সোমবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ দেশের বিশিষ্টেরা। এই আবহে কলকাতায় ‘সংহতি মিছিল’-এর ডাক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কালীঘাটে পুজো দিয়ে হাজরা পার্ক থেকে মিছিল শুরু করেন মমতা। সেখান থেকে গড়চার গুরুদ্বারে চাদর চড়ান। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে মিছিল করে পার্ক সার্কাসে পৌঁছন তিনি। এর পর গির্জায় প্রার্থনা সেরে যান মসজিদে। সেখানে চাদর চড়ান তিনি। তার পরেই পৌঁছন পার্ক সার্কাসের সভাস্থলে।
সোমবার অযোধ্যার মন্দিরে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের কিছু ক্ষণ পরেই দুপুরে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দেন মমতা। বেলা ৩টের সময় কালীঘাটের মন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু হয় সেই মিছিল। মিষ্টি, লাল শাড়ি দিয়ে মায়ের আরাধনা করেন তিনি। আরতি করে পৌঁছন হাজরা মোড়। সেখান থেকে শুরু হয় যাত্রা।
পিছনে ছিলেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয়, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার, ইন্দ্রনীল সেন, শান্তনু সেন প্রমুখ।
তবে মমতার পাশে ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি, ইহুদি ধর্মগুরুরা মুখ্যমন্ত্রী পাশে হাঁটেন। হাজরা ল’ কলেজের অদূরে স্কুটারে চাপেন মমতা। গন্তব্য ছিল নিকটস্থ গড়চার গুরুদ্বার। সেখানে চাদর চড়ান তিনি। কুশল বিনিময় করেন শিখ ধর্মগুরুদের সঙ্গে। অপেক্ষা করছিল মিছিল।
এর পর মিছিল করে পৌঁছন পার্ক সার্কাসের গির্জায়। সেখানে প্রার্থনা করে মমতা যান কাছের মসজিদে। সেখানে চাদর চড়িয়ে মমতা পৌঁছন সভাস্থলে। সেখানে মঞ্চে তাঁর পাশে ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতারা।
গড়চার গুরুদ্বারে চাদর চড়ানোর পর স্কুটিতে চেপে মিছিলের কাছে ফিরে আসেন মমতা। হাজরা ল’ কলেজের কাছে অপেক্ষা করছিল মিছিল। গড়চা থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির অভিমুখে এগোয় ‘সংহতি মিছিল’।
বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পার্ক সার্কাসের পথে মমতা। পাশে ছিলেন না কোনও রাজনীতিক। হাঁটছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। পথে দু’টি শিশু এসে তাঁর হাতে ফুল তুলে দেন। সেই ফুল গ্রহণ করেন মমতা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পদযাত্রা করে পার্ক সার্কাস পৌছন মমতা। সেখানে এক গির্জায় প্রবেশ করে প্রার্থনা করেন তিনি। পার্ক সার্কাসের গির্জা থেকে বেরিয়ে কাছের এক মসজিদে গেলেন মমতা। চড়ালেন চাদর। তার পরেই রওনা হলেন সভাস্থলের উদ্দেশে।
পার্ক সার্কাস ময়দানে মমতার ‘সংহতি যাত্রা’র মঞ্চে উপস্থিত সমস্ত ধর্মের প্রতিনিধিরা। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল রাজ্যসভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
সংহতি যাত্রার মঞ্চে নাখোদা মসজিদের ইমাম বললেন, ‘‘দেশে যখন ভেদাভেদের পরিবেশ, তখন মমতা একা বাঘিনীর মতো সংহতির কথা বলছেন। ঘৃণার পরিবেশে ভালবাসার স্তবক নিয়ে ঘুরছেন। সমস্ত ধর্মকে ভালবাসার যে পথ আপনি দেখিয়েছেন, তা একদিন আপনাদের দেশের শীর্ষে পৌঁছে দেবে’’।
সব জল্পনা উড়িয়েই পার্ক সার্কাসের মঞ্চেই ছিলেন অভিষেকও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই বসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘আজকের দিনটা আমার কাছে গর্বের। কারণ যেদিন দেশে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভেদাভেদ চলছে, তখন বাংলায় ধর্মীয় সংহতি যাত্রা হচ্ছে। গরীবদের বঞ্চিত করে ধর্ম নিয়ে বিভাজন করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেত্রী বার বার বলেছেন ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা বাড়ির ভিতরে ধর্ম করব। বাইরে নয়।’’
এরপর বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে মমতা বললেন, “ভোটের নামে দেশটাকে বিক্রি করছে কিছু লোক। ভোটের আগে ধর্মে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাকেই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। কে, কী খাবে সেটাও ওরা ঠিক করে দেবে? আগুন জ্বালানো সহজ, নেভানো সহজ নয়।
তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বিরোধী জোটের প্রসঙ্গও- তিনি বলেন, ‘‘ বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ আমি দিয়েছি, অথচ বৈঠকে সম্মান পাই না। সিপিএম বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে। আমি সেটা মানব না।’’
মমতা বললেন, ‘‘একটা লড়াই শুরু হয়েছে। আর এই লড়াই চলবে। আমরা না ভয় পেয়ে লড়ব। আমরা কাপুরুষ নয়। তাই আমরা লড়ব। নেতাজির জন্মদিনে ওদের ছুটি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। দেয়নি। আর আজ ওরা ছুটি চাইছে। ছুটি দিচ্ছে। কারণ আজ নাকি ওদের স্বাধীনতা দিবস।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘জয় বাংলা, জয় সম্প্রীতি। সব ধর্ম ভাই ভাই। দেশকে ভাগ করতে দেব না। আমরা শান্তি চাই। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একা পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, কোনও প্রয়োজন আছে কি না। ভয় না পেয়ে সমস্ত জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকে ভুলে গিয়েছে। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে গরিবদের বলি দেবেন না।“
রামমন্দিরে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠানে বিপুল খরচ নিয়ে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, খাবার পয়সা দেয় না। রাস্তার পয়সা দেয় না। আর আজ দেখুন সব জায়গায় এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে কী করেছে!