‘পেঞ্চের রানি’ প্রয়াত। ১৭ বছর ধরে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে রাজত্ব করা ‘কলারওয়ালি’ গত শনিবার মারা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বার্ধক্যজনিত কারণ বলে মনে হলেও বাঘিনীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অন্য় কথা জানাচ্ছে। তার অন্ত্রে পাওয়া গিয়েছে একরাশ চুল আর কাদামাটি। তবে কি তার জেরেই মৃত্যু হল এই বাঘিনীর? উঠছে প্রশ্ন।
যদিও পেঞ্চ ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের ফিল্ড অফিসার অশোককুমার মিশ্রের দাবি, বার্ধক্যজনিত কারণে একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে গিয়ে মারা গিয়েছে বাঘিনী। তার মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক না কেন, এ খবর প্রকাশ্যে আসা মাত্র দেশ জুড়ে পশুপ্রেমীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
‘পেঞ্চের রানি’র মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন মধ্যপ্রদেশের স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পশুপ্রেমী-সহ সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও। মধ্যপ্রদেশকে ব্যাঘ্র রাজ্যের মর্যাদার পিছনে এই ‘সুপারমম’-এর অবদান স্মরণ করেছেন তিনি। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে তো বটেই, ‘পেঞ্চের রানি’র মৃত্যুর খবর জায়গা করে নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও।
রবিবার দুপুরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন আদিবাসী অধিকারের জন্য লড়াই করা স্থানীয় নেত্রী শান্তাবাই। পেঞ্চ জাতীয় উদ্যানে বাঘিনীর সৎকারের সময় উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের বনমন্ত্রী কুঁয়র বিজয় শাহ-সহ সে রাজ্যের বন দফতরের একাধিক কর্তা।
এ দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে ‘কলারওয়ালি’র ভূমিকা যে মনে রাখার মতো, তা জানিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার।
২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ২৯টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল ‘কলারওয়ালি’। ফলে ‘সুপারমম’ তকমা পেয়েছিল সে। অনেকে আবার তাকে ‘টি-১৫’ নামেও ডাকত।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ১১ মার্চ এই বাঘিনীর গলায় প্রথম রেডিয়ো কলার বা ট্রান্সমিটার যুক্ত বন্ধনী পরানো হয়েছিল। তার পর থেকেই সেটি ‘কলারওয়ালি’ নামে পরিচিতি পায়।
‘কলারওয়ালি’-র জন্ম হয়েছিল ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে। তার ২৯টি শাবকের মধ্যে ২৫টি বেঁচে রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও মহারাষ্ট্রের জঙ্গলেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা।
দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে ১৯৭৩ সালে ‘প্রজেক্ট টাইগার’ প্রকল্প গ্রহণ করে ভারত সরকার। তার পর থেকে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর মতে তা বিপন্ন প্রজাতির পশুদের তালিকায় রয়েছে।
পরিবেশবিদদের দাবি, বিশ্ব জুড়ে মাত্র সাড়ে তিন হাজার বাঘ রয়েছে। এ দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড জানিয়েছে, এখনও বেআইনি ভাবে বাঘ শিকার করা চলছে। কমে যাচ্ছে বাঘের বসতির সংখ্যাও। ফলে এই প্রজাতির বিপদ এখনও কমেনি।