দাদু ছিলেন বাঙালি অভিনেতা। এ ছাড়াও পরিবারের সঙ্গে ছিল বলিপাড়ার যোগ। তবুও অভিনয় জগতে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি কলকাতার মডেল আব্বাসের।
মির্জা আব্বাস আলি। তবে আব্বাস নামেই বেশি পরিচিত তিনি। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। কলেজে পড়াকালীন মডেলিং করতে শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হিন্দি বা বাংলা ছবিতে নয়, সরাসরি দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
কমল হাসন, রজনীকান্ত, তব্বু, ঐশ্বর্যা রাইয়ের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান আব্বাস। একাধিক হিট ছবিতে অভিনয় করলেও কেরিয়ারের ঝুলিতে ব্যর্থ ছবির সংখ্যা বেশি। অভিনেতা হিসাবে সফল হতে পারছিলেন না বলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। নিজেকে শেষ করে ফেলার চিন্তাভাবনাও করতেন আব্বাস।
ধীরে ধীরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যেতে থাকেন আব্বাস। এক দিন হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যান তিনি। ১৯৭৫ সালে ২১ মে হাওড়ায় জন্ম আব্বাসের। তাঁর পরিবারের সঙ্গে অভিনয় জগতের যোগসূত্র ছিল।
আব্বাসের দাদু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। বলি অভিনেতা ফিরোজ় খান আত্মীয় ছিলেন আব্বাসের বাবার। কিন্তু বাংলা অথবা হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পাননি তিনি।
কলেজে পড়ার সময় মডেলিং শুরু করেন আব্বাস। মডেল হিসাবে নামডাক হওয়ার পর দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে অডিশন দিতে শুরু করেন তিনি। আব্বাস খোঁজ পান, তামিল ছবির পরিচালক কাদির তাঁর নতুন ছবির কাজ শুরু করছেন। তা শুনে সেখানে অডিশন দিতে ছুটে যান তিনি।
অডিশন দিতে গেলেও তামিল ভাষা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও ছিল না আব্বাসের। তাঁর এক তামিলভাষী বন্ধুর সহায়তায় অডিশনে পাশ করে যান আব্বাস। আব্বাসের অভিনয় মনে ধরে কাদিরের।
কিন্তু পরিচালক জানতেন, তামিল ভাষায় সড়গড় নন আব্বাস। তাই খুব সহজ দৃশ্যগুলি আগে শুট করে ফেলেছিলেন কাদির। প্রথম ছবিতেই মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় আব্বাসকে।
তামিল ছবির পাশাপাশি তেলুগু, মালয়ালম এবং কন্নড় ছবিতেও অভিনয় করেন আব্বাস। কখনও মুখ্য চরিত্রে, কখনও দ্বিতীয় অভিনেতার ভূমিকায় কখনও বা নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতেন তিনি।
একের পর এক ছবিতে কাজের সুযোগ পেলেও নিজের পরিচিতি গড়তে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন আব্বাস। শেষে নিরুপায় হয়ে হরর ঘরানার ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি।
চোখের সামনে নিজের কেরিয়ার ধ্বংস হতে দেখছিলেন আব্বাস। বড় পর্দার পাশাপাশি মিউজ়িক ভিডিয়োতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই সময় হিন্দি ছবি নির্মাতাদের নজরে আসেন আব্বাস।
২০০২ সালে ‘অংশ’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন আব্বাস। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। বলি অভিনেত্রী বিপাশা বসুর সঙ্গে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল আব্বাসের। কিন্তু সেই ছবির কাজ শুরু না হওয়ায় আবার তামিল ছবিতে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
তামিল ইন্ডাস্ট্রির লো বাজেট ছবিতে কাজ পাচ্ছিলেন আব্বাস। তাই টেলিভিশনের পর্দাতেও কাজ করা শুরু করেন তিনি। সেখানেও সফল হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তার পর অভিনয়জগৎ থেকে দূরে সরে যান আব্বাস। বহু দিন তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আসলে নতুন জীবন শুরু করবেন বলে দেশ ছেড়ে নিউ জ়িল্যান্ড পাড়ি দেন আব্বাস। সেখানে গিয়ে অকল্যান্ডে থাকতে শুরু করেন তিনি। অনেকের দাবি, সেখানে গাড়ি সারাইয়ের কাজ করেন আব্বাস।
আবার একাংশের মতে, ২০১৫ সালে অভিনয় ছেড়ে অকল্যান্ডে চাকরিতে যোগ দেন সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আব্বাস। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, নিউ জ়িল্যান্ডে তিনি স্বেচ্ছায় কাজ করতে পারেন। ভারতে থাকলে এই সুযোগ পেতেন না।
আব্বাস জানান, নিউ জ়িল্যান্ডে কখনও তিনি পেট্রল পাম্পে কাজ করেছেন, কখনও আবার মোটরবাইক সারানোর কাজও করেছেন।
জীবনে এক সময় মুষড়ে পড়েছিলেন বলে জানান আব্বাস। আত্মহত্যার চিন্তাভাবনাও আসত তাঁর মাথায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এক সময় আমি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবতাম। কিন্তু আমি নিজের হাতে জীবন বদলেছি। আমি সকলকে একটা কথাই জানাতে চাই, যদি আমি এই কাজ করতে পারি, তা হলে সকলেই পারবেন। যদি এক জনের জীবনও বাঁচাতে পারি, তা হলেই আমার জীবন সার্থক হবে, যা বহু বছর অভিনয় করেও আমি লাভ করিনি।’’
১৯৯৭ সালে ইরম হুসেন খান নামে এক পোশাকশিল্পীকে বিয়ে করেন আব্বাস। বিয়ের পর নিজস্ব সংস্থা খোলেন ইরম। এমনকি, তামিল ছবিতে পোশাকশিল্পী হিসাবে কাজও করেছেন ইরম। দক্ষিণী অভিনেতা আর মাধবনের স্ত্রী সরিতার সঙ্গেও পোশাকের ডিজাইন বানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে অকল্যান্ডেই রয়েছেন আব্বাস। ‘পাবলিক স্পিকার’ হিসাবে শংসাপত্রও পেয়েছেন তিনি। আত্মহত্যার বিষয়ে সচেতন করতে অনুষ্ঠান করেন তিনি। কিশোর-কিশোরীরা যেন আত্মহত্যার পথ বেছে না নেন তা নিয়ে সচেতনতামূলক বক্তৃতা করেন আব্বাস।