শেখার কোনও বয়স নেই— এই ধ্রুব সত্যের জীবন্ত ছবি ধরা পড়েছে মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে। এক কামরার স্কুলঘর। সকলেই ছাত্রী। ছাত্রীদের বয়স ৬০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। তাঁরা কেউ ঠাকুমা, কেউ দিদিমা। সংসারের চৌহদ্দির বাইরের জগৎ সম্পর্কে তাঁদের জানার আগ্রহের অন্ত নেই। সে কারণেই তাঁদের জন্য এই বিশেষ স্কুল খোলা হয়েছে।
ঠাণের ফাগানে গ্রামে ঠাকুমা-দিদিমাদের জন্য এই বিশেষ স্কুলের দ্বারোদঘাটন হয়েছে ২০১৬ সালে নারী দিবসে।
স্কুলটি চালু হয়েছে স্থানীয় জেলা পরিষদ স্কুলের শিক্ষক ও সমাজকর্মী যোগেন্দ্র বাঙ্গারের উদ্যোগে। স্কুলের নাম ‘আজোবাইচী শালা’।
স্কুলের সকল ছাত্রী গোলাপি রঙের শাড়ি পরে আসেন। এটাই তাঁদের ‘ইউনিফর্ম’। সঙ্গে থাকে লাল-কালো রঙের একটি ব্যাগ।
ওই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ৩৫। সোম থেকে শনিবার রোজ দু’ঘণ্টা করে ক্লাস হয়। কখনও সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। আবার কখনও দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত।
যত্ন সহকারে শেখানো হয় প্রত্যেক ছাত্রীকে। শেখানো হয় বর্ণমালা, নিজেদের নাম লেখা।
স্কুলের শিক্ষিকা শীতল মোরে নামের বছর তিরিশের এক মহিলা। তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা তিনিই।
মরাঠি ভাষায় কী ভাবে বর্ণমালা লেখা হয় তা যেমন শেখানো হয়, তেমনই আবার শিশুদের ছড়াও মুখস্থ করানো হয় এই বিশেষ ছাত্রীদের।
স্কুলের মধ্যে হাঁটু মুড়ে সকলে বসে পাঠ নেন। প্রত্যেকেই স্লেটে লেখেন। এই বয়সেও যে ভাবে একাগ্রতার সঙ্গে তাঁরা পড়াশোনা করছেন, দেখে মুগ্ধ হবেন সকলেই।
স্কুলের চারপাশের বাগানে অনেক গাছ রয়েছে। প্রত্যেক পড়ুয়াকে একটি করে গাছের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি গাছের যত্নআত্তিও করেন তাঁরা।
স্কুলের পডুয়াদের হোমওয়ার্কও দেওয়া হয়। বাড়িতে পড়াশোনায় তাঁদের সাহায্য করেন নাতি-নাতনিরা।
হাতে ব্যাগ নিয়ে গোলাপি শাড়ি পরে দল বেঁধে হেঁটে সকলে স্কুলে যান।
স্কুলটির জন্য তহবিল দেয় একটি অছি। পিছিয়ে পড়া ও বয়স্কদের জন্য কাজ করতে এই অছি তৈরি করেন দিলীপ দালাল নামে এক ব্যক্তি।
যোগেন্দ্র বাঙ্গার বলেছেন, ‘‘জীবনে জ্ঞানের অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে। প্রবীণ মহিলাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
ছাত্রীর ভূমিকায় প্রবীণ মহিলারা পড়াশোনায় কতটা অগ্রগতি করছেন, তার নিয়মিত পর্যালোচনা করেন বাঙ্গার।