মঙ্গলবার হয়ে গেল আইপিএলের বহু প্রতীক্ষিত নিলামপর্ব। তবে সেই নিলাম ছিল ছোট দরের। প্রতিটি দলের কাছেই কিছু না কিছু পরিকল্পনা ছিল নিলাম নিয়ে। তবে সব দলের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তার মধ্যেও ক্রিকেটারদের নিয়ে দরাদরিতে দেখা গেল ধুন্ধুমার লড়াই। পরের বছরের প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সব দলই যে যার মতো ঘর গুছিয়ে নিল। শেষমেশ কোন কোন ক্রিকেটারের উপর ভরসা রেখে আইপিএল খেলতে নামছে কলকাতা নাইট রাইডার্স? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
দলের ব্যাটারদের নিয়ে প্রথম থেকেই খুব একটা চিন্তায় ছিলেন না শাহরুখ-গম্ভীররা। কলকাতার ব্যাটারদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন অধিনায়ক শেয়স আইয়ার। সদ্য বিশ্বকাপ খেলেছেন শ্রেয়স। ফাইনালে তাঁর ব্যাটে রান না এলেও বিশ্বকাপ জুড়ে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল বেশ ভাল।
বাকি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন নাইটদের নতুন ‘তুরুপের তাস’ রিঙ্কু সিংহ। আইপিএল ২০২৩-এ কেকেআরের যাত্রার দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, অন্যতম প্রাপ্তির নাম রিঙ্কু। শেষ ম্যাচ পর্যন্ত যিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।
কেকেআরের ব্যাটারদের তালিকায় রয়েছেন নীতিশ রানা। গত বছর শ্রেয়স চোট পাওয়ার পর কিছু দিন দলের হাল ধরেছিলেন নীতীশ। তবে তড়িঘড়ি করে তাঁকে অধিনায়ক করার মাসুল গুনতে হয়েছিল কেকেআরকে। দল সম্পর্কে তেমন ধারণা তখনও তাঁর তৈরি হয়নি। প্রতিযোগিতা জুড়ে অধিনায়ক বুঝে উঠতে পারেননি কে কী করতে পারেন। একাধিক ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তবে বেশ কয়েকটি ম্যাচে তিনি নিজে ভাল ব্যাটিং এবং বোলিং করেছিলেন।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসাবে নাইটদের দলে রয়েছেন রহমানুল্লা গুরবাজ়। কলকাতা দলের মূল উইকেটরক্ষক তিনি।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসাবে কেকেআরে রয়েছেন জেসন রয়। তবে এখনও পর্যন্ত কেকেআরের হয়ে সে ভাবে হাল ধরতে দেখা যায়নি তাঁকে।
মিনি নিলামে কেকেআর যে ব্যাটারদের কিনেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শেরফান রাদারফোর্ড। রাদারফোর্ডকে দেড় কোটি টাকায় কিনেছে কলকাতা। ব্যাটিং বিভাগে মিডল অর্ডার মজবুত করতে তাঁকে নেওয়া হয়েছে। তবে বিদেশি হওয়ায় ক’টি ম্যাচে সুযোগ পাবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মিনি নিলামে কলকাতায় ফিরেছেন ব্যাটার মণীশ পাণ্ডে। মণীশকে ৫০ লক্ষ টাকায় কিনেছে কেকেআর। মণীশ আগে কলকাতাতেই খেলতেন। সেই অর্থে ‘ঘরওয়াপসি’ হয়েছে তাঁর। মণীশকে নেওয়া হয়েছে মিডল অর্ডারের কথা ভেবেই।
মিনি নিলামে ব্যাটার হিসাবে পঞ্চাশ লক্ষ টাকায় কেএস ভারতকেও কিনেছেন গম্ভীররা। রয়েছে। বিকল্প উইকেটকিপার হিসাবে ভরতকে দলে রাখা হয়েছে।
ব্যাটার অঙ্গকৃশ রঘুবংশীকে ২০ লক্ষ টাকায় কিনেছে কেকেআর।
কেকেআরের বড় অপ্রাপ্তির জায়গা অলরাউন্ডার। নিলামে রাচিন রবীন্দ্র, ড্যারিল মিচেল, হর্ষল পটেল, জেরাল্ড কোয়েৎজির মতো অলরাউন্ডার ছিলেন। কারও দিকেই ঝাঁপায়নি তারা। পরে রমনদীপ সিংহকে ২০ লাখ টাকায় কেনে কলকাতার দল।
অলরাউন্ডার হিসাবে দলে রয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। অভিজ্ঞতা থাকলেও আগের মরসুমে তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি তিনি।
কেকেআরে অলরাউন্ডার হিসাবে দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছে অনুকূল রায়ের নাম। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এই নাম এখনও অপরিচিত। গত আইপিএলে কলকাতার হয়ে শেষের দিকে প্রায় প্রতিটি ম্যাচই খেলেছিলেন অনুকূল। তবে বিশেষ কোনও অবদান রাখেননি।
কেকেআরের চতুর্থ অলরাউন্ডার বেঙ্কটেশ আয়ার। আইপিএলের আগের মরসুমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কেকেআরের হয়ে শতরান করেছিলেন বেঙ্কটেশ। বাকি কিছু ম্যাচেও রান করেছিলেন। কিন্তু বড্ড বেশি বল খেলে সেই রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।
নিলামে অলরাউন্ডার নিয়ে অপ্রাপ্তি থাকলেও কলকাতার প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার বোলার মিচেল স্টার্ক। আইপিএলের ইতিহাসে মিচেলকে সব থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে নজির গড়েছে কলকাতার দল। নিলামে অস্ট্রেলিয়ার বোলারকে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে কেকেআর। মিচেল বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার হিসাবে বিবেচিত হন। এ বারে কেকেআরের বোলিং বিভাগের মুখ হতে পারেন তিনিই।
নাইটদের দলে ভাল ভারতীয় পেসার নেই। তার মধ্যে হর্ষিত রানা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেও, আইপিএলের মতো মঞ্চে এখনও যথেষ্ট পরীক্ষিত নন। আগের আইপিএল দেখে মনে হয়েছিল হর্ষিতের বলে গতি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে নেই। তাঁকেও ঘষেমেজে নিতে হবে তারকা হতে হলে।
হর্ষিতের মতো বৈভব অরোরাও পরীক্ষিত নন। তবে তিনিও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল বোলার হিসাবে পরিচিত। তাঁর বলে গতি থাকলেও নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা গিয়েছিল গত বারের আইপিএলে। কেকেআর তাঁকে রাখে কি না তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তাঁকে দলেই রেখেছে কেকেআর।
বাকি বোলারদের মধ্যে রয়েছেন সুযশ শর্মা। আইপিএলের গত মরসুমে রিঙ্কুর পর কেকেআরের আর এক আবিষ্কার ছিলেন সুযশ। গত বছরের আইপিএলে প্রথম দু’-একটি ম্যাচের ‘রহস্য স্পিনার’-এর খেতাব পেলেও তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি। মার খেয়েছেন বিপক্ষের হাতে।
গত বছর আইপিএলের বোলিং বিভাগে একমাত্র উজ্জ্বল মুখ ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। তাঁর বলের বৈচিত্র্য হারিয়ে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ১৪ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেন তিনি। বেশি রানও তিনি দেননি। বরুণের উপর এ বারও ভরসা রাখছেন শাহরুখ-গম্ভীরেরা।
বিদেশি বোলারদের মধ্যে নাইটদের দলে রয়েছেন সুনীল নারাইন। আগের মরসুমে নারাইন উইকেট কম পেলেও রান বেশি দেননি।
মিনি নিলামে স্টার্ক ছাড়া বোলিংয়ে কেকেআর-এর আর এক প্রাপ্তি মুজিব উর রহমান। নারাইনের বিকল্প হিসাবে নিয়ে রাখা হল তাঁকে। মিনি নিলামে দু’কোটি টাকা দিয়ে তাঁকে কিনেছে কলকাতা। একমাত্র কলকাতাই আফগানিস্তানের এই ক্রিকেটারের জন্য দর হেঁকেছিল।
বিদেশি বোলার হিসাবে গাস অ্যাটকিনসনকে কিনেছেন গম্ভীররা। অ্যাটকিনসনকে এক কোটি টাকায় কিনেছে কেকেআর।
৫০ লক্ষ টাকায় সৌরাষ্ট্রের বাঁহাতি জোরে বোলার চেতন সাকারিয়াকেও কিনেছে শাহরুখ খানের দল।
৫০ লক্ষ টাকায় সৌরাষ্ট্রের বাঁহাতি জোরে বোলার চেতন সাকারিয়াকেও কিনেছে শাহরুখ খানের দল।
ব্যাটার-বোলার-অলরাউন্ডার মিলিয়ে মোট ২৩ জন ক্রিকেটার এখনও নাইটদের ঘরে রয়েছেন। খালি রয়েছে দু’টি জায়গা।