যুদ্ধে এখন বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ঘাতক ড্রোন। কে কত শক্তিশালী ড্রোন বানাতে পারে, তার প্রতিযোগিতা নিরন্তর চলছে। বোমা বহন করা, নিখুঁত নিশানায় আঘাত করা, এমনকি শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে তাদের ঘরে ঢুকে হামলা করা— এমন নানা ঘাতক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ড্রোন বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। সম্প্রতি ইজ়রায়েল একটি ড্রোন তৈরি করেছে, মনে করা হচ্ছে, এই ড্রোন সামরিক জগতে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে।
ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)-এর হাতে নতুন যে ঘাতক ড্রোনটি এসেছে সেটির নাম হার্মিস ৯০০। যদিও আইডিএফ এই ড্রোনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিশেষ খোলসা করেনি। তবে ‘ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘দ্য সান’-এর প্রতিবেদনে এই ড্রোনের ঘাতক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ড্রোনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল, যে ব্যক্তি বা বস্তুকে নিশানা করা হবে, ঠিক সেই ব্যক্তি বা বস্তুই ধ্বংস হবে। তার পাশে থাকা কারও গায়ে আঁচ পর্যন্ত লাগবে না।
আয়রন ডোম, লেজ়ার বিমের মতো অস্ত্রগুলি যদি ইজ়রায়েলের অস্ত্রভান্ডারের শক্তি হয়, তা হলে হার্মিস ৯০০ ড্রোন হবে ইজ়রায়েলের সামরিক শক্তির স্তম্ভ।
ইজ়রায়েলের আকাশসীমায় শত্রুপক্ষের হামলা ভেস্তে দিতে যেমন সদা নজরদারি চালাচ্ছে আয়রন ডোম, লেজ়ার বিম, তমনই আকাশসীমাকে আরও নিশ্চিদ্র করতে হার্মিস ৯০০ ড্রোনকে কাজে লাগাতে চাইছে ইজ়রায়েল।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে নতুন এই ড্রোনকে হার্মিস ৪০০-এর উন্নত সংস্করণ বলে দাবি করা হলেও পুরনো আর এই নতুন হার্মিস ড্রোনের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।
হার্মিসকে হিব্রুতে কোশেব অর্থাৎ নক্ষত্র বলা হয়। এই ড্রোন বেশ কয়েক ধরনের ‘গাইডেড’ বোমা বহন করতে সক্ষম। এক বারে ৩০ ঘণ্টা উড়তে পারে হার্মিস ৯০০ ড্রোন।
৫০০ কেজি ওজন বহন করতে সক্ষম ইজ়রায়েলের এই ‘গেম চেঞ্জার’ ড্রোন। এই ড্রোনে রয়েছে হাই ডেফিনিশন অপটিক্যাল সেন্সর, স্পেশাল এরিয়াল সার্ভিল্যান্স সিস্টেম এবং পিন পয়েন্ট লেজ়ার টার্গেট মার্কাস।
এই ড্রোনটি ৩০ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়তে পারে। ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এবং সে দেশের নৌবাহিনীকে সঠিক নিশানা এবং লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান বলে দিতে সাহায্য করবে এই ড্রোন। যদি ইজ়রায়েল বাহিনীর পক্ষে সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা মুশকিল হয়, তা হলে হার্মিস ৯০০ ড্রোনই সেই লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে।
এই ড্রোনে লাগানো সব ক্যামেরাই রিয়েল টাইম কভার করবে। ‘ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘দ্য সান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ ডিসেম্বর গাজ়ায় প্রথম এই ড্রোন ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েল। কন্ট্রোল রুমে থাকা এক পাইলটের দাবি, ওই সময় ছোট লেজ়ার বোমার ব্যবহার করা হয়েছিল গাজ়ায়।
ওই পাইলটের দাবি, দু’ভাবে হামলা করতে পারে হার্মিস ৯০০ ড্রোন। প্রথম, যদি কোনও গাড়ির চালককে নিশানা করা হয়, তা হলে সেই গাড়ির চালকেরই মৃত্যু হবে। কিন্তু ওই গাড়িতে থাকা অন্য সওয়ারিদের গায়ে আঁচড় পর্যন্ত লাগবে না। দ্বিতীয়, যদি কোনও এলাকায় কোনও বড় লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার প্রয়োজন হয়, তা হলে ১০ মিটার এলাকার মধ্যে সব কিছু মাটিতে মিশিয়ে দিতে সক্ষম এই ড্রোন।
আগামী দিনে হার্মিস ৯০০-কে পরিচালনা করার প্রয়োজন পড়বে না। কোন এলাকায় উড়বে সেন্সরের মাধ্যমে তা নিজেই ঠিক করে নেবে এই ড্রোন। এই ড্রোনে রয়েছে অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক ম্যাপিং সিস্টেম।
সামরিক দুনিয়ায় হার্মিস ড্রোন প্রথম নিয়ে আসা হয় ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে গাজ়ায় হামাসের বিরুদ্ধে ‘প্রোটেকটিভ এজ’ নামে অভিযান চালানোর সময় এই ড্রোনের ব্যবহার করে ইজ়রায়েল। সাত সপ্তাহের সেই যুদ্ধে ২০০০ প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১০ হাজার জন।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গাজ়ায় হামাসের সুড়ঙ্গের হদিস পেতে বর্তমানে হার্মিস ৯০০ ড্রোন ব্যবহার করছে ইজ়রায়েল। তবে হামাস নেতাদের খতম করতে ইজ়রায়েল এই ড্রোন বেশি ব্যবহার করতে চাইছে বলে ওই প্রতিবেদনগুলিতে দাবি করা হয়েছে।