগস্ট। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, সে দিনই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে আমাজনের তানারু আদিবাসী জনজাতি। কারণ, সেই জনজাতির এক মাত্র সদস্য ছিলেন ওই বৃদ্ধ।
ব্রাজিলের রনদোনিয়া প্রদেশে আমাজনের অরণ্যের গর্তে বাস করা ওই বৃদ্ধের নাম কী, তা কেউ জানেন না। তবে ‘ম্যান অব দ্য হোল’ নামেই সংবাদমাধ্যমে পরিচিত ছিলেন তিনি। কারণ, বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধের আস্তানা ছিল আমাজনের অরণ্যের একটি গর্ত।
বছরের পর বছর ধরে আমাজনে একাই থাকতেন ‘গর্তের মানুষটি’। অরণ্যের জীবজন্তু ধরতে গর্ত কেটে ফাঁদ পাততেন। এমনকি, সেই গর্তেই নিজের জন্য আস্তানা গড়েছিলেন। সে কারণেই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘গর্তের মানুষ’।
বৃদ্ধের দেহটি অবশ্য কোনও গর্ত থেকে পাওয়া যায়নি। ব্রাজিলের আদিবাসী সুরক্ষা সংস্থা ফুনাই জানিয়েছে, ২৩ অগস্ট একটি হ্যামকে মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন ‘গর্তের মানুষটি’। দু’টি গাছের ডালে দড়ি দিয়ে বাঁধা দোলনায় তাঁর নিথর দেহটি নজরে পড়েছিল ফুনাইয়ের আধিকারিকদের।
কী ভাবে মৃত্যু হল ওই বৃদ্ধের? তা জানতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে নেবেন রনদোনিয়া স্টেট কর্তৃপক্ষ। যদিও ফুনাইয়ের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে বৃদ্ধের দেহ দেখে অস্বাভাবিক কিছু নজরে পড়েনি তাঁদের। কোনও জোরজবরদস্তি বা তাঁর বিরুদ্ধে হিংসার কোনও চিহ্ন নেই। এমনকি, আশপাশে লোকজনের উপস্থিতিও নজরে আসেনি।
ফুনাইয়ের দাবি, ওই বৃদ্ধের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যদিও তা নিশ্চিত করতে বৃদ্ধের দেহের ময়নাতদন্ত করবে ব্রাজিল পুলিশ।
‘সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে লন্ডনের একটি স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংস্থার দাবি, গত ২৬ বছর তানারুতে একলাই কাটিয়েছেন তিনি।
গর্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। যদিও রনদোনিয়া কর্তৃপক্ষ দূর থেকেই তাঁকে চোখে চোখে রাখতেন। কখনও বা তাঁর জন্য খাবারদাবার রেখে দিতেন।
গর্তে বাস করা একটি বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচইয়ের কারণও রয়েছে। লন্ডনের ওই সংস্থা জানিয়েছে, সত্তরের দশক থেকে আমাজনের ওই জনজাতির উপর বার বার আঘাত হানা হয়েছে। কখনও অরণ্যের জমি দখলের লোভে। কখনও আবার পশুপালকদের দলে নিজেদের ফায়দা তোলার জন্য তা করেছে।
তানারু জনজাতির জমিতেই বসবাস করতেন ওই বৃদ্ধ। সে কারণে তাঁকে ‘তানারু ইন্ডিয়ান’ নামেও ডাকতে শুরু করেছিলেন অনেকে।
‘সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল’-এর গবেষক তথা অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ফিয়োনা ওয়াটসন বলেন, ‘‘বৃদ্ধের আসল নাম কী, তা বাইরের কেউ জানতেন না। এমনকি, তাঁর জনগোষ্ঠী সম্পর্কেও বিশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি।’’
ফিয়োনার মতে, গর্তের মানুষের মৃত্যুর পর একটি গোটা আদিবাসী জনজাতিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। একে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ফিয়োনা বলেন, ‘‘এটা গণহত্যা নয় তো কী? জমি এবং অরণ্যের সম্পদের লোভে একটি গোটা জনগোষ্ঠীকেই ইচ্ছা করে শেষ করে দিল পশুপালকদের দল।’’
গর্তের মানুষের সম্পর্কে কি কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি? আমেরিকার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১৮ সালে তাঁকে নিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছিল ফুনাই। ওই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কুঠার জাতীয় অস্ত্র দিয়ে একটি গাছে বার বার আঘাত করছেন তিনি।
লন্ডনের ওই সংস্থার দাবি, বৃদ্ধের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র পরীক্ষা করে তাঁর জীবনযাপন সম্পর্ক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আমাজনের অরণ্যে তিনি ভুট্টা এবং পেঁপের ক্ষেতও করেছিলেন। এমনকি, একটি খড়ের ছাউনিওয়ালা ঘরও গড়েছিলেন।
মৃত্যুর সময় ওই বৃদ্ধের দেহটি একটি কুঁড়েঘরের কাছে পড়েছিল। তবে কি গর্তের পাশাপাশি ওই কুঁড়েঘরেও থাকতেন তানারু ইন্ডিয়ান?