বসবাস মহারাষ্ট্রের ওয়রলি গ্রামে। কাজ করেন মূলূন্ডে। দাদর স্টেশন হয়ে রোজ কর্মস্থলে যান। তার মধ্যেও দু’ঘণ্টা সময় বার করে পথহারানো যাত্রীদের দিশা দেখান নরেন্দ্র পাটিল।
মুম্বই শহরে যাঁরা সদ্য এসেছেন বা শহরের ভিড়ে রাস্তা ভুলেছেন, তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নরেন্দ্র। অফিসে যাওয়ার সময় বাসে করে দাদর স্টেশনে এসে রোজ দু’ঘণ্টা ট্রেনযাত্রীদের তিনি সাহায্য করেন।
কিন্তু কেন এমনটা করেন তিনি? সংবাদমাধ্যম ‘মিড ডে’-র সঙ্গে কথা বলার সময় নরেন্দ্র জানিয়েছেন, মুম্বই শহরে অনেকেই নতুন। তাঁদের কেউ সবেমাত্র ট্রেন থেকে নেমেছেন, কেউ আবার কয়েক দিন আগে এসেছেন কিন্তু দাদরের মতো ব্যস্ত স্টেশনে কেন দিকে যাবেন, এই ভেবে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান। সেই সব পথভোলা মানুষদের সাহায্য করাই তাঁর কাজ বলে নরেন্দ্র জানিয়েছেন।
দাদর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলিতে নতুন করে নম্বর বসানোর আগে পর্যন্ত এই কাজে বেশি সক্রিয় ছিলেন নরেন্দ্র। তবে এখনও তিনি পথ হারানো যাত্রীদের সাহায্য করেন।
নরেন্দ্রর কথায়, ‘‘এক সময় পর্যন্ত সঠিক নির্দেশ এবং সাইনবোর্ড না থাকার কারণে অনেকেই ভুল প্ল্যাটফর্মে চলে যেতেন। ফলে ব্যস্ত সময়ে ভুল ট্রেনে চেপে ভুল গন্তব্যে চলে যেতেন। সেখান থেকেই আমার এই ভাবনা।’’
মুম্বইয়ের দাদর স্টেশনেই মূলত দেখতে পাওয়া যায় নরেন্দ্রকে। দাদর স্টেশনে সাইনবোর্ড বসানোর আগে পর্যন্ত শহরে সদ্য আগতদের বিভ্রান্তি দূর করতে এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে অফিস যাওয়ার আগে দাদর ব্রিজে প্রতি দিন দু’ঘণ্টা করে সময় কাটাতেন নরেন্দ্র।
অনেকের কাছে নরেন্দ্র ‘রেলদূত’। গত কয়েক বছর ধরে দাদরের যাত্রীদের সঠিক প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেন খুঁজে দিয়ে সাহায্য করে চলেছেন সিমেন্ট কারখানার এই কর্মী।
নরেন্দ্র বলেন, “মানুষের সংগ্রাম দেখে আমি খুবই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রথমে অফিস যাওয়ার সময় মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। লকডাউনের আগে আমি কাজে যাওয়ার আগে স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করতাম এবং মানুষকে পথ দেখাতাম।’’
তিনি জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত দাদরের কাছে একাধিক সেতুর কাজ চলছিল এবং স্টেশনে সে ভাবে কোনও সাইনবোর্ড ছিল না। এতে আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হত। তাই তিনি স্টেশনের ভিতরে ঢুকে রেলযাত্রীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।
নরেন্দ্র এ-ও জানিয়েছেন, স্টেশনে দক্ষিণ প্রান্তের সেতুতেও সাইনবোর্ড বসানো নিয়ে বহু বার স্টেশন ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু ওই সেতু পুরসভার নিয়ন্ত্রণে থাকায় সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি রেল।
মাঝে নিজেই অস্থায়ী একটি সাইনবোর্ড তৈরি করে দাদর স্টেশনে লাগিয়েছিলেন নরেন্দ্র। কিন্তু তা-ও বেশি দিন টেকেনি।
নরেন্দ্রকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দাদর স্টেশনের অনেক হকারও যাত্রীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর থেকে মধ্য ও পশ্চিম রেলের পরিকল্পনামাফিক দাদর স্টেশনে সাইনবোর্ড বসেছে, নতুন নম্বর বসেছে প্ল্যাটফর্মগুলিতে। ফলে অনেককেই এখন আর আগের মতো ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় না।
তবে এখনও প্রায়ই দাদর স্টেশনে এসে মানুষকে সাহায্য করেন নরেন্দ্র। কোনও দিন এই কাজ বন্ধ করবেন না বলেও জানিয়েছেন ‘রেলদূত’।
নরেন্দ্র জানিয়েছেন, তিনি এখন দাদর স্টেশনের দক্ষিণ দিকের সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের পথ দেখান। এ ভাবে মানুষের উপকার করে তিনি শান্তি পান বলেও জানিয়েছেন।