সূর্য উঠলেও মনে হয় যেন রাত কাটেনি। ছোট্ট ঘরের চার দিকে পর পর বাঙ্ক। অর্থের অভাবে থাকা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে সেই বাঙ্কে সন্ধান পাওয়া যেতে পারে অপরাধী এবং নেশাখোরদেরও। এক নজরে দেখলে মনে হয় যেন কফিনের ভিতরে বসবাসের জন্যই প্রতি মাসে ভাড়া দিয়ে চলেছেন তাঁরা। এই ‘কফিনের ঘর’-এর ঠিকানা কোথায়?
জাঁকজমক, বিলাসের ক্ষেত্রে হং কং রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারিতে। আলোর ঝিকিমিকি এবং শহরের বিলাসবহুলতা দেখলে চোখে ধাঁধাও লেগে যেতে পারে। কিন্তু মুদ্রার বিপরীত দিকে রয়েছে অন্ধকার।
হং কংয়ের মূল শহর থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে ‘কফিনের ঘর’। ৫০০ বর্গ ফুট ঘরের ভিতরে ৩০ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকেন সেখানে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব?
ঘরের দু’দিকে দুই সারি জুড়ে রয়েছে প্রচুর বাঙ্ক। এক এক সারিতে ১৬টি করে ঘরে মোট ৩২টি বাঙ্ক রয়েছে। এই বাঙ্কগুলিকেই ‘কফিনের ঘর’ বলা হয়।
এক একটি বাঙ্কে এক জন করে থাকতে পারবেন। সাধারণত একটি বাঙ্ক লম্বায় পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি এবং চওড়ায় দুই ফুট হয়। এই বাঙ্কগুলির মধ্যে সংসার পেতে বসেন ভাড়াটেরা।
প্রতি মাসে এই বাঙ্কে থাকতে গেলে ভারতীয় মুদ্রায় কমপক্ষে ১৯ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।
এই বাঙ্কগুলির মাসপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া ভারতীয় মুদ্রায় ২৬ হাজার টাকা।
সাধারণত নীচের বাঙ্কগুলির চেয়ে উপরের দিকের বাঙ্কগুলিতে থাকার খরচ কম বলে দাবি করেন স্থানীয়েরা। অনেক সময় শৌচালয় এবং রান্নাঘরের মাঝে কোনও দেওয়ালও থাকে না।
কোনও কোনও দিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ‘কফিনের ঘর’গুলির বাসিন্দাদের খাবার বিতরণ করা হয়। ভাড়া কম হওয়ার কারণে এখানেই গাদাগাদি করে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত থেকে শুরু করে নেশাখোরেরাও।
স্থানীয়দের দাবি, ১৯৫০ সাল থেকে হং কংয়ে বাঙ্কের মতো জায়গা তৈরি করে থাকেন দরিদ্রেরা। শহরের রোশনাই থেকে বহু দূরে নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ‘কফিনের ঘর’।
ঘরগুলির ভিতর কোনও ভাবেই সূর্যের আলো পৌঁছয় না। ঘড়ি না থাকলে কখন দিন হচ্ছে, কখন রাত হচ্ছে তা বোঝা দায়।
দিনে দু’বার ভূমির দেবতার উদ্দেশে ধুপ দেওয়ার রীতি পালন করে থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, দেবতা তুষ্ট করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি ফিরে আসে।