Kochi

সিমেন্টবন্দি মহিলার কঙ্কাল! সাড়ে ৬ সেন্টিমিটারের স্ক্রু দিয়ে কী ভাবে জট ছাড়ল রহস্যের

কেন এত পচা গন্ধ বেরোচ্ছে, তা দেখতে পিপেটি কেটে দু’টুকরো করতেই শিউরে উঠেছিলেন স্থানীয়েরা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২২ ১৫:০২
Share:
০১ ২৬

নীল রঙের একটি প্লাস্টিকের পিপে জলের স্রোতে বার বার ওঠানামা করছিল। কেরলের ব্যাকওয়াটারে বড় সাইজের ওই পিপেটি দেখতে পেয়েছিলেন কয়েক জন জেলে।

০২ ২৬

কৌতূহলের বশে তাঁরাই সেটি জল থেকে টেনে তোলেন। তবে তার মধ্যে বিশেষ কিছুই মেলেনি। বরং তাতে জমানো সিমেন্ট ঠাসা ছিল। হতাশ হয়ে পিপেটি নিয়ে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত মাঠে ফেলে দেন জেলেরা।

Advertisement
০৩ ২৬

কোচির জাতীয় সড়কের কাছে ওই পরিত্যক্ত মাঠে মাসখানেক ধরে পড়েছিল পিপেটি। তবে পিপে থেকে দুর্গন্ধ বেরোনোয় সেটি সরাতে গিয়েছিলেন কুম্বলমের স্থানীয় বাসিন্দারা।

০৪ ২৬

কেন এত পচা গন্ধ বেরোচ্ছে, তা দেখতে পিপেটি কেটে দু’টুকরো করতেই শিউরে উঠেছিলেন স্থানীয়েরা। সিমেন্ট জমানো পিপের ভিতরে রয়েছে একটি দোমড়ানো-মোচড়ানো কঙ্কাল!

০৫ ২৬

২০১৮ সালে ৮ জানুয়ারিতে ওই সিমেন্টচাপা কঙ্কালটি দেখতে পান স্থানীয়েরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। শুরু হয় তদন্ত।

০৬ ২৬

পিপের মধ্যে সিমেন্টচাপা কঙ্কালটি কার? কে বা কারা সেটি পিপেতে ঢুকিয়েছে? এর পিছনে রহস্যই বা কী? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেন তদন্তকারীরা।

০৭ ২৬

সার্কল ইনস্পেক্টর সিবি টমের নেতৃত্বে কোচি সিটি পুলিশের একটি দল গঠন করে তদন্ত চলছিল। তবে কঙ্কাল-রহস্যের জট কিছুতেই খুলছিল না। ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য কোচির একটি মেডিক্যাল কলেজে কঙ্কালটি পাঠানো হয়েছিল।

০৮ ২৬

কঙ্কাল উদ্ধারের পর বেশ কিছু দিন কেটে গেলেও একেবারে অন্ধকারে ছিলেন তদন্তকারীরা। তবে ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর আচমকাই রহস্যের জট খুলে যায়!

০৯ ২৬

কঙ্কালটির ময়নাতদন্ত করেছিলেন কোচির ওই মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ উন্মেষ কেএ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের পর জানা গিয়েছিল যে সেটি মহিলার কঙ্কাল।

১০ ২৬

উন্মেষ বলেছিলেন, ‘‘এই কঙ্কালটি যে মহিলার, তাতে সন্দেহ নেই। প্রাথমিক ভাবে মহিলার উচ্চতা-সহ অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও তথ্য মিলেছে। তবে দেহটি পচে-গলে গিয়েছিল। যদিও হাড়ের সঙ্গে কিছুটা টিস্যু লেগে ছিল।’’

১১ ২৬

ওই কঙ্কালটি যে মহিলার, তা জানা গেলেও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে তথ্য বার করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল তদন্তকারীদের। আচমকাই একটি সাড়ে ৬ সেন্টিমিটারের স্ক্রু থেকে রহস্যের জট খুলে যায়!

১২ ২৬

কী ভাবে তদন্তে সাহায্য করেছিল একটি স্ক্রু? উন্মেষের কথায়, ‘‘ময়নাতদন্তের সময় ব্রাশ দিয়ে কঙ্কালের হাড়গোড় পরিষ্কার করার সময় দেখি, বাঁ-গোড়ালিতে একটি সাড়ে ৬ সেন্টিমিটারের স্ক্রু আটকানো। ওই গোড়ালিটা ভাঙা বলে মনে হচ্ছে।’’

১৩ ২৬

উন্মেষ আরও বলেছিলেন, ‘‘স্টেনলেস স্টিলের এই ধরনের স্ক্রু সাধারণত ভাঙা অস্থির অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত হয়। এ ক্ষেত্রে ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর জন্য মহিলার গোড়ালিতে ওই স্ক্রু লাগানো হয়েছিল।’’

১৪ ২৬

স্ক্রু-এর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তকারীদের সামনে আচমকাই যেন একটি দরজা খুলে যায়। খুঁটিয়ে দেখার পর নজরে আসে, স্ক্রু-র গায়ে খোদাই করা উৎপাদনকারীর নাম— ‘পিটকার’। রয়েছে একটি ব্যাচ নম্বরও।

১৫ ২৬

এ বার স্ক্রু-টিকে তথ্য হিসাবে কাজে লাগাতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, পিটকার আদতে পুণের সংস্থা। অস্থির অস্ত্রোপচারের জন্য দেশ জুড়েই এ ধরনের স্ক্রু সরবরাহ করে তারা।

১৬ ২৬

কোচিতেও পিটকারের সরবরাহকারী সংস্থা ছিল। সেখানে ছুটে যায় সিবি টমের দল। তদন্তে জানা যায়, গোটা দেশের প্রায় ৩০০ জন রোগীর অস্ত্রোপচারে ওই ব্যাচ নম্বরের স্ক্রু ব্যবহৃত হয়েছে। তার মধ্যে কোচির বাসিন্দা ছ’জন।

১৭ ২৬

আচমকাই আশার আলো দেখতে পান তদন্তকারীরা। এত দিন পর্যন্ত যে অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার নামধাম জানার চেষ্টা করছিলেন, এ বার যেন সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন তাঁরা।

১৮ ২৬

কোচির ছ’জন রোগীর নামপরিচয় জোগাড় করে তাঁদের সঙ্গে একে একে দেখা করতে শুরু করেন তদন্তরাকীরা। তবে পাঁচ জনের সঙ্গে দেখা হলেও এক জনের সন্ধান নেই। তিনি ৫২ বছরের শকুন্তলা। কোচির অদূরে উদয়মপুরমের বাসিন্দা।

১৯ ২৬

এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই মহিলার কঙ্কালটি যে শকুন্তলার, তা মনে করা হচ্ছিল। তবে আমাদের হাতে কোনও প্রমাণ ছিল না। ওই স্ক্রু-র সাহায্যে শকুন্তলার সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায়।’’

২০ ২৬

উন্মেষ বলেন, ‘‘স্ক্রু-র ব্যাচ নম্বর মিলিয়ে দেখা যায় যে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিপুনিথুরায় ভিকেএন হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছিল শকুন্তলার। সে সময় একটি পথদুর্ঘটনায় তাঁর গোড়ালির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। সেই চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর গোড়ালিতে ওই স্ক্রু-টি লাগানো হয়েছিল।’’

২১ ২৬

হাসপাতালের রেকর্ড থেকে শকুন্তলার পরিচয় জানার পর তদন্তে গতি আসে। খোঁজখবরের পর জানা গিয়েছিল, শকুন্তলার স্বামী দামোদরণ রাজনৈতিক হত্যার মামলায় কারাবন্দি ছিল। স্বামীর সঙ্গে তাঁর প্রায়শই ঝগড়াঝাঁটি লেগে থাকত। সাংসারিক অশান্তির জেরে এক সময় দামোদরণকে ছেড়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন শকুন্তলা।

২২ ২৬

ভাড়াবাড়িতে থাকাকালীন একটি পথদুর্ঘটনার পর শকুন্তলার ছেলে প্রমোদ আত্মহত্যা করে বলে দাবি। মেয়ে অস্বতীর বিয়ের পর একাই থাকতেন শকুন্তলা। তবে বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে চলে আসেন অস্বতী। তদন্তকারীদের দাবি, সে সময় থেকেই শকুন্তলার সংসারে আরও এক বার ঝামেলার সূত্রপাত।

২৩ ২৬

পুলিশের দাবি, মায়ের সঙ্গে থাকার সময়ই সাজিত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে অস্বতীর। যদিও সে সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি শকুন্তলা। সাজিত যে বিবাহিত, তা জানার পরই এ সম্পর্কে বেঁকে বসেন অস্বতীর মা।

২৪ ২৬

তদন্তকারীদের দাবি, অস্বতীর সঙ্গে সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় শকুন্তলাকে খুন করেছিল একটি পশুপ্রেমী সংস্থার ইনস্পেক্টর সাজিত। স্ত্রী-সন্তানদের কাছে তাঁর পরকীয়ার কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও শকুন্তলা দিয়েছিলেন বলে দাবি।

২৫ ২৬

শকুন্তলার খুনির সম্পর্কে কী ভাবে এতটা নিশ্চিত হলেন তদন্তকারীরা? সিবি টমের কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের পিপেটির বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। এমনকি, জমানো সিমেন্টভর্তি পিপেটি কোচির জলে ফেলে দিতে যাঁরা সাহায্য করেছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। দু’টি ক্ষেত্রেই যোগসূত্র হিসেবে সাজিতের নাম উঠে এসেছে। ’’

২৬ ২৬

শকুন্তলার ‘খুনি’র সন্ধান পাওয়া গেলেও এই দাবি প্রমাণে সাজিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার উপায় ছিল না পুলিশের। ২০১৮ সালে যে দিন ওই পিপে থেকে কঙ্কালটি পাওয়া গিয়েছিল, তার পর দিনই সাজিতকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, নিজের অপরাধ জানাজানি হওয়ার ভয়েই আত্মহত্যা করেছিল সাজিত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement