১৯৯৩ সালে প্রাক্তন বান্ধবীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। দোষী সাব্যস্ত হন ১৯৯৬ সালে। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। সেই সাজা ঘোষণার প্রায় তিন দশক পর মৃত্যুদণ্ড পেলেন জর্জিয়ার বাসিন্দা উইলি জেমস পাই।
গত বুধবার জেমসকে মৃত্যুর সাজা দেওয়া হয়েছে। শরীরে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রবেশ করিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁকে। মৃত্যুর সময় জেমসের বয়স হয়েছিল ৫৯।
মৃত্যুর আগে শেষ বারের মতো কী খাবার খেয়েছিলেন জেমস? তা প্রকাশ্যে আনলেন কারাগার কর্তৃপক্ষ।
জর্জিয়ার কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে শেষ খাবার হিসাবে চিজ় বার্গার এবং চিকেন স্যান্ডউইচ খাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন জেমস। সঙ্গে লেবু সোডা, আলুর চিপস এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন। জেমসের শেষ ইচ্ছা হিসাবে তাঁর হাতে সেই খাবার তুলে দেন জেল আধিকারিকরা।
জর্জিয়ার জ্যাকসনের কারাগারে বুধবার রাত ১১টা ৩ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় জেমসকে। ‘জর্জিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ কারেকশন’ জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে প্রার্থনা করেন জেমস। তবে কোনও মন্তব্য করেননি।
জেমসের আইনজীবীরা আমেরিকার শীর্ষ আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি।
১৯৯৩ সালে নভেম্বরে প্রাক্তন বান্ধবী অ্যালিসিয়া লিন ইয়ারব্রোকে অপহরণ এবং ধর্ষণ করার পর গুলি করে খুন করার অভিযোগ ওঠে জেমসের বিরুদ্ধে।
তদন্তে জানা যায়, অ্যালিসিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল জেমসের। সেই সম্পর্ক মাঝেমধ্যেই ভাঙত। আবার জোড়াও লাগত। এ ভাবেই চলতে থাকে দীর্ঘ দিন।
কিন্তু জেমস যখন অ্যালিসিয়াকে খুন করেন, তখন অ্যালিসিয়া অন্য এক পুরুষের সঙ্গে থাকছিলেন। সেই রাগেই অ্যালিসিয়াকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন জেমস।
অভিযোগ, চেস্টার অ্যাডামস নামে এক সঙ্গী এবং ১৫ বছর বয়সি এক কিশোরের সঙ্গে মিলে অ্যালিসিয়াকে খুনের ছক কষেছিলেন জেমস। একটি বন্দুকও কিনেছিলেন।
১৯৯৩ সালের ১৬ নভেম্বর একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন জেমস। মধ্যরাতে সেখান থেকে বেরিয়ে দুই সঙ্গীকে নিয়ে অ্যালিসিয়ার বাড়িতে হানা দেন তিনি। তখন ঘরে অ্যালিসিয়া এবং তাঁর ছোট সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
সেই সুযোগে জোর করে অ্যালিসিয়ার বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলেন জেমস এবং তাঁর সঙ্গীরা। প্রথমে বাড়িতে লুটপাট চালান তাঁরা। পরে অ্যালিসিয়াকে বেঁধে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যান।
পুলিশ জানিয়েছিল, অ্যালিসিয়াকে নিয়ে প্রথমে একটি ছোট হোটেলে গিয়েছিলেন জেমস এবং তাঁর সঙ্গীরা। অভিযোগ, সেখানে প্রথমে অ্যালিসিয়াকে ধর্ষণ করা হয়। পরে আবার তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে বেরিয়ে যান জেমসরা।
অভিযোগ, এর পর এক নির্জন রাস্তায় অ্যালিসিয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন জেমস। পিছন থেকে তিন বার গুলি চালান তাঁকে লক্ষ্য করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অ্যালিসিয়ার।
অ্যালিসিয়ার দেহ উদ্ধার হয়েছিল খুনের কয়েক ঘণ্টা পর। এর পরেই খুনের তদন্তে নেমেছিল পুলিশ।
তদন্ত চলাকালীন জেমস, অ্যাডামস এবং ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেমস এবং অ্যাডামস খুনের কথা অস্বীকার করলেও ওই কিশোর জেরার মুখে খুনের কথা স্বীকার করে। জেমসদের বিরুদ্ধে সে সাক্ষী দিতেও রাজি হয়।
১৯৯৬ সালের জুনে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ এবং ডাকাতির অভিযোগে জেমসকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়।
জেমসের সহযোগী অ্যাডামসকেও ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ৫৫ বছর বয়সি অ্যাডামস বর্তমানে জেলবন্দি।
২০২৩ সালে আমেরিকায় ২৪ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। সবগুলিই প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় বলে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ রয়েছে।