২০২১ সাল। বিক্রম বাত্রার জীবনীর উপর ভিত্তি করে মুক্তি পেয়েছিল ওয়ার ড্রামা ঘরানার ছবি ‘শেরশাহ’। বিষ্ণুবর্ধন পরিচালিত এই ছবিতে সিদ্ধার্থ মলহোত্র এবং কিয়ারা আডবাণীর অভিনয় দর্শকের চোখ ভিজিয়েছিল। এখন বড় পর্দার এই জুটির ঠিকানা জয়সলমরের সূর্যগড় প্রাসাদ। কোনও ছবির শুটিংয়ের জন্য নয়। সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারা বাস্তবেই গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছেন তাঁরা।
গায়ে হলুদ, মেহেন্দি, সঙ্গীতের মতো প্রাক্-বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকেই। দুই তারকার বিয়ের অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে তুলতে সেজে উঠেছে সূর্যগড় প্রাসাদ। তবে শুভ অনুষ্ঠানের মাঝেই সিদ্ধার্থ মলহোত্রের আগেকার সম্পর্ক নিয়ে বলিপাড়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
কর্ণ জোহরের হাত ধরে বলিপাড়ায় পা রাখেন সিদ্ধার্থ। ২০১২ সালে ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ ছবিতে অভিনয়ে হাতেখড়ি সিদ্ধার্থের। তার আগে অবশ্য ‘মাই নেম ইজ় খান’ ছবিতে সহ-পরিচালক হিসাবে কর্ণের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি।
‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে সিদ্ধার্থের আলাপ হয় আলিয়া ভট্টের সঙ্গে। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গড়িয়ে যায় প্রণয়ের সম্পর্কে। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, আলিয়াকে নিয়ে এক সময় সিদ্ধার্থের এতটাই অধিকারবোধ তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি স্বঘোষিত সমালোচক কামাল রশিদ খান ওরফে কেআরকে-র বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। কেআরকে এক সময় আলিয়াকে বিদ্রুপ করেছিলেন বলেই সিদ্ধার্থ এমন আচরণ করেছিলেন।
আলিয়ার কাছে ‘এডওয়ার্ড’ নামে যে বিড়ালটি রয়েছে, সেই বিড়ালটিও নাকি সিদ্ধার্থের উপহার দেওয়া। তবে, ২০১৭ সাল থেকে সিদ্ধার্থ এবং আলিয়ার সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে এবং তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ২০১৭ সালে আলিয়া ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবির প্রথম পর্বের ছবির জন্য সই করেছিলেন। তখন অভিনেত্রীর আলাপ হয় রণবীর কপূরের সঙ্গে। রণবীরের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হতে থাকায় নাকি সিদ্ধার্থের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় আলিয়ার।
কিন্তু অনেকে মনে করেন যে, আলিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কারণ নাকি সিদ্ধার্থ নিজেই। অনেকে মনে করেন যে, সিদ্ধার্থ তাঁর কেরিয়ার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সম্পর্কের দিকে খেয়াল রাখার সময় তাঁর ছিল না। তাই আলিয়ার সঙ্গে সিদ্ধার্থের বিচ্ছেদ হয়।
আলিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সিদ্ধার্থের নাম বহু তারকার সঙ্গে জড়িয়েছিল। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছিলেন যে, তিনি নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার এক মডেলকে ডেট করতেন। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, ওই মডেলটি ছিলেন নিকোল মেয়ের।
কিন্তু নিকোলের সঙ্গে সিদ্ধার্থের সম্পর্ক বেশি দূর এগোয়নি। বরং কিছু দিন পর অভিনেতার নাম জড়িয়ে পড়ে জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে। পরবর্তী কালে কর্ণ জোহরের রিয়্যালিটি শোয়ে এসে সিদ্ধার্থ তাঁর সঙ্গে জ্যাকলিনের সম্পর্কের বিষয়টি খোলাসা করেন।
সিদ্ধার্থ জানিয়েছিলেন যে, তাঁর সঙ্গে জ্যাকলিনের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁরা দু’জনেই খুব ভাল বন্ধু। কোনও কালেই সিদ্ধার্থ ডেট করেননি জ্যাকলিনকে। তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা রটানো হয়েছে।
২০১৯ সালে মিলাপ জাভেরির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘মরজাঁভা’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সিদ্ধার্থ। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তারা সুতারিয়াকে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, ‘মরজাঁভা’ ছবির শুটিংয়ের দৌলতেই সিদ্ধার্থ এবং তারা একে অপরকে ডেট করতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক বেশি দূর গড়ায়নি। একাংশের দাবি, ‘হ্যালো চার্লি’ ছবির অভিনেতা আদার জৈনের সঙ্গে সেই সময় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তারা। তাই সিদ্ধার্থের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক প্রেমের পরিণতি পায়নি।
সিদ্ধার্থের সম্পর্ক নিয়ে কম জল্পনা হয়নি বলিপাড়ায়। কর্ণ জোহরের সঙ্গে অভিনেতার বরাবরের ভাল সম্পর্ক। এক সময় রটতে শুরু করে যে, কর্ণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সিদ্ধার্থের।
কিন্তু সব রটনায় জল ঢালেন কিয়ারা নিজেই। অনেকে মনে করেছিলেন যে, ‘শেরশাহ’ ছবির শুটিংয়ের সময় আলাপ হয়েছিল সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারার। কিন্তু আদতে তা সত্য নয়।
২০১৮ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ ওয়েব সিরিজ়টি। এই ওয়েব সিরিজ়ের একটি গল্পে অভিনয় করেছিলেন কিয়ারা। ওই গল্পের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কর্ণ। শুটিং শেষ হওয়ার পর পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধার্থ। সেখানেই তাঁর সঙ্গে কিয়ারার আলাপ হয়।
কর্ণ জোহরের রিয়্যালিটি শোয়ে এসে কিয়ারা জানান যে, সিদ্ধার্থের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ‘শেরশাহ’ ছবির শুটিংয়ের অনেক আগে থেকেই। তাঁরা দু’জন দু’জনকে অনেক দিন আগে থেকেই চেনেন। কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে কোনও কিছুই বলেননি অভিনেত্রী।
২০১৯ সালে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন কিয়ারা। নতুন বছরে আফ্রিকার একটি অভয়ারণ্যে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই নিজের ছবিটি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন কিয়ারা। একই জায়গা থেকে নিজের ছবি পোস্ট করতে দেখা গিয়েছিল সিদ্ধার্থকেও। বলিপাড়ার অধিকাংশ অনুমান করেছিলেন যে, দুই তারকা সম্পর্কে রয়েছেন, তাই নতুন বছরে নিজেদের মতো সময় কাটাতে একসঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারা।
কিয়ারা তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে পার্টির আয়োজন করলে তাঁর সঙ্গে সিদ্ধার্থের সম্পর্ক নিয়ে আরও জলঘোলা হতে শুরু করে। পার্টির শেষে অভিনেত্রীকে সিদ্ধার্থের সঙ্গে বেরোতে দেখা যায়। তার পর থেকে পাপারাৎজিদের ক্যামেরার লেন্সে মাঝেমধ্যেই ধরা পড়তেন এই তারকা যুগল।
যদিও কিয়ারা এবং সিদ্ধার্থের মধ্যে কেউই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে জনসমক্ষে কোনও মন্তব্য করা থেকে বরাবর বিরত থেকেছেন। কিন্তু দুই তারকাকে অধিকাংশ সময় একে অপরের বাড়ি যেতে দেখতেন পাপারাৎজিরা। এর মধ্যেই তাঁদের বিচ্ছেদের খবরও বলিপাড়ায় ঘুরতে থাকে। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁদের দু’জনকে বিমানবন্দরে দেখা যায়। নতুন বছরে একসঙ্গে সময় কাটাবেন বলে মলদ্বীপ ঘুরতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
বলিপাড়ায় সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারার বিয়ের খবরও ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে বলে শোনা যায়। বরুণ ধবনের কারণে কিয়ারার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।
‘যুগ যুগ জিয়ো’ ছবিতে বরুণ এবং কিয়ারাকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। এই ছবির প্রচারের জন্য ফোটোশুট করছিলেন দুই তারকা। কিন্তু ফোটোশুটের সময় বরুণ আচমকা অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন।
ফোটোশুটের সময় কিয়ারাকে কোলে তুলে নেবেন বরুণ। এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ফোটোশুটের চলাকালীন কিয়ারার গালে হঠাৎ চুমু খান বরুণ। ফোটোশুটের জন্য এই দৃশ্যটি আগে থেকে নির্ধারিত করা ছিল না। হঠাৎ চুমু খাওয়ার ফলে চমকে ওঠেন কিয়ারাও। সম্পূর্ণ ঘটনাটি ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে।
বরুণের উপরে রেগে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। অনুমতি ছাড়া কেন তাঁর প্রেমিকাকে এ ভাবে চুমু খাবেন তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। কিন্তু বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সিদ্ধার্থের সঙ্গে বরুণের কোনও ঝামেলা হয়নি। এমনকি, এর ফলে কিয়ারার সঙ্গে সম্পর্কেও ছেদ পড়েনি সিদ্ধার্থের। এ সবই নাকি গুজব।
সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারার সম্পর্ক অনেকটাই মজবুত। একে অপরের পেশা নিয়েও ঘোর বাস্তববাদী তাঁরা। তাই ফোটোশুটের কারণে যে সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারার মধ্যে যে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি, তার আশ্বাস দিয়েছেন তারকারা নিজেরাও।
সব গুজবকে হাওয়ায় উড়িয়ে অবশেষে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন সিদ্ধার্থ এবং কিয়ারা। এ বার শুধু চার হাত এক হওয়ার অপেক্ষা ‘শেরশাহ’-এর এই তারকা জুটির।