মাত্র ২ মিনিট। মাত্র ২ মিনিটের জন্য বিশ্বের সব থেকে বিত্তশালী মানুষ হয়েছিলেন পেনসিলভানিয়ার ক্রিস রেনল্ডস। হয়ে উঠেছিলেন লক্ষ কোটি টাকার মালিক। কিন্তু ২ মিনিটেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর।
২০১৩ সালের ঘটনা। বাড়িতে বসে এক মনে টিভি দেখছিলেন পেশায় গাড়ি সারাই কর্মী ক্রিস। হঠাৎ তাঁর ফোনে টাকা ঢোকার মেসেজ আসে। টাকার পরিমাণ দেখে প্রথমে বিশ্বাস না হওয়ায়, তিনি তাঁর ফোনের একটি লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপ খুলে দেখেন।
ক্রিস অ্যাপ খুলে দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৯২ কোয়াড্রিলন ডলার ( ১ কোয়াড্রিলিয়ন মানে ১,০০,০০,০০০ কোটি। অর্থাৎ, ক্রিসের অ্যাকাউন্টে ৯২২ কোটি ৩৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৬ কোটি ডলার ঢুকেছিল।) সেই মুহূর্তে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সব থেকে বেশি টাকার মালিক।
এর আগে ক্রিসের ওই অ্যাকাউন্টে মাত্র ১৪০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার টাকা) ছিল। যা তিনি অনেক দিন ধরে সঞ্চয় করছিলেন।
অ্যাকাউন্টে অত টাকা ঢোকায় প্রথমটা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মধ্যবয়সি ক্রিস। একটু ধাতস্থ হয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আনন্দে চিৎকার শুরু করেন।
ক্রিসের চিৎকার শুনে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা ছুটে আসেন। তাঁকে ওই ভাবে উচ্ছ্বাস করতে দেখে তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও অবাক হয়ে যান। কিছুটা সামলে নিয়ে পুরো ঘটনা পরিবারকে জানান ক্রিস।
কিন্তু ক্রিস জানতেন না, যে গতিতে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল, সেই গতিতেই টাকা বেরিয়ে গিয়েছে।
তাঁর অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে তা পরিবারকে দেখাতে লেনদেন সংক্রান্ত ওই অ্যাপ খোলেন ক্রিস। কিন্তু অ্যাপ খুলে দ্বিতীয় ধাক্কা খান তিনি। তিনি দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে আবার সব টাকা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পড়ে রয়েছে সেই ১৪০ ডলার।
ক্রিসের পরিবার তাঁর কথায় বিশ্বাস না করায় তিনি লেনদেন সংক্রান্ত নথি বার করে আনেন। সেখানে দেখা যায়, সত্যিই তাঁর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছিল। কিন্তু কোনও কারণে আবার সেই টাকা ফেরত নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেই লেনদেনের নথির ছবি ফেসবুকে পোস্টও করেন ক্রিস। কারও কাছে এই অদ্ভুত ঘটনার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর রয়েছে কি না তা জানার জন্যই তিনি পোস্টটি করেছিলেন।
ওই লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তিনি। আর তার পরেই ক্রিসের ‘অর্থরহস্যে’র যবনিকা পতন হয়।
সংস্থার তরফে জানানো হয়, একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে তাঁর অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছে বলে দেখানো হয়েছিল। তবে পরে ভুল শুধরে নেওয়া হয়।
প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে মাত্র ২ মিনিটের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন ক্রিস। এত টাকা দিয়ে কী করবেন, তা-ও তিনি ওই ২ মিনিটের মধ্যেই নাকি ভেবে নিয়েছিলেন।
ক্রিস পরে জানান, তিনি জীবনে অত টাকা একসঙ্গে দেখেননি। দেখা তো দূরের কথা, অত টাকা কারও কাছে থাকতে পারে, সেই ধারণাও ছিল না। ওই ঘটনার আগে তাঁর অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৩ হা়জার টাকা) ছিল। যে টাকা তিনি গাড়ি বিক্রি করে পেয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যম ‘ফিলাডেলফিয়া ডেইলি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ক্রিস জানিয়েছিলেন, ওই টাকা সত্যি সত্যি তাঁর অ্যাকাউন্টে থাকলে তিনি ওই টাকা দিয়ে সবার প্রথমে একটি বেসবল ক্লাব কিনতেন।
তবে ক্রিসের হওয়া লোকসানের ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে চেয়েছিল ওই লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপ। তারা ক্রিসকে জানিয়েছিল, ক্রিস চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা তাঁরা কোনও অসরকারি সংস্থাকে দান করতে পারেন। তবে ক্রিস নাকি কোনও উত্তর দেননি।