শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ড সামনে আসার এক মাস যেতে না যেতেই আবার এক নৃশংসতার ঘটনা নয়াদিল্লিতে। ছুরি নিয়ে একত্রবাসে (লিভ-ইন) থাকা প্রেমিকার মুখ ফালা ফালা করে তাঁর গলা কেটে খুনের অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম দিল্লির তিলক নগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
নিহত প্রেমিকের নাম রেখা (৩৫)। একত্রবাসে থাকা ধৃত প্রেমিকের নাম মনপ্রীত সিংহ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিশোরী মেয়েকে নিয়ে মনপ্রীতের সঙ্গে থাকতেন রেখা।
পুলিশ সূত্রে খবর, রেখাকে খুন করে পালানোর আগে তিনি রেখার ১৬ বছর বয়সি মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে দেন। শুক্রবার সকালে পঞ্জাবে পালিয়ে যান অভিযুক্ত মনপ্রীত। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পটীয়ালায় তাঁর গ্রাম থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত রেখার কিশোরী মেয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টার দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর অভিযুক্ত মনপ্রীত তাকে কিছু ওষুধ দেয় এবং ওই ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে বলেন। কিছু ক্ষণ পর তার সন্দেহ হলে সে মনপ্রীতকে মায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু মনপ্রীত জানান, রেখা বাজারে গিয়েছেন।
পরে মনপ্রীত বাড়ির একটি ঘরে তালা মেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান। মনপ্রীত বেরিয়ে যাওয়ায় সন্দেহের বশে খুড়তুতো দাদাকে ফোন করে সবটা জানায় রেখার মেয়ে।
সেই দাদা পুলিশকে খবর দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় পুলিশ। পুলিশ এসে বন্ধ থাকা ঘরের দরজা ভেঙে দেখে, মেঝেতে পড়ে রয়েছে রেখার রক্তাক্ত দেহ। রেখার মুখ-ঘাড়ে ছুরির আঘাতের একাধিক ক্ষত।
পুলিশ সূত্রে খবর, দেহের পাশেই কাটা অবস্থায় পড়েছিল ডান হাতের অনামিকা। ছুরির কোপে রেখার গলাও কাটা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর পরই পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু নামে দিল্লি পুলিশ। প্রথমেই রেখার কিশোরী মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মনপ্রীতের মোবাইল ট্র্যাক করে খোঁজার চেষ্টা করে পুলিশ।
মোবাইল ফোনের লোকেশনের ভিত্তিতে টোল প্লাজার সিসিটিভি ভিডিয়ো খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারী দলের আধিকারিকরা।
টোল প্লাজার ভিডিয়ো খতিয়ে দেখে পুলিশ বুঝতে পারে, পঞ্জাবের পটীয়ালায় নিজের গ্রামের দিকে গিয়েছেন মনপ্রীত। সেখান থেকেই শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার (অপরাধ) রবীন্দ্র যাদব এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “আগেও মনপ্রীতের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, হত্যার চেষ্টা এবং অস্ত্র আইনের আওতাতেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মনপ্রীতকে অপরাধের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেন পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, মনপ্রীতের বাবা আমেরিকায় থাকতেন। তিনি নিজে পটীয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।
মনপ্রীত আরও জানান, তিনি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ছোটখাট ব্যবসায় বিনিয়োগও করতেন তিনি। পুলিশ জানতে পেরেছে, নথি জাল করে চুরি করা গাড়ি অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করতেন মনপ্রীত।
২০০৬ সালে বিয়ে করেন মনপ্রীত। দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। এ দিকে রেখাও আগে এক বার বিয়ে করেছিলেন।
২০১৫ সালে রেখার সঙ্গে পরিচয় হয় মনপ্রীতের। এর পর গণেশ নগরের একটি বাড়িতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। রেখা এবং তাঁর মেয়ের যাবতীয় খরচ মনপ্রীতই চালাতেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি রেখা সন্দেহ করতে শুরু করেন, মনপ্রীত তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে চাইছেন। পঞ্জাবে গিয়ে মনপ্রীত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে বাধা দিয়েছিলেন রেখা।
এই নিয়ে রেখা-মনপ্রীতের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত। পুলিশ জানিয়েছে, রেখা সম্প্রতি মনপ্রীতকে হুমকিও দিয়েছিলেন। রেখা হুমকি দেন, মনপ্রীত যদি তাঁকে ছেড়ে চলে যান, তা হলে তিনি মনপ্রীতের যাবতীয় অপরাধ প্রকাশ্যে আনবেন।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় মনপ্রীত স্বীকার করেছেন, তিনি রেখার সঙ্গে সম্পর্কে আটকে পড়েছিলেন। নিজের স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরতে চাইছিলেন তিনি। আর সেই কারণে রেখার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি রেখাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন।
এর পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাগ্বিতণ্ডা চলাকালীন রাগের মাথায় ছুরি দিয়ে গলা কেটে রেখাকে খুন করেন মনপ্রীত।
প্রসঙ্গত, ছ’মাস আগে ১৮ মে দিল্লির মেহরৌলীতে একত্রবাসে থাকা প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে খুনের অভিযোগ রয়েছে প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করেন আফতাব। সেই মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখতে কেনা হয়েছিল নতুন ফ্রিজও। পরে ১৮ দিন ধরে ছতরপুর ছিটমহলের জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় শ্রদ্ধার দেহের টুকরোগুলি ছড়িয়ে দিয়ে আসা হয়।
শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ ১২ নভেম্বর শনিবার আফতাবকে গ্রেফতার করে। সেই নিয়েই চলছে তদন্ত। তদন্তে নেমে একাধিক প্রমাণ উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।