Gangster Lawrence Bishnoi

দলে ৭০০ শুটার, ১১টি রাজ্যের পুলিশের খাতায় নাম! সলমনকে কেন খুন করতে চান ‘ডন’ বিশ্নোই?

সিধু মুসে ওয়ালা থেকে শুরু করে বাবা সিদ্দিকি। গত তিন-চার বছরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে লরেন্স বিশ্নোইয়ের। কী ভাবে অপরাধের অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন চণ্ডীগড়ের এক কলেজপড়ুয়া?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৪
Share:
০১ ২০

মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (অজিত পওয়ার গোষ্ঠী)-র নেতা বাবা সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডে ফের প্রকাশ্যে এসেছে গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের নাম। খুনের দায় স্বীকার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে কুখ্যাত এই দুষ্কৃতীর দল। শুধু তা-ই নয়, বলিউড অভিনেতা সলমন খানকে আরও এক বার খুনের হুমকি দিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং।

০২ ২০

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (ন্যাশনাল ইনভেস্টটিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ) চার্জশিট অনুযায়ী, বিশ্নোই গ্যাংয়ে রয়েছে ৭০০ শুটার। সুপারি কিলিংয়ে (টাকা নিয়ে খুন) যারা সিদ্ধহস্ত। এই ভাড়াটে খুনির দল সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে রয়েছে পঞ্জাবে। সেখানে বিশ্নোই গ্যাংয়ের ৩০০ শুটার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে দাবি এনআইয়ের গোয়েন্দাদের।

Advertisement
০৩ ২০

গত কয়েক বছর ধরে উত্তর ভারতে ত্রাসের নাম লরেন্স বিশ্নোই। ২০২০-২১ সালে তার দল শুধুমাত্র তোলাবাজি থেকে পেয়েছে কোটি কোটি টাকা। যা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ১১টি রাজ্যের পুলিশের খাতায় বিশ্নোইয়ের নাম রয়েছে। যার মধ্যে পঞ্জাব ছাড়াও রয়েছে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, রাজস্থান ও ঝাড়খণ্ড।

০৪ ২০

এ হেন কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশ্নোইয়ের জন্ম পঞ্জাবে। সালটা ছিল ১৯৯৩। আবোহারে বড় হওয়া এই গ্যাংস্টার স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে। ২০১১ সালে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে (স্টুডেন্স কাউন্সিল) যোগ দেন বিশ্নোই। ওই সময়ে সতীনদরজিৎ সিংহ ওরফে গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর।

০৫ ২০

গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকেই বিশ্নোইয়ের জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। ধীরে ধীরে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে অপরাধমূলক কাজকর্মে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়েন তিনি। চণ্ডীগড়-সহ পঞ্জাবে তোলাবাজির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে গ্যাং তৈরি করেন বিশ্নোই ও ব্রার। ২০১৩ সালে এক ছাত্রনেতাকে খুনের ঘটনায় প্রথম বার খবরের শিরোনামে আসে বিশ্নোইয়ের নাম।

০৬ ২০

পরবর্তী সময়ে কলেবরে বাড়তে শুরু করে দুই গ্যাংস্টারের দলবল। তোলাবাজির পাশাপাশি যুক্ত হয় মাদক পাচার, মদের কালোবাজারি, আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান ও অর্থের বিনিময়ে খুন। আর এ সবের জন্য আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে হাত মেলান তাঁরা।

০৭ ২০

বিশ্নোই-ব্রারের যুগলবন্দিকে ইতিমধ্যেই ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড দাউদ ইব্রাহিম কাসকরের তৈরি ‘ডি কোম্পানি’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন এনআইএর গোয়েন্দারা। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে যাঁদের নামে কাঁপত গোটা মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের ফিল্মি দুনিয়া থেকে নামী শিল্পপতিরা।

০৮ ২০

গোয়েন্দাদের দাবি, সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে যুবকদের দলে টানার সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করছে বিশ্নোইয়ের দল। এর জন্য ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে তারা। সেখানে বিশ্নোইকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার ছবি বার বার পোস্ট করা হয়। যা দেখে অপরাধমনস্ক বহু যুবক তাঁর গ্যাংয়ে যোগ দিচ্ছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

০৯ ২০

গ্যাং বাড়ানোর দ্বিতীয় পদ্ধতি হল কানাডা পাড়ি দেওয়ার লোভ। পঞ্জাবের অনেক যুবকই ভাগ্যের সন্ধানে উত্তর আমেরিকার দেশটিতে পাড়ি জমাতে চান। কিন্তু অর্থের অভাবে তা করে উঠতে পারেন না তাঁরা। এঁদেরকেই নিশানা করে বিশ্নোই-ব্রারের দলবল। লোভ দেখিয়ে তাঁদের দিয়ে তোলাবাজি, খুন বা মাদক পাচারের মতো অপরাধ করানো হয়। সেখান থেকে আর ফেরার উপায় থাকে না তাঁদের।

১০ ২০

বাবা সিদ্দিকিকে খুনের পর নতুন করে অভিনেতা সলমন খানকে খুনের হুমকি দিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং। সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে তারা বলেছে, ‘‘আমাদের কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাং ও সলমন খানকে সাহায্য করলে কোনও ছাড় পাওয়া যাবে না। যাঁরা সাহায্য করছেন তাঁরা সমস্ত হিসাব ঠিক রাখুন।’’

১১ ২০

কেন বার বার সলমন খানকে খুনের হুমকি দিচ্ছে বিশ্নোই গ্যাং? এর নেপথ্যে রয়েছে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা। ১৯৯৮ সালে রাজস্থানের জোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিং করতে যান সলমন খান। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ ওঠে।

১২ ২০

এই ঘটনায় বিশ্নোই সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগে। কারণ কৃষ্ণসার হরিণকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন তাঁরা। ২০১৮ সালে গ্রেফতারির পর আদালতে দাঁড়িয়ে লরেন্স বিশ্নোই হুমকির সুরে বলেছিলেন, ‘‘জোধপুরে আমরা সলমন খানকে হত্যা করব। আমরা ব্যবস্থা নিলেই সবাই জানতে পারবে। আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই করিনি। ওরা বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছে।’’

১৩ ২০

২০১৮ সালে সম্পথ নেহরা নামের এক সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তি সলমনকে খুনের জন্য তাঁর বাড়ি রেকি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিশ্নোইয়ের নির্দেশেই নেহরা ওখানে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তদন্তকারীরা।

১৪ ২০

২০২৩-এর ১৪ এপ্রিল সলমনের বান্দ্রার বাড়ির সামনে বাইকে করে এসে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী। তবে তাতে অবশ্য অভিনেতার কোনও ক্ষতি হয়নি। ওই ঘটনার সঙ্গেও বিশ্নোই গ্যাং জড়িত ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।

১৫ ২০

২০২২ সালের ২৯ মে পঞ্জাবের মানসাতে জনপ্রিয় র‌্যাপার তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসে ওয়ালাকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় দুষ্কৃতীর দল। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও নাম জড়ায় লরেন্স বিশ্নোইয়ের। যদিও খুনের সময়ে তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন এই গ্যাংস্টার।

১৬ ২০

মুসে ওয়ালা খুনের পর বিশ্নোইকে হেফাজতে নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করে দিল্লি পুলিশ। জেলে বসেই কী ভাবে তাঁর ইশারায় খুন করা হল, তা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে তদন্তকারীদের। জেল থেকেই বিশ্নোই দিব্যি অপরাধের নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করা হয়। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ।

১৭ ২০

গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) ৫ ডিসেম্বর জয়পুরে নিজের বাড়িতে গুলিতে খুন হন দক্ষিণপন্থী নেতা সুখদেব সিংহ গোগামেডি। ওই বছরের নভেম্বরে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে পঞ্জাবি গায়ক গিপ্পি গ্রেওয়ালের বাড়িতে গুলি চলে। দু’টি ঘটনার নেপথ্যেই বিশ্নোই গ্যাংয়ের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।

১৮ ২০

বিশ্নোই গ্যাং জানিয়েছিল, সলমনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন গিপ্পি। অভিনেতার সঙ্গে ভাইয়ের মতো আচরণ করছেন তিনি। যদিও পঞ্জাবি গায়কের দাবি, তিনি মাত্র দু’বার ‘ভাইজান’-এর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কোনও সম্পর্ক নেই।

১৯ ২০

এ বছরের সেপ্টেম্বরে ভ্যাঙ্কুভারে আর এক পঞ্জাবি গায়ক এপি ধিঁলোর বাড়ির সামনে গুলি চলে। যার দায় স্বীকার করেন বিশ্নোই গ্যাংয়ের সদস্য রোহিত গোদারা। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ধিঁলোর ‘ওল্ড মানি’ গানের অ্যালবামে সলমনকে দেখা গিয়েছে। আর তাই তাঁর নাম তালিকায় চলে এসেছিল।’’

২০ ২০

এনআইএর দাবি, পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া খালিস্তানি জঙ্গি হরবিন্দর সিংহ রিন্ডা বিশ্নোই গ্যাংয়ের শুটারদের টার্গেট কিলিংয়ের জন্য ব্যবহার করছে। যা চিন্তার। বিশ্নোই গ্যাং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের থেকে টাকা পায় বলেও চার্জশিটে জাতীয় তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement