ভারতের ধনীতম মহিলাদের প্রসঙ্গ উঠলেই ভেসে আসে কয়েকটি চেনা নাম। রোশনি নাদার মলহোত্র, ফাল্গুনি নায়ার কিংবা কিরণ মজুমদার শ’ এই তালিকায় অনিবার্য।
কিন্তু এই চেনাদের ভিড়ে লুকিয়ে অচেনা এক নামও। তিনি লীনা গান্ধী তিওয়ারি। সম্প্রতি অন্যদের পিছনে ফেলে দিয়ে ভারতের ধনীতম মহিলাদের তালিকায় তিনি উঠে এসেছেন দুই নম্বরে।
লীনা ভারতের বিখ্যাত একটি বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার চেয়ারপার্সন। ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা লীনার দাদু বিঠাল বালকৃষ্ণ গান্ধী। ব্রিটিশ ভারতেও তাঁর দাপট কম ছিল না। মহারাষ্ট্রে সমাজ সংস্কারক হিসাবে লালা লাজপত রাই, মহাত্মা গান্ধীর মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
বিঠালকে বলা হত ‘আমেরিকান গান্ধী’। ঘনিষ্ঠ মহলে ওই নামেই তাঁকে চিনতেন সবাই। আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে ফিরে নিজেকে দেশসেবায় নিয়োজিত করেছিলেন লীনার দাদু। তাই এমন নাম হয় তাঁর।
১৯৬১ সালে মুম্বইতে একটি ওষুধ তৈরির সংস্থা স্থাপন করেন বিঠাল। সে সময় দেশের দুঃস্থ মানুষদের স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতেন তাঁরা। সেবায় কোনও খামতি রাখেননি লীনার পূর্বপুরুষেরা। সেই সংস্থাই ডালপালা মেলেছে। উত্তরাধিকার সূত্রে যার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন লীনা।
ডায়াবেটিস এবং হার্টের নানা রোগের ওষুধ উৎপাদনে লীনার সংস্থার জুড়ি মেলা ভার। অন্যান্য ওষুধের জোগানও দেয় লীনার সংস্থা। দেশের ওষুধ ব্যবসায় প্রথম সারিতে উঠে এসেছে তাঁদের সংস্থা।
মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক পাশ করেন লীনা। উচ্চশিক্ষার জন্য যান আমেরিকায়। মলিকিউলার বায়োলজিতে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে।
বলিউড অভিনেত্রী জুহি চাওলার সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে লীনার। তাঁর জন্মদিনে ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন জুহি। সমাজমাধ্যমে সেই ছবি পোস্ট করেছিলেন নিজেই।
প্রচারের আলোর বিপরীতে থাকতেই ভালবাসেন লীনা। ক্যামেরার সামনে আসতে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। নিজের কাজের প্রচারও করেন না। ধনীতমদের তালিকায় বাকিদের নানা সময়ে নানা অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে দেখা যায়। লীনা সে সব অনুষ্ঠানে সচরাচর যান না।
প্রচারবিমুখ হলেও লীনার সমাজসেবায় খামতি নেই। দুঃস্থ মহিলাদের কল্যাণকল্পে একটি প্রতিষ্ঠান চালান লীনা। সেই সংস্থার নামকরণ করা হয়েছে লীনার পিতামহীর নামে।
২০০৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানের পথ চলা শুরু হয়েছিল। এখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের লেখাপড়া শেখানো হয়। কম্পিউটারে শিক্ষার ব্যবস্থাও রেখেছেন লীনা।
লীনার আরও এক পরিচিতি রয়েছে। তিনি নৃত্যশিল্পী। লেখেন বইও। বিঠাল বালকৃষ্ণের জীবনী তাঁর কলমে ধরা দিয়েছে ‘বিয়ন্ড পাইপস অ্যান্ড ড্রিমস’ বইতে। ২০১৩ সালে লীনার লেখা সেই বই পড়লে জানা যায় ‘আমেরিকান গান্ধী’র খুঁটিনাটি।
৬৬ বছরের লীনা ভারতের দ্বিতীয় ধনীতম মহিলা। তাঁর সামনে শুধু জিন্দল গ্রুপের চেয়ারপার্সন সাবিত্রী জিন্দল। মনে করা হচ্ছে, অচিরে তাঁকেও টেক্কা দিতে পারে লীনার সম্পদ।
সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও পা মাটিতেই রাখেন লীনা। তাই প্রচারের আলোয় তাঁকে দেখা যায় না। এক সময় তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। রত্নগিরির রাস্তায় সবজি বিক্রি করতেন বিঠাল বালকৃষ্ণনের বাবা। দেশের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী হয়েও লীনা সেই শিকড় ভুলে যাননি।