নতুন রাজ্যপালের শপথ ঘিরে রাজনৈতিক টানাপড়েন। সরকার আর বিরোধী দলের চাপান-উতোর। তার ঠিক দু’দিন পর শুক্রবার সৌজন্য-চমক দেখাল রাজ্য বিধানসভা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে তাঁর ঘরে চা পানে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। সৌজন্য প্রদর্শন শুরু শুক্রবার সকাল থেকে।
শুক্রবার সকালে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ভিড়। শুভেন্দু বক্তৃতা করতে উঠেছেন। তৃণমূল বিধায়কদের আসন থেকে শুরু হল নানা টিপ্পনী, কটূক্তি।
শুক্রবার সংবিধান দিবস। সেই নিয়েই বক্তৃতা দিচ্ছিলেন শুভেন্দু। আর তখনই শোরগোল শুরু করেন তৃণমূল বিধায়করা। বাধা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘কেউ বাধা দেবে না। সবাই চুপ করে থাকো।’’
দু’এক জন তৃণমূল বিধায়ক হাল্কা কটাক্ষও করছিলেন। তাঁদেরও চুপ করতে বলেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যদিও এর পর শুভেন্দু গণতন্ত্র নিয়ে বলার সময় রাজ্য সরকারকেই একহাত নেন। বলেন, ‘‘অব দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি।’’ পরে নিজের বক্তৃতায় তার জবাব দিয়েছেন মমতা। তিনি পাল্টা কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে।
বিধানসভায় বক্তৃতা করেন আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তখনও টিপ্পনী কাটতে শুরু করেন তৃণমূলের কয়েক জন বিধায়ক। তাঁদেরও থামিয়ে দেন দলনেত্রী মমতা। ধমক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেউ কারও বক্তৃতায় বাধা দেবেন না।’’
শুভেন্দুর বক্তৃতার পরেই মার্শাল পাঠিয়ে তাঁকে ঘরে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। ডাক পেয়ে মমতার ঘরে যান শুভেন্দু। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, মনোজ টিগ্গা, অশোক লাহিড়ি।
মিনিট চারেক মমতার ঘরে ছিলেন শুভেন্দু। সাক্ষাৎ শেষে মমতা বলেন, ‘‘শুভেন্দুকে চা খেতে ডেকেছিলাম।’’
শুভেন্দু বলেন, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রে সৌজন্য থাকবে। তাই সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। তবে কী আলোচনা হয়েছে বলব না। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা উচিত নয়।’’
শুভেন্দু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সকলকে চা খেতে বলেছিলেন। কিন্তু বিধানসভায় অধিবেশন চলায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদেরও ব্যস্ততার কারণে চা খাওয়া হয়নি।
এর পর বিধানসভায় মমতার বক্তব্যেও ছিল চমক। তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম যাঁকে, সে বলল গণতন্ত্র নিয়ে…।’’
শুভেন্দুর বাবা, তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর কথাও শুক্রবার বিধানসভায় বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘দল গঠনের সময় আপনি ছিলেন না। শিশিরদা আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমি তাঁকে সম্মান করি।’’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল গঠনের সময় অধিকারী পরিবারের কেউই তৃণমূলে যোগ দেননি। পরে আসেন তাঁরা। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় কাঁথিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে লড়াইও করেছিলেন শিশির।
শুভেন্দুর গণতন্ত্র নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষের পাল্টা দিতেও ছাড়েননি মমতা। তিনি কেন্দ্রীয় সংস্থার দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘অব দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি, ফর দ্য এজেন্সি।’’
বিরোধীদেরও একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা সরকারি বৈঠকে ডাক পান না বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্যপালের শপথে বিরোধী দলনেতা, বিজেপি সভাপতি কেউ আসেননি। বিমান বসু এসেছিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ বিরোধী হিসেবে এসেছিলেন।’’
বিধানসভার আগের অধিবেশনেও নমস্কার বিনিময় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দনলেতা। তবে ঘরে চা খেতে যাওয়া এই প্রথম।